ইনসাইড থট

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন: জনগণ বনাম অর্থ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/10/2018


Thumbnail

খুব দ্রুতই আমরা দেখতে চলেছি যে রিপাবলিকান পার্টির অর্থপ্রবাহ বা অর্থের বিভিন্ন প্রাচুর্য মার্কিন ভোটাররা কীভাবে গ্রহণ করে। আসন্ন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে এটাই এখন বড় প্রশ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভবিষ্যত ওপর পুরো বিশ্বের শান্তি আর সমৃদ্ধি অনেকটাই নির্ভর করছে।

নিউইয়র্ক: সবার চোখ এখন যুক্তরাষ্ট্রের নভেম্বরের কংগ্রেসের নির্বাচনের দিকে। এই নির্বাচনের ফলাফল দুই বছর আগের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের অনেক না জানা আলোচিত প্রশ্নের উত্তর দেবে।

এখন প্রশ্ন হলো, মার্কিন ভোটাররা কি ঘোষণা করবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আসলে কতটা যোগ্য কি না? ভোটাররা কি তাঁর বর্ণবাদ, স্ত্রী-বিদ্বেষ, জাতিবাদ এবং সুরক্ষাবাদকে ত্যাগ করবে? তারা কি বলবে যে তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ আইন আন্তর্জাতিক আইনের প্রত্যাখ্যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নয়? নাকি তারা এটা স্পষ্ট করে দেবে যে ট্রাম্পের জয় একটি ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা ছিল না, এটি রিপাবলিকান প্রাথমিক প্রক্রিয়ার ফলে ঘটেছিল, যা বিতর্কিত প্রার্থী এবং গণতান্ত্রিক প্রাথমিক প্রক্রিয়া তৈরি করেছে যা ট্রাম্পের আদর্শ প্রতিপক্ষকে আরও উসকে দিয়েছে?

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ভারসাম্যহীন অবস্থায়, ২০১৬ সালের ফলাফলের ফলে যা ঘটেছিল তা নিয়ে বিতর্কিত হয়েছিলো তো বটেই। এবার ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং ইউরোপের বাম দলগুলি নিজেদের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে চেষ্টা করবে। তারা কি তরুণ, প্রগতিশীল এবং উত্সাহী নবীনদের সংগঠিত করতে পারবে?

তবে এটা এখন বিশ্বাস করাই যায় যে, পরবর্তী নির্বাচনী ধাপগুলো সাফল্য আনতে এবং ট্রাম্পের তৈরি বিপদগুলি কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।

আমেরিকার ভোটারদের ভোটের ফলাফল হতাশাজনক, আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরগুলি বাদে যেকোনো নির্বাচনের ফল আরও খারাপ। ২০১০ সালে ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে যোগ্য ভোটারদের মধ্যে কেবল ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাটিক ভোটের অবস্থা আরও খারাপ, যদিও এই নির্বাচন চক্রে উর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিলো।

মার্কিনিরা প্রায়ই বলে যে, তারা ভোট দেয় না কারণ তারা মনে করে এটি পরিস্থিতির তেমন কোনো মৌলিক পার্থক্য তৈরি করতে পারে না। ট্রাম্প সেটা দেখাতেও পারেনি। রিপাবলিকানরা যারা রাজস্ব যথার্থতার সব প্রতিবাদকে পরিত্যাগ করেছিল এবং গত বছর তারা কোটিপতি ও কর্পোরেশনের জন্য বিশাল করের জন্য ভোট দিয়েছে, তা সত্য নয়। এবং মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ব্রেট কাভানার ভ্রান্ত সাক্ষ্য এবং পুরানো যৌন নিপীড়নের ঘটনার পরেও মনোনয়নের পিছনে যে রিপাবলিকান সিনেটররা কাজ করেছে, সেটিও ভুল ছিল বলে মনে করা হয়।

কিন্তু ভোটার উদাসীনতার জন্য ডেমোক্র্যাটরাও দায়ী। তাদের অবশ্যই আগে শুরু থেকে শেষ অব্দি সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মূলধন লাভের ট্যাক্স কাটা এবং আর্থিক বাজারের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ২০০৮ সালের ব্যাংকের বেলআউট- এসব বিষয়গুলো। গত চতুর্থাংশ শতাব্দীতে দেখা গেছে এই ডেমোক্র্যাটরা মজুরির ওপর নির্ভরশীলদের চেয়ে মূলধনের লাভের ওপর নির্ভরশীলদের বেশি মূল্যায়ন করেছে জয়লাভের জন্য। অনেক ভোটাররা এই অভিযোগও করেছে যে, নিজেদের ভালো বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলার চেয়ে ট্রাম্পকে বিভিন্নভাবে আক্রমণ করতেই বেশি উৎসাহী এই দলটি।

স্যান্ডার্স ও ওকাশিয়-কর্টেজের মতো প্রগতিশীলরা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে লোভনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ডেমোক্রেটদের জয়ের জন্য তাদেরকে দলে টানা খুবই জরুরি ছিল। তারা ভোটারদের ভালো চাকরি, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং ঋণ ছাড়াই উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করে দেয়ার কথা বলেছিলেন। সেই সঙ্গে শর্তহীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও ছিল। পাশাপাশি সহজলভ্য আবাসন ব্যবস্থা, পেনশন সুবিধার কথাও এর মধ্যে অন্তুর্ভুক্ত ছিল। তারা আরো বেশি গতিশীল, প্রতিযোগিতামূলক এবং ন্যায্য-বাজার অর্থনীতি চেয়েছিলন; যেটা বাজার ব্যবস্থা, অর্থায়ন ও বিশ্বায়নের অতিরিক্ত ক্ষমতার পরিবর্তে শ্রমিকের দরকষাকষির ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে।

মধ্যবিত্ত জীবনযাপনের এই শর্তগুলো সহজেই পূরণ করা যায়। ৫০ বছর আগেও, আমেরিকা যখন বর্তমানের চেয়ে দরিদ্র ছিল, তখনও এটা পূরণ করা যেতো। এখনও তা সম্ভব। আসল কথা হচ্ছে, আমেরিকার অর্থনীতি বা গণতন্ত্র—কোনোটাই মধ্যবিত্ত ছাড়া চলতে পারবে না। সরকারের নীতি ও কর্মসূচির—স্বাস্থ্য বিমা, অবসর ভাতা বা বন্ধক—দিকে তাকালেই তা পরিষ্কার বোঝা যায়।

তাই, এসব প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা ও তাদের প্রতি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমর্থন আমাকে উৎসাহিত করে। আমার বিশ্বাস, সাধারণ গণতন্ত্রে এসব ধারণাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। কিন্তু মার্কিন রাজনীতিতে অর্থের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। সেই সাথে জনগণের ভোট দেয়ার ক্ষমতা হরণ ও জালিয়াতির হারও বেড়েছে। ২০১৭ সালের ট্যাক্স বিল আসলে বড়ো করপোরেশনগুলোকে ঘুষ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল; যাতে তারা ২০১৮’র নির্বাচনে অবৈধভাবে প্রচুর টাকা ঢালতে পারে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকার রাজনীতিতে অর্থ বিরাট ভূমিকা রাখে। এমনকি দুর্বল গণতন্ত্রেও—সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কাউকে ভোটদান থেকে বিরত রাখার চেষ্টাসহ—আমেরিকার নির্বাচকমণ্ডলী ভূমিকা রাখতে পারেন। আমরা শিগগিরই খুঁজে বের করবো, রিপাবলিকান পার্টির অর্থ-ভাণ্ডারের চেয়েও এটা এটা বেশি জোরালো ভূমিকা রাখে কিনা। আমেরিকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ, এমনকি সারা বিশ্বের উন্নতি ও শান্তি, এই উত্তরের ওপরই নির্ভর করছে।

লেখক: জোসেফ ই স্টিগলিজ। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। রুজভেল্ট ইনস্টিটিউটের মূখ্য অর্থনীতিবিদ।

সূত্র: প্রোজেক্ট সিন্ডিকেট

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭