ইনসাইড আর্টিকেল

ব্যতিক্রমী সব পূজা মণ্ডপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/10/2018


Thumbnail

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আবহমানকাল থেকেই পূজাকে ঘিরে মণ্ডপের সৌন্দর্যবর্ধন ও প্রতিমার সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এক নীরব প্রতিযোগিতা চলে। পূজা মণ্ডপে ঘুরতে আসা ছোট-বড় সকলেই যেন আসিন হন বিচারকের আসনে। তাইতো অন্য মণ্ডপ থেকে নিজেদেরকে আলাদা ও আকর্ষণীয় করার প্রচেষ্টা বরাবরই থাকে পূজা আয়োজক কমিটির। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে অধিষ্ঠিত দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গাকে নানা উপাচারে আরাধনার মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে কার্পণ্য করেনা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন পূজা আয়োজক কমিটি ব্যতিক্রমভাবে তাদের মণ্ডপ সাজিয়েছেন। দৃষ্টি নন্দন প্রতিমা ও বাহারী এবং চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জায় অভিভূত হবে যে কেউই। তাইতো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও ভিড় জমাচ্ছেন এসব মণ্ডপগুলোতে। ধর্ম-মত নির্বিশেষে সারাদেশই যেন উৎসবের দেশে পরিণত হয়েছে।

দেখে অভ্যস্ত নই এমন জিনিস দেখার আগ্রহ মানুষের চিরায়ত। এমন বিশ্বাস থেকেই পূজার আয়োজক কমিটিগুলো বেশি দর্শনার্থীর আশায় ব্যতিক্রমভাবেই নিজেদের মণ্ডপ প্রস্তুত করেন। আসুন জেনে নেই আমাদের দেশের  এবারের ব্যতিক্রমী সব পূজা মণ্ডপগুলো সম্পর্কে।

পূজাতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের থিমে এবার সেজেছে রাজশাহী নগরীর রানীনগর এলাকার টাইগার সংঘের পূজামণ্ডপ। টাইগার সংঘ প্রত্যেক বছর নতুন বিষয় নিয়ে প্যান্ডেল সাজায়। ২০১৬ সালে ক্রিকেটে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অবদানকে স্মরণ করে বাঘের মুখের আদলে প্যান্ডেল সাজিয়েছিল। ২০১৭ সালে ‘বাহুবলী’ সিনেমার পোস্টারের প্যান্ডেল করেছিল। আর এবার সাজিয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর আদলে।

এই পূজা মণ্ডপে সাজ-সজ্জা ও আয়োজনে কমতি নেই কোনোটির। টাইগার সংঘ ৩৭ বছর ধরে পূজার আয়োজন করছে। প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে সাজানো হয়েছে এবারের এই প্যান্ডেল। বিভিন্ন ডোনার, সিটি কর্পোরেশন, মেয়রের ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে টাকা পেয়েছে অর্থের জোগান পেয়েছেন আয়োজকরা।

নিরাপদ সড়কের দাবি পূজা মণ্ডপেও

‘সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইফ’ শ্লোগানকে কেন্দ্র করেই এবারের শারদীয় দুর্গাপূজার আয়জন করেছে নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি নতুন সার্বজনীন দুর্গাপূজা উৎযাপন কমিটি। নিরাপদ সড়কের বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতেই এম্ন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে আয়োজক কমিটি।  তারা শুধু অনুদানের রশিদ, নিমন্ত্রণ পত্র, প্রসাদের টোকেনের মধ্যেই নিরাপদ সড়কের দাবি সীমাবদ্ধ রাখেনি, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দুই মিনিটের একটি ভিডিও প্রদর্শন করছে এলইডি স্ক্রিনে।

এই পূজামণ্ডপের আরও একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, পুরো মণ্ডপ জুড়েই রয়েছে বাংলা সংস্কৃতির ছোঁয়া। গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, কৃষকের ধান কাঁটা, জেলের মাছ ধরা, পালকিতে নববধূর যাত্রা এগুলোই স্থান পেয়েছে আলোকসজ্জাতে। এমনকি হিন্দি বা ইংরেজি গানের পরিবর্তে এখানে বাজানো হচ্ছে পুরানো দিনের বাংলা গান কিংবা হালের বাংলা গান।

৭০১ প্রতিমা নিয়ে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম মণ্ডপ

খুলনার হাকিমপুরে শিকদার বাড়িতে ৭০১ প্রতিমা নিয়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা পূজা। সর্বাধিক প্রতিমা নিয়ে এটাই এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম মণ্ডপ।  এ দুর্গা পূজাকে ঘিরে বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর শিকদার বাড়িতে করা হয়েছে জমকালো চোখ ধাঁধানো আয়োজন। গত ছয় মাস ধরে ১৫ জন প্রতিমা শিল্পী রাত-দিন পরিশ্রম করে তৈরি করেছেন ৭০১টি প্রতিমা। এসব প্রতিমায় ফুটিয়ে তুলেছেন সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগের কাহিনী।

এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম এ পূজা মণ্ডপ দেখতে ভিড় করছে লাখ লাখ ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থী ও ভক্তদের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। ৪৮টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে মন্দির ও এর আশেপাশের এলাকা। এছাড়াও দর্শকদের নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সংযোগের সুবিধার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল টাওয়ার। 

বাহুবলী তোরণ

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বরিশাল নগরীর ফলপট্টি কালিমাতা ঠাকুরানীর মন্দির কমিটি ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে।  এবার তারা ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করে তৈরি করেছে‘বাহুবলী তোরণ’। বাহুবলী সিনেমার তোরণের আদলে এই তোরণ তৈরি হয়েছে। ৩০ জন শ্রমিক দিন-রাত পরিশ্রম করে এ তোরণ নির্মাণ করছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি। এখানকার দৃষ্টি নন্দন প্রতিমা ও বাহারী এবং চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জায় দেখার জন্য বহু দর্শনার্থী ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিদিনই। 

মিথের ২৫০ মূর্তি দিয়ে সাজানো হচ্ছে মণ্ডপ

ফরিদপুরের ধোপাডাঙ্গা এলাকার সিআইপি যশোদা জীবন দেবনাথের বাড়িতে বৃহৎ পরিসরে প্রায় আড়াইশ প্রতিমা নিয়ে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পৌরাণিক কাহিনী মহাভারত ও রামায়ণের গল্পকথা যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে এ দুর্গোৎসবে। এখানে দেবী দুর্গার প্রতিমা ছাড়াও স্থান পেয়েছে প্রায় আড়াইশ প্রতিমা। আয়োজক কমিটি জানিয়েছেন, দুই মাস ধরে রাত-দিন পরিশ্রম করে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনীকে বাস্তবরূপ দিয়েছেন মৃৎশিল্পীরা।

দেবী দুর্গা, কার্তিক, গণেশসহ প্রায় আড়াইশ প্রতিমা থাকার কারনে এখানকার পূজা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে এবং সার্বিক নিরাপত্তায় এই মণ্ডপে পুলিশ, আনসারসহ মোবাইল টিম কাজ করছে।

৩০১ দেব-দেবী নিয়ে ৬তলা পূজামণ্ডপ

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া জামালপুরের আলোকদিয়া গ্রামে বাঁশের তৈরি ৮টি স্টেজ নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যতিক্রমী পূজামণ্ডপ। এখানে পুকুরের ওপর বাঁশ-কাঠ দিয়ে ৬তলা বিশিষ্ট ৮টি স্টেজে ৩০১টি দেব-দেবী প্রদর্শিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা পরিবার পরিজন নিয়ে মণ্ডপটি দর্শনে ভিড় জমাচ্ছেন।

দুই মাস ধরে ২০ জন মিস্ত্রী ৬তলা বিশিষ্ট বাঁশের তৈরি স্টেজটি তৈরির কাজ করছেন এবং ৭ জন কারিগর ৩ মাস ধরে দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন বলেছেন আয়োজক কমিটি।  এ মণ্ডপে রামায়ন-মহাভারতের পৌরানিক কাহিনী অবলম্বনে ৩ শতাধিক দেব-দেবীর প্রদর্শন ও ধর্মীয় বিভিন্ন কাহিনীর সমন্ময়ে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭