ইনসাইড বাংলাদেশ

ভুতুড়ে ফলাফল!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/10/2018


Thumbnail

কত কিছুরই না আকাঙ্ক্ষা থাকে মানুষের। বাড়ি, গাড়ি, টাকা-পয়সার। ছোট্টবেলা থেকেই মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। হতদরিদ্র থেকে বৃত্তবান, কেউই বাদ বাদ যান না। ভিন্ন-ভিন্ন মানুষ ভিন্ন-ভিন্ন আশা। ইশ! আমি যদি একটা আলাউদ্দিনের চেরাগ পেতাম! এমন আফসোস জীবনে একবারও করেনি এম্ন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। একেকজন মানুষ এই চেরাগ হাতে পেলে এক এক রকম জিনিস চাইবে এটাই স্বাভাবিক। একজনের সঙ্গে অন্যজনের ইচ্ছা মিলে যাবার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। কিন্তু, কখনো কখনো সময়ভেদে এ ইচ্ছাও মিলে যায় শতভাগ। পরীক্ষার আগে সব শিক্ষার্থীরই চাপা বাসনা থাকে মনে, ইশ! যদি একটা আলাউদ্দিনের চেরাগ পেতাম! তাইলে আগে ভাগেই পরীক্ষার প্রশ্নটাই চাইতাম। শুধুমাত্র ওই প্রশ্নের উত্তরগুলোই মুখস্ত করে রাতারাতি হয়ে যেতাম সাবার সেরা। সেরা হওয়ার ইচ্ছা কার না থাকে? কিন্তু তারজন্য প্রয়োজন কঠোর অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের। কিন্তু রাতারাতি জিরো থেকে হিরো হওয়া শুধুমাত্র যেন সিনেমাতেই সম্ভব। আর হ্যাঁ, সম্ভব যদি অসদুপায় অবলম্বন করা হয়। ও, আমি তো আলাউদ্দিনের চেরাগের কথা ভুলেই গেছিলাম। এটা পেলেও হয়তো সম্ভব।

এবার আসুন শুনতে অবিশ্বাস্য গল্পের মতো হলেও সত্যি একটা ঘটনা শুনি। আসুন শুনে নেই মানুষের রাতারাতি মেধাবী হওয়ার গল্প। গত ১৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ভুতুড়ে ফলাফল কিছু শিক্ষার্থীর অর্জন যেন কল্পনাকেও হার মানায়। ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মোট ১২০ নম্বরের মধ্যে ১১৪.৩০ পেয়ে সম্মিলিত মেধাতালিকার বাণিজ্য শাখায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন জাহিদ হাসান আকাশ। এই শিক্ষার্থী ঘ ইউনিটের পরীক্ষায় বাংলায় ৩০ এর মধ্যে ৩০, ইংরেজিতে ৩০ এর মধ্যে ২৭.৩০ পেয়েছেন। বুঝাই যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের মধ্যে প্রথম সারির শিক্ষার্থী তিনি। ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় ১২০ নম্বরের মধ্যে ১১৪.৩০! এতো আর চাট্টিখানি কথা না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০ বছরে ১২০ এর মধ্যে ১১৪.৩০ কেউ পায়নি। তারমানে ২০ বছর পর এমন মেধাবী কাউকে পেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হতেই পারে এমনটা। এতে এত অবাক হওয়ার কি আছে। অবাক তো তখনই হতে হয় যখন এটা জানা যায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষায় জাহিদ হাসান আকাশ ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে  ভর্তি পরীক্ষায় সর্বমোট ১২০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছিলেন ৩৪.৩২। তিনি বাংলায় পেয়েছিলেন ১০.৮ ইংরেজিতে পেয়েছিলেন ২.৪০। অথচ মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় হয়ে গেলেন প্রথম! আলাউদ্দিনের চেরাগ কি তাহলে সত্যিই ধরা দিয়েছে তার কাছে?

জাহিদ হাসান আকাশের মতোই আরেক শিক্ষার্থী তাসনিম বিন আলম অসম্ভবকে হার মানিয়েছেন। তিনি ঢাবি ‘ঘ’ ইউনিটে (বিজ্ঞান শাখায়) প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। অথচ বিজ্ঞান শাখার এই শিক্ষার্থী তাঁর নিজের অনুষদ ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় ১২০ নম্বরের মধ্যে ৪৩.৭৫ পেয়ে ফেল করেছিলেন। সেই তিনিই ঢাবি ‘ঘ’ ইউনিটে সে ১২০ নম্বরের মধ্যে ১০৯.৫০ পেয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকার বিজ্ঞান শাখায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। চেরাগ কি তাহলে অনেকগুলো নাকি একটা চেরাগের অনেক দৈত্য?

এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা শুধুমাত্র জাহিদ হাসান আকাশ ও তাসনিম বিন আলমের বেলাতেই ঘটেনি। ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার ফলাফল যাচাই করে দেখা গেছে এই ইউনিটে সর্বোচ্চ মেধাতালিকায় থাকা একাধিক ভর্তিচ্ছু তাদের নিজের ইউনিটের পরীক্ষায় পাসই করতে পারেননি। অথচ কয়েক দিনের ব্যবধানে আরেক ইউনিটের পরীক্ষায় রীতিমতো ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘ঘ’ ইউনিটে মেধাতালিয়ায় ১০০ ক্রমের মধ্যে থাকা ৭০ জনের বেশি শিক্ষার্থী তাদের নিজ নিজ অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণই হননি।

এর আগে ১২ অক্টোবর পরীক্ষার দিনই এই ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার প্রায় ৪৫ মিনিট আগে উত্তরসহ প্রশ্নপত্র সাংবাদিকদের হাতেও পৌঁছায়। তারা জানান বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে। অভিযোগের ভিত্তিতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। তদন্তে বের হয়ে আসে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি। কিন্তু অভিযোগের মধ্যেই ফল প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে ঘ ইউনিট পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেছেন, ভাইভাতে ভর্তি কমিটির লোক থাকবে। অনেক যাচাই-বাছাই এর পরই তাদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। কারো অস্বাভাবিক কোনো কিছু পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, জালিয়াতি করে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জালিয়াতি যখন যে যেই অবস্থায় চিহ্নিত হবে, তখনই তার ভর্তি বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একবিংশ শতাব্দীতে মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছালেও নৈতিক দিক থেকে সর্বনিকৃষ্টতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রত্যেকেই যেন এখন আত্নকেন্দ্রিক। নিজেকে ভালো ও প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যস্ত প্রত্যেকেই। উদ্দেশ্য সাধনে পিছুপা হয়না অসুধপায় অবলম্বন করতে। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য যে হচ্ছে আত্মার উৎকর্ষ সাধন। শুধুমাত্র ডিগ্রি অর্জনই প্রকৃত শিক্ষা নয়, এটা মানিই বা কয়জন?

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭