ইনসাইড থট

ডক্টর কামাল কেন জামাতের পক্ষ নিলেন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/10/2018


Thumbnail

টাকার বিনিময়ে নিজের সন্তানকে অস্বীকার করা, পশুকে মানুষ বলা, দিনকে রাত বলার মতো অভিনব ব্যবসা এখন ইউরোপ আমেরিকায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বেশ। এরা বৈধ পথেই টাকা নিয়ে এই কাজ করছে আজকাল, বেশ জোরেশোরে, যার নাম লবিস্ট ফার্ম।    

বাংলাদেশে লবিস্ট ফার্ম প্রতিষ্ঠা ততোটা জনপ্রিয় না হলেও এক দুইটা আছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ যার বাংলাদেশে একটা লবিস্ট ফার্ম আছে তিনি তাঁর ফার্মের কার্যক্রম বাংলাদেশে বাড়ানোর জন্য একজনের সাথে যোগাযোগ করেন। এ সময় তাঁর কাছে ব্রিটেনে তথা ইউরোপ আমেরিকা, আফ্রিকায় তাঁদের কাজের ব্যপকতার কথা শুনে অবাক লাগে। তিনি দাবি করেন যে, ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’ সব কিছুই লবিস্ট ফার্মের কাজ। তাঁরা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ব্যবসা, মানবাধিকার, রাজনীতি নিয়েও কাজ করে। যেমন ভোটে দলের নমিনেশন দেয়া, মন্ত্রী বানানো, ইত্যাদিও করেন তাঁরা যদি উপযুক্ত টাকা পান। সরকার এটাকে বৈধ ব্যবসা হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়ার কারণ এর থেকে পাওয়া মোটা অঙ্কের টাকায় ট্যাক্সের পরিমানটা অনেক বড় যা মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের দেয়া ট্যাক্সের পরিমানের চেয়েও অনেক বেশি আবার তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বৈদেশিক মূদ্রায় অর্জিত। দেশে মানি ফ্লো বাড়ায়, অর্থনীতি চাঙ্গা করে।              

উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি হালের ও নিকট অতীতের কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এরপর ২০১৫ সালের ৫ই মে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে জাতীয় সংসদকে বিচারপতিদের উপরে খবরদারীর ক্ষমতা দেয়া ছিল। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির একাধিক ব্যক্তি তাঁদের তৈরী সংবিধানের ধারা উল্টে দিয়েছেন এমিক্যাস কিউরীর মতামতের নামে একমত হয়ে। এমিক্যাস কিউরীগণের মধ্যে ডক্টর কামাল হোসেন ও ব্যরিস্টার আমিরুল ইসলাম সাহেব ১৯৭২ সালের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা। যে কমিটি এই সংবিধান প্রণয়ন করেন পদাধিকার বলে তার সভাপতি ছিলেন ডক্টর কামাল হোসেন, তাই অনেকে তাঁকে ভুল করে ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণেতাও বলে থাকেন। ইংল্যান্ডে জোর গুজব আছে যে, ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেওয়ার পিছনে লবিস্ট আর মোটা অঙ্কের টাকার খেলা ছিল। এই রায়ের পরে সেটা ধরা পরে পাকিস্তানের স্টাইলে অন্য খেলা খেলার পরিকল্পনা ছিল একটা বিশেষ গোষ্ঠীর। সুত্র দাবী করেন যে, এখানে লবিস্ট ছিলেন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধাণের ডক্টর কামাল হোসেনের জামাতা বলে তাঁর কাছে খবর আছে। এ যেন নিজের সন্তানকে অস্বীকার করলেন তাঁর পিতা, তিনি যোগ করেন। আসলে একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যায় যে, যিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন এবং তাঁর দলের গঠনতন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকার অঙ্গীকার করে রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। কিন্তু কাজ করছে পুরো উল্টা। এতে জামায়াত-বিএনপিকে নাখোশ না করে তাঁদের সঙ্গেই জোট করার প্রক্রিয়ায় দাম উঠানোর জন্য ডক্টর কামাল হোসেন জামায়াত বিরোধী মেকি হুঙ্কার করেছেন বলে জানা গেছে। চাহিদা পূরণ হওয়ার পরে প্রকাশ্যেই রাজাকারদের পুনর্বাসনে জামায়াত নিয়ে গঠিত বহুদলীয় সরকার বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এখন।  

ডক্টর কামাল হোসেন, যিনি বহুল আলোচিত ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার একটি তদন্ত কমিটিতে সদস্য ছিলেন; ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এই জঘন্য হত্যাকান্ডের বিচার চেয়েছেন কিন্তু বিচারের পরে তিনি নীরব আছেন সেখানেও আছে লবিস্টের কোমল পরশ, সুত্রে জানায়।    

একটু পিছনে ফিরে দেখলে দেখা যায় যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বিপুল অর্থশালী অপরাধীর সাজা মৌকুফের জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে কিনে নিয়েছিলো সাজা প্রাপ্তদের স্বজনেরা লবিস্ট নিয়োগ করে। নানা সংগঠন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত, জাতীয় পার্টি, বিএনপি নেতাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, সরকারের বাংলাদেশের উপর অনেক চাপ ছিল। কিতু পরে একই ধরণের অপরাধে তুলনামূলক গরীব অনেক মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হলেও তাঁদের নিয়ে কোন মানবাধিকার সংগঠন উচ্চবাচ্চ করা তো দুরের কথা, একটা হাল্কা টাইপের বিবৃতিও দেয় নি। ভাবটা এমন যে, গরীবের মানবাধিকার থাকতে নে; তাঁদের কথা হল ‘ফেল কড়ি মাখো তেল’।

স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের উত্তারাধিকার ফটোগ্রাফার শহীদুল সাহেবকে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার দায়ে আটকের পরে সারা দুনিয়ার অনেকেই বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু একই কাজ করা অন্য এক নায়িকার জন্য বিদেশী তো থাক দেশী কেউ তেমন আহা উহা করেন নি। দেশী বিদেশী অনেকেই ফটোগ্রাফার শহীদুল সাহেবের জন্য কুম্ভিরাশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন; এখানেও লবিস্টের খেলা বলে ব্রিটিশ সুত্রটি দাবি করেন। 

এই দেশ লবিস্ট ব্যবসার উর্বর ভূমি উল্লেখ করে ব্রিটিশ ঐ লিবিস্ট বলেন যে, আগামী সংসদ নির্বাচন, স্থানীয়সরকার নির্বাচন, মন্ত্রী বানানো ইত্যাদি কাজে ভালো ব্যবসার একটা যুযগ বাংলাদেশে এখন আছে। এমন অনেক ব্যবসার ঠিকাদারীও লবিস্ট ফার্মের মাধ্যমে নিয়ে দেয়া হয়, যার থেকে ায় তাঁদের নিজ নিজ দেশে বৈধ বলে বিবেচিত।

গত রাতে তিনি জানান যে, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে মাঝে মাঝে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন আর নামীদামী ব্যক্তিদের বিবৃতি দেখলে মনে হতে পারে যে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে দুনিয়ার অধিকাংশ দেশ ও তাঁদের সরকার অপছন্দ করে। তিনি জাতিসংঘ একটা খবরে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন-   

বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশ আগামী তিন বছরের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচসিআর) সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। লবিস্টের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ আগামী ২০১৯-২০২১ মেয়াদে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।

১২ অক্টোবর ২০১৮ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই বেছে নেওয়ার ব্যাপারটি হয় গোপন ভোটের মাধ্যমে। জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত ১৯৩টি দেশের মধ্যে নির্বাচিত হওয়ার জন্য ন্যূনতম ৯৭ ভোট প্রয়োজন ছিল। মজার ব্যাপার হল, এতে বাংলাদেশ ১৭৮ ভোট পেয়ে কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়।

এই সংস্থার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ছাড়াও নির্বাচন করেছে ভারত, বাহরাইন, ফিজি ও ফিলিপাইন। সর্বোচ্চ ১৮৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে ভারত। বাকিরা হলো- বাহরাইন, ফিজি ও ফিলিপাইন। এর আগেও বাংলাদেশ ২০০৭-০৯, ২০১০-১২ এবং ২০১৫-১৭ মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছিল। যে ১৫ দেশ বাংলাদেশকে ভোট দেয়নি তারা শেখ হাসিনার সরকারের বিরোধী তা বলা যাবে না, বরং তাঁদের অন্য ক্যান্ডিডেট পছন্দ ছিল তা কিছুটা হলেও সত্যি তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। তা না হলে যে দেশে পদে পদে মানবাধিকার লুণ্ঠিত বলে দুনিয়া জুড়ে ‘জিকির’ তোলার পরেও এতগুলো দেশ বাংলাদেশকে কেন ভোট দেবে?

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ

 

   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭