কালার ইনসাইড

যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/10/2018


Thumbnail

‘হার্ভি ওয়াইনস্টিন কাণ্ড’র পর হলিউডে রীতিমতো ঝড়! বলিউডেও এসে লাগলো সেই ধাক্কা। কাস্টিং কাউচের মতো অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছিল হলিউড ও বলিউড। যৌন হেনস্থার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #MeToo ক্যাম্পেন সাড়া ফেলেছিল গোটা বিশ্বে। কিভাবে ‘কাস্টিং কাউচের’ শিকার হতে হয়েছিল সেটাও বর্ণনা করেছেন অনেক অভিনেত্রী। সম্প্রতি বলিউড অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত বিখ্যাত অভিনেতা নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন শুটিংয়ে যৌন হেনস্থার। এমন অভিযোগ নিয়ে বলিউডের আরও অনেক অভিনেতা- অভিনেত্রী মুখ খুলছেন। যেখানে জড়িয়ে পড়ছে অমিতাভ বচ্চন, ‘সংস্কারি বাবুজি’ খ্যাত অলোক নাথ মতো অভিনেতাদেরও নাম। এর কিছুদিন আগে বাংলাদেশের মডেল-অভিনেত্রী ফারিয়া শাহরিন দাবি করেছিলেন, কাজ পাওয়ার বিনিময়ে ‘অনৈতিক প্রস্তাব’ পেয়েছিলেন তিনি। ফল ভালো হয়নি, হলিউডের মতো বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনের বাসিন্দারা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। এ নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি।

ফারিয়ার বক্তব্যের পর এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বন্যা মির্জা, নাফিজা জাহান, মৌসুমি হামিদসহ আরও কয়েকজন। ফারিয়া কাজ পেতে চায় বলেই এমন কথা বলছে বলে অভিযোগ করেন বন্যা মির্জা। ফারিয়াকে নিয়ে সরাসরি এই কজন কথা বললেও অভিনয়শিল্পী ও প্রযোজকদের কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে সমর্থন দিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন নাদিয়া আহমেদ, শ্রাবণী ফেরদৌস, তুহিন বড়ুয়া, পল্লব বিশ্বাস, আলভী, জেনী, শশী, নওশীন, শ্যামল মাওলা, মৌসুমী নাগ, বাঁধন, তিন্নি, চয়নিকা চৌধুরী, মৌসুমী হামিদ প্রমুখ। সহকর্মীদের কাছ থেকে তিরস্কার জুটলেও ফারিয়ার সাহসী বক্তব্যের প্রশংসা করেছেন অনেকে।

এমন অভিযোগ আরও অনেকেই করেছেন। ফারিয়ার এমন অভিযোগের কিছুদিন আগে অভিযোগ তুলেছিলেন অভিনেত্রী সারিকা। তিনি অভিযোগ করে বলেন,‘ শুটিং ডেটের একদিন আগে ক্লায়েন্টের গাড়িতে করে মানিকগঞ্জ (যেখানে যেতে ১ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে আমার বাসা থেকে) যাওয়া এবং প্রিভিয়াস ডে অ্যান্ড নাইট তার সঙ্গে সেখানে অবস্থান করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা কি কোনো অপরাধের খাতায় পড়ে? এটা কি অপেশাদারিত্ব?’ রাঙাপরী মেহেদির একটি বিজ্ঞাপনের শুটিং করার কথা ছিল তার। আশ্চর্য্য জনক হলেও সত্য, পরবর্তীতে সারিকার ছেড়ে দেয়া কাজটি করেন পূর্ণিমা।

অথচ এমন অভিযোগ পূর্ণিমাই তুলেছিলেন পরিচালক পি এ কাজলকে নিয়ে। পি এ কাজলকে নিষিদ্ধও করা হয়েছিল এফডিসি থেকে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই পরীমনি এ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। তিনি সাফ না করে দেন এক প্রযোজককে। পিয়া বিপাশা রীতিমতো আঙ্গুল তুলেছিলেন শাকিব খান ও পরিচালক বুলবুল বিশ্বাসের দিকে। শাকিব খান অশোভন আচরন করেছেন বলে অভিযোগ তুলেন। এ জন্যই তিনি সিনেমাটি না করার সিদ্ধান্ত নেন। তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করাসহ ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি।

এক ছবির নায়িকা হুমায়রা ফারিন খানের শুরুটা জাজের হাত ধরে। তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন,‘মিডিয়ায় কাজ করার মতো অবস্থা নেই। তাই ছেড়ে দিয়েছি মিডিয়া।’ তিনি এখন বিয়ে করে ঘর সংসার করছেন।  নায়িকা অমৃতাও বিদায় নিয়েছিলেন শোবিজ থেকে। তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন ডিপজলের বিরুদ্ধে। তার কথায় সায় না দেওয়াতে নাকি ছবি থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। আচঁলও এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। কিন্তু তারা যাদের বিপরীতে কথা বলেছেন, তাদের হাতটা লম্বা হওয়াতে ঘটনা খুব বেশি সামনে এগুয়নি।

টুকটাক করে এদিক ওদিকে করে এমন কানকথা সংবাদকর্মীরা শুনতে পায়। আবার অনুরোধও আসে যেন নিউজ না করা হয়। তাহলে হয়তো তাঁর ক্যারিয়ারই ধ্বংস হয়ে যাবে। এ প্রজন্মের অভিনেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হল বিষয়টি নিয়ে। কই! অনেকে জানেনই না, শোবিজে এমন কিছুর অস্তিত্ব আছে! একজন তো বলেই দিলেন, কোনোভাবেই যেন এ ধরনের সংবাদে তাঁর নাম না থাকে। তবে কিছু পরামর্শ দিলেন, ‘এ ধরনের খবর সংবাদপত্রে না আসাই ভালো। আমাদের কাজের খবর প্রকাশ করেন। এসব প্রকাশ্যে আসতে হবে কেন?’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন বললেন, সব প্রফেশনেই কিন্তু এমনটা হয়, শোবিজেরটাই কেন হাইলাইট করতে হবে। এতে হিতে বিপরীত হয়, সবাই ভাবে শুধু শোবিজেই এসব হয়। কথাটি মিথ্যে নয়, শোবিজের কেউ অভিযুক্ত হলে পেশাটাকেই অভিযুক্ত করে ফেলেন কিছু মানুষ।

শোবিজ-সংশ্লিষ্টরা নিজেদের পেশার সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ব্যক্তি অধিকার ক্ষুণ্ন করছেন কি না সেটাও দেখতে হবে। ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে বহির্বিশ্বের অভিনেত্রীরা যখন একের পর এক ফাঁস করছেন মুখোশের আড়ালে থাকা অভিযুক্তদের, তখন আমাদের অভিনেত্রীরা বিষয়টাকে রেখেঢেকে রাখতে চাইছেন। অনেক অভিনেত্রী আছেন, যাঁরা হয়তো কখনোই এমন কিছুর শিকার হননি; কিন্তু অন্যজন যখন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে হাজির হবেন তাঁকে যেন কটূক্তির মুখে না পড়তে হয়। সেটাও খেয়াল করা উচিত, অন্তত সিনিয়রদের। অভিনেত্রী প্রসূন আজাদ বলেছিলেন, ‘শোবিজে কেউ ধর্ষিত হয় না, যা হয় পারস্পরিক সম্মতিতেই।’ সম্মতি ও বাধ্য হওয়া-দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে। অনেক অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, এই পার্থক্যটা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। ‘বাধ্য হওয়া’র বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হলে বরং শোবিজেরই লাভ হতো। ইস্যুটার একটা রফা হয়ে যেত। সেদিন ফারিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কে না গিয়ে এটাকে সুযোগ হিসেবে নেওয়া যেত। হার্ভি ওয়াইনস্টিন, কেভিন স্পেসি কিংবা নানা পাটেকারের মতো অভিযুক্তরা চিহ্নিত হতেন, বাকিরা তখন বুক ফুলিয়ে বলতে পারতেন,‘দেখো, আমি নেই এই তালিকায়।’ যে পেশাটার মর্যাদা নিয়ে সবাই চিন্তিত সেই পেশাটাও হতো কলঙ্কমুক্ত। নতুনদের ভয় পেতে হত না শোবিজকে।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭