ইনসাইড আর্টিকেল

ভারতে ‘পরিচয় রাজনীতি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/10/2018


Thumbnail

একটি রায়ে সবগুলো দলই নিজেদের বিজয় দেখছে, এমন ঘটনা খুব কমই ঘটে থাকে। সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এমনই এক রায় ঘোষণা করেছে। ১ হাজার ৪৪৮ পৃষ্ঠার ওই রায়ে আধার বিল বা পরিচয়পত্র পরিকল্পনাকে ‘সাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জনগণের ব্যক্তিগত বিবরণ, আঙুলের ছাপ ও আইরিশ প্যাটার্ন কার্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হলে গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে না বলেও জানিয়েছে আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের রায়কে নিজেদের বিশাল জয় হিসেবে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। অন্যদিকে বিরোধীদল কংগ্রেস বলছে, এই রায় বিজেপির গালে এক বড় চপেটাঘাত। দেশটির ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথোরিটি বলছে, আদালতের সিদ্ধান্তের ফলে ভারত ডিজিটাল অগ্রযাত্রার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো।

বর্তমান বিরোধীদল কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে দেশের সব মানুষকে পরিচয়পত্র প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এই কাজটিই ব্যাপক পরিসরে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আধার ব্যবহারের অনুমতি দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলোও এর যথেচ্ছ ব্যবহার শুরু করে। 

বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা, ব্যাংকে হিসাব খোলা, মোবাইলের সিম কেনাসহ বেসরকারিখাতেও আধার কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পক্ষে ছিল মোদি প্রশাসন। তবে বেসরকারিখাতে আধার ব্যবহারের বিরোধীতা করেন অনেকে। আধার কার্ডে আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশের প্যাটার্ন ব্যবহারের ফলে গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়বে বলেও জানান তারা। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন অনেকে আধার কার্ড সিস্টেমটি অনিরাপদ এবং ত্রুটিপূর্ণ বলেও দাবি করছিল। সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন আধার কার্ডের বিরোধিতা করে বলেছিল, এটি দরিদ্রদের সেবা পেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।

বাস্তব ক্ষেত্রেও আধার কার্ডের বেশ কিছু অসংগতি ধরা পড়ে। দরিদ্র শিশুরা স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে। আধার কার্ড না থাকায় গর্ভবতী নারীকে সরকারি হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করায় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তো ছিলই। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সংগঠন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।

আধার কার্ডের গুনাগুন কিংবা অসংগতি নিয়ে ভারতের রাজনীতির ময়দানও গরম হতে শুরু করে। অবশেষে আদালত রায়ে জানায়, কোন একটি সিস্টেমে অসংগতি থাকা মানে এই নয় যে সেটিকে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। বরং সেটির অসংগতি দূর করার কাজই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।  

সুপ্রিম কোর্ট আধার আইনকে বৈধতা দিলেও বেসরকারি খাতে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। রায়ে বলা হয়েছে, কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য তুলে দেওয়া যাবে না। ব্যাংকে হিসেব খোলা অথবা মোবাইল ফোনের ‘সিম’ নেওয়ার ক্ষেত্রেও আধার কার্ড আবশ্যিক নয়। স্কুলে ভর্তি অথবা পরীক্ষা দিতে গেলেও এই কার্ড বাধ্যতামূলক হবে না বলে জানিয়েছে আদালত। এছাড়া কারও কাছে কার্ড না থাকলে তাকে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না করার আদেশ দিয়েছে আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের জুরিবোর্ডের পাঁচ বিচারপতির মধ্যে মাত্র একজনই আধার আইনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আধার আইনটিই অসাংবিধানিক।’ সমালোচকদের কেউ কেউ আধার আইনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে বেসরকারি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় অনেকেই আবার এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আদালতের এই রায় আইনে পরিণত করতে হলে দেশটির আইনসভার অনুমোদনের দরকার হবে। তবে আপাতত আধার রাজনীতি চলতে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।  

সুত্রঃ দি ইকোনমিস্ট

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭