ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনকালীন সরকারে থাকছেন না যাঁরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/10/2018


Thumbnail

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বর্তমান মন্ত্রিসভার আকার ছোট হবে। নির্বাচন তফসিল ঘোষণার তিন থেকে এক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভার কলেবর কমাবেন। এই মন্ত্রিসভাকে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, সরকার তেমনটি বলতে রাজি নন। বরং প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম বলেছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভা গঠন, এর আকার নির্ধারণ সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। অধিকাংশ মন্ত্রী যেহেতু নির্বাচন করবেন এবং যেহেতু নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের কর্মকাণ্ড সীমিত থাকবে, তাই প্রধানমন্ত্রী ঐ সময়ে একটা ছোট মন্ত্রিসভা রাখতে চান।’

এইচ. টি. ইমাম বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় কতজন সদস্য থাকবেন, সেটি প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তের বিষয়।’ তবে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা এই মন্ত্রিসভা ১০ থেকে ১২ জনের মধ্যে সীমিত থাকবে। ঐ মন্ত্রিসভা সংসদের সব দলকে নিয়ে হবে বলে আমার ধারণা।’

সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী ১২ থেকে ২০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছেন। এই তালিকা থেকেই নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তিনটি বিবেচনা থেকেই এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রথমত, মন্ত্রিসভায় যেন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী নেতারা থাকেন। যারা সরকারের বিভিন্ন অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যাদের নির্বাচনে তাঁর আসন ছাড়া অন্য আসনে তদারকির প্রয়োজন কম এবং তৃতীয়ত, যারা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন।

সূত্রমতে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ নিজেই নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরশাদকে নির্বাচনকালীন সরকারে রাখলে, তার ডিগবাজির সম্ভাবনা কম- এমনটাই মনে করছেন সরকারের নীতি নির্ধারকরা। আওয়ামী লীগের প্রবীণ তিন নেতা আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ এবং মতিয়া চৌধুরীর নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার সম্ভাবনা বেশি। এরা নির্বাচনের সময় সরকারের বিভিন্ন অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য উপযুক্ত বলে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন। যেহেতু, ডিসেম্বর মাস পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও বিতরণের মাস এবং গত দশ বছর ধরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কাজটি করে আসছেন, সেজন্য নির্বাচনকালীন সরকারে তাঁর থাকার সম্ভাবনা বেশি। স্থানীয় পর্যায়ে স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো যেন নির্বাচনের ডামাডোলে বন্ধ না হয়ে যায়, সে কারণেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দায়িত্ব অব্যাহত রাখবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। একইভাবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকও তাঁর দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ১৪ দলের শরিকদের দুই মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনু থাকবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত যদি রাজশাহীতে ফজলে হোসেন বাদশাকে মনোনয়ন না দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে বাদশা হয়তো নির্বাচনকালীন সরকারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। একই ভাবে জাসদের দুই অংশ থেকে শিরীন আক্তার অথবা মঈন উদ্দিন খান বাদলকে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। নির্বাচনকালীন সরকারে ডা. দীপুমনি থাকতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। গত নির্বাচনে তাঁকে নির্বাচনের সময়ে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চাঁদপুরে তাঁর আসনে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা শোনা যায়। শেষ পর্যন্ত তাঁকে মনোনয়ন না দেওয়া হলে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা মোটামুটি নিশ্চিত। একইভাবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর আসনে ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান মনোনয়ন পেলে মেহের আফরোজ চুমকিও দায়িত্বে থেকে যেতে পারেন।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের প্রচারণার সুবিধার জন্য বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট মন্ত্রীকে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এবার নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের মূল ব্যক্তি হবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এজন্য তিনি নির্বাচনকালীন সরকারে নাও থাকতে পারেন। নির্বাচন বিধি অনুযায়ী মন্ত্রীরা যত্রতত্র নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে পারবেন না। একইভাবে ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমও নির্বাচনী প্রচারণার জন্য নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কোন্দলে জর্জরিত চট্টগ্রামের মন্ত্রী, যিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেনও নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় থাকছেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, গতবারের মতো এবারও ড. গওহর রিজভী এবং ড. মশিউর রহমান ছাড়া সব উপদেষ্টাই তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করতে পারেন।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭