ইনসাইড আর্টিকেল

দেশসেরা পাঁচ পূজা মণ্ডপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/10/2018


Thumbnail

আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী আজ। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে মাতৃ আরাধনা। আজ সোমবার থেকে শুরু করে পাঁচ দিনব্যাপী দেবী দুর্গার পূজার মাধ্যমে ঘোষিত হবে নারী শক্তির জয়। নারী শক্তির বিজয় উদযাপন করতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মণ্ডপ সেজেছে অপূর্ব সাজে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও খ্যাতনামা দুর্গা পূজার মণ্ডপ সম্পর্কে। এই মণ্ডপগুলোতে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দর্শন দেবে আপনার দুর্গোৎসবকে পূর্ণতা আর মনকে প্রফুল্লতা।

ঢাকেশ্বরী মন্দির

ঢাকার প্রাচীনতম ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রাজধানীর সবচেয়ে বড় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দির সবসময়ই সুন্দর কিন্তু দুর্গা পূজার সময় ভিন্নধর্মী সাজসজ্জা ও আলাদা আলোকসজ্জায় এই মন্দির ভিন্ন রূপ ধারণ করে।

লোকমুখে প্রচলিত, একদা রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীপাড়ের জঙ্গলে দেবী দুর্গার একটি মূর্তি খুঁজে পান। প্রতিমাটি স্থাপন করে তিনি সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করেন যা আজকে ঢাকেশ্বরী মন্দির নামে খ্যাত। প্রতিমাটি জঙ্গলে ঢাকা অবস্থায় ছিল বলে রাজার আরাধ্য দেবীর নাম হয় ‘ঢাকেশ্বরী’ আর মন্দিরটিও পরিচিতি পায় ঢাকেশ্বরী নামে। অনেক ঐতিহাসিকের মতে ঢাকেশ্বরী থেকেই ঢাকা নামের উৎপত্তি। বর্তমানে এখানে মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিংহ নির্মিত ৪টি শিবমন্দির আছে। এদের নির্মাণশৈলী অনেকটা বৌদ্ধ মন্দিরের মতো।

দুর্গোৎসবের পাঁচদিন ধরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই থাকে। মূল পূজা মণ্ডপের পেছনেই শতবর্ষ পুরনো মূল মন্দিরটির অবস্থান। তাই পূজা দেখতে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটিও।

রাম কৃষ্ণ মিশন মন্দির

রাজধানী তথা দেশের আরেক ঐতিহ্যবাহী দুর্গোৎসবের আয়োজক রাম কৃষ্ণ মিশন ও মঠ। শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে ১৮৯৯ সালে ঢাকার রাম কৃষ্ণ মিশন সড়কে এ মিশনটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বেলুর মঠের স্বীকৃতি লাভ করে।

রামকৃষ্ণ মিশনের দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। । এই মন্দিরে মহা অষ্টমীর দিনে এক কিশোরী কুমারীকে দেবীর আসনে বসিয়ে মাতৃরূপে পূজা-অর্চনা করা হয়। সেদিন ঢাকের বাদ্য, শঙ্খের ধ্বনি, কাঁসার ঘণ্টা, আর উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে কুমারী মাকে পূজা করার মধ্য দিয়ে মন্দিরে উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কুমারী পূজা দেখার জন্য সেদিন দলে দলে লোক মিশনের মন্দিরে ভিড় করেন।

শাঁখারিবাজারের পূজা

পুরান ঢাকার পূজা না দেখলে যেন প্রতিমা দর্শন সম্পন্ন হয় না। আর পুরান ঢাকার দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ শাঁখারীবাজারের পূজা। বাজারের মূল সড়ক তেমন প্রশস্থ নয়। তার মধ্যেই রাস্তার পাশে বসে শাঁখা, পূজার উপকরণসহ বিভিন্ন মনিহারি দ্রব্যের দোকান। শাঁখারীবাজারের ১৫ ফুট পরপরই একটি করে পূজার মণ্ডপ বসে যাদের বয়স ৪০, ৫০ বা ৬০ বছরেরও বেশি।  বর্তমানে শাঁখারীবাজারে মোট নয়টি পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান আমলে শাঁখারীবাজারে দুটি বা তিনটি পূজা হতো, স্বাধীনতার পর পূজার সংখ্যা বেড়েছে। শাঁখারীবাজারে বারোয়ারি পূজার পাশাপাশি বাড়িতেও পূজা হয়ে থাকে।

পূজার সময় শাঁখারিবাজারে গেলেই উৎসবের আবহ চোখে পড়ে। শত শত মানুষ প্রতিমা দেখতে ভিড় জমায়।

রমনা কালী মন্দির

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ প্রান্তে রমনা কালী মন্দিরেও ঘটা করে দুর্গোৎসব পালন করা হয়। প্রাচীন এই মন্দিরটি ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী ধ্বংস করে ফেলে। পরে এখানে আর বড় কোনো স্থায়ী মন্দির নির্মাণ করা না হলেও পূজার আগে বাঁশ ও রঙিন কাপড় দিয়ে বড় আকারের অস্থায়ী মন্দির নির্মাণ করে প্রতি বছরই দুর্গা পূজা পালন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছাকাছি হওয়ায় রমনা কালী মন্দিরের দূর্গোৎসবে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এক আলাদা আমেজের সৃষ্টি করে।

বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা নজর কেড়েছে দেশবাসীর। বাগেরহাট জেলার সদর থানার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের লিটন শিকদার নামের একজন ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে এই পূজা। বর্তমানে সারাদেশের সর্বৃহৎ দুর্গোৎসবের খ্যাতি পেয়েছে শিকদারবাড়ির পূজা। বাংলাদেশে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মতো থিম পূজার রমরমা না থাকলেও বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির পূজা মণ্ডপ থিমের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়। সমগ্র পুরাণ যেন তুলে আনা হয় এই পূজা মণ্ডপে।  দুর্গা মায়ের বিভিন্ন রূপের প্রতিমা তো রয়েছেই, একই সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বী অন্য দেব-দেবী ও বিভিন্ন পৌরাণির ঘটনাবলীও ফুঁটিয়ে তোলা হয় ভাস্কর্যের মাধ্যমে। জানা গেছে, প্রতি বছরই শিকদার বাড়ির পূজা মণ্ডপে প্রতিমার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭