ইনসাইড ইকোনমি

আগাম সবজি চাষে ঝুঁকছে চাষীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/10/2018


Thumbnail

রাজধানীর পাশের জেলা মানিকগঞ্জের সবজির সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। এজন্য মানিকগঞ্জ জেলাকে সবজির জেলা বলা হয়। অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় মানিকগঞ্জের চাষীরা অন্যান্য ফসল উৎপাদন থেকে সরে এসে আগাম সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছে। তাই এই অঞ্চলের প্রতিবছর বাড়ছে আগাম সবজির চাষ।

অনুকূল আবহওয়া এবং চাষীদের যথাযথ পরিচর্যায় চলতি বছরে বেশ ভালো পরিমাণে সবজীর উৎপাদন হয়েছে এই জেলায়। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চাষীরা সহজেই সবজিগুলো সরবারহ করতে পারছে। এতে চাষীদের পরিবহন খরচও অনেক কম হয়। তাই চলতি বছরে এ জেলার চাষীরা সবজি চাষ করে ভালোই লাভবান হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার প্রায় সাতটি উপজেলায় সবজির আবাদ হয়। সবিজ চাষে বেলে-দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। এই অঞ্চলের বেলে-দোআঁশ মাটির কারণে দিন দিন সবজি চাষ বাড়ছে মানিকগঞ্জে। তবে মানিকগঞ্জ সদর, সিংগাইর ও সাটুরিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয়। এসব এলাকার আগাম সবজি চাষের পাশাপাশি সারা বছরই বাণিজ্যিকভাবে নানান জাতের সবজি চাষ হয়।

বর্ষার মৌসুম শেষের দিকে আর তাই অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় আগাম জাতের সবজি চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানকার চাষীরা। আবহাওয়া অনুকূল এবং বাজারদর ভাল থাকায় এবারও বেশ লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন চাষীরা। 

সাটুরিয়া উপজেলার কামতা এলাকার সবজি চাষী শাজাহান বলেন, ‘প্রায় দুই বিঘা জমিতে এবার লাউ ও লাল শাকের আবাদ করেছি। আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১১ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার টকার লাউ শাক ও প্রায় ১১ হাজার টাকার মতো লাল শাক বিক্রি করেছি।’ এই চাষি আরও জানান, সব ঠিক থাকলে এই জমি থেকে আরও প্রায় ১০ হাজার টাকার লাউ শাক বিক্রি করতে পারবেন। লাউ ও লাল শাক শেষে তিনি ওই জমিতেই আবার ফুলকপির চারাও রোপন করবেন।

একই উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের চরধানকোড়া এলাকার সবজি চাষী করিম মিয়া বলেন, গেলো রমজানে আগে তিনি ৮৩ শতাংশ জমিতে শশার আবাদ করেছিলেন। জমি তৈরি, সার, বীজ ও জমিতে মাচাইলসহ (স্থানীয় ভাষায় জাংলা) নিয়ে খরচ হয়েছিল প্রায় ৬০ হাজার টাকার মতো। তিনি প্রায় এক লাখ টাকার বেশি শশা বিক্রি করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, ওই সময়ে আবহাওয়া ভাল না থাকায় আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় মুনাফাও তেমন ভাল অর্জন করতে পারেননি।

সবজি চাষী করিম মিয়া আরও বলেন, পরে ওই জমিতেই ধুন্দল চাষ করেন। এতে মাত্র তিন হাজার টাকা খরচ করে প্রায় অর্থ লক্ষ টাকার ধুন্দল বিক্রি করেন। এখন সেই জমিতেই আবার শিমের আবাদ করেছেন। শিমের ফলন পাওয়া পর্যন্ত তার ব্যয় হবে মাত্র ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। শিমের ফলন ও বাজারদর ভাল পেলে প্রায় লক্ষাধিক টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। 

আলীম নামের এক বেগুন চাষী বলেন, ৩০ শতাংশ জমিতে প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে তিনি বেগুনের আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৬ হাজার টাকার মতো বেগুনও বিক্রি করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে তিনি আরও প্রায় ৩৫ হাজার টাকার বেগুন বাজারে বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। 

একই এলাকার হালীম নামের আরেক চাষী বলেন, জমির ফলন ও খরচের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে কৃষকের উপর। কৃষক যতি দক্ষ ও অভিজ্ঞ হন তবে অল্প খরচে ভাল ফলন পেতে পারেন। যেমনঃ একজন কৃষক নিজের জমিতে নিজেই কাজ করা, জমিতে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা ইত্যাদি। এতে করে খরচ অনেক কমে যায়। ফলে কৃষক লাভবান হয়। তিনিও ৮ হাজার টাকা খরচ করে ২৪ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছেন ঢেঁরস। এখান থেকে তিনি ৩০ হাজার টাকার বেশি স্থানীয় বাজারে ঢেঁরস বিক্রিও করেছেন। সপ্তাহখানেক ঢেঁরস বিক্রি শেষে তিনি ওই জমিতে আবার ফুলকপি রোপন করবেন।

চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জ জেলায় প্রায় ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম সবজি চাষ করা হয়েছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে লক্ষমাত্রার বাকি জমিগুলোতেও সবজির আবাদ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান।

তিনি আরও জানান, অল্প পুঁজিতে আগাম জাতের সবজি আবাদ করে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায় বলে মানিকগঞ্জে সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। তিনি আরও জানান, কৃষি অফিস থেকে সব সময়ই সবজি চাষীদের সহযোগীতা ও পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষীরা শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারবেন বলে আশা করছেন মানিকগঞ্জের সবজী চাষীরা।

বাংলা ইনসাইডার/আরকে/ জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭