কালার ইনসাইড

প্রত্যন্ত গ্রামেও বেজে ওঠে আইয়ুব বাচ্চু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/10/2018


Thumbnail

বাংলাদেশে রক সংগীতের পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। মানুষের কাছে এধরনের সংগীত ছিল উচ্চবিত্ত পরিবারের বখে যাওয়া তরুণদের চিৎকার-চেঁচামেচি। সেই অবস্থা থেকে রক সংগীত পৌঁছে গেছে শহর থেকে গ্রামে। আর এই কঠিন কাজটুকুর গুরু দায়িত্ব সামলেছেন যেকজন সংগীতশিল্পী, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন আইয়ুব বাচ্চু। কিন্তু কেমন ছিল তাঁর পথচলা?

বনেদি পরিবার থেকে উঠে এসে সাহেবি ঢঙ্গেই গান-বাজনা শুরু করেন আইয়ুব বাচ্চু তথা এবি। সে সময় বাংলা গানের প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যান্ড না থাকায়, ব্যান্ডগুলো ইংরেজি গান দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছে। ব্যক্তিগত চর্চা এমনকি ক্লাব, রেস্তোরাঁয় ইংরেজি গানই ছিল ব্যান্ড শিল্পীদের সম্বল। এবিও তার ব্যাতিক্রম ছিলেন না। ১৯৭৮ সালে তিনি যখন ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে কাজ করা শুরু করেন, তখন ইংরেজি গানের জন্য ফিলিংসের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। তবে সেটা নগরির বিভিন্ন ক্লাব, রেস্তোরাঁয়। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে বাংলা গান নিয়ে কাজ করা শুরু করেন এবি। বাংলা ভাষায় তাঁর গাওয়া প্রথম গান ছিল ‘হারানো বিকেলের গান’। ১৯৮০ সালে জড়িয়ে পড়েন তখনকার আরেক জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘সোলস’ এর সঙ্গে। এই ব্যান্ড থেকে ১৯৮৬ সালে প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’। মূলত ‘সোলস’ থেকেই পশ্চিমা যন্ত্রানুসঙ্গে বাংলা গান নিয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখতে থাকেন এবি। এরপর ‘ময়না’ শিরোনামে দ্বিতীয় একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন। একক শিল্পী হিসেবে অ্যালবাম প্রকাশ করলেও ব্যান্ড নিয়েই এগিয়ে যেতে থাকেন এবি। ১৯৯১ সালে গঠন করেন লিজেন্ডারি ব্যান্ড ‘এল আর বি’।

সফট ব্যালেড, মেলো রক, হার্ড রকের ধাঁচে গান করতে থাকে ‘এল আর বি’। সে সময় এই ব্যান্ডের গানেই গিটারের আধিক্য বেশি দেখা যেত। গানে সুন্দর মেলডি থাকায় খুব সহজে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যেতে থাকে এল আর বি’র গান। ব্যান্ড ছাপিয়ে একক সংগীতশিল্পী হিসেবেও শ্রোতাদের কাছে এবি’র গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। ১৯৯৫ সালে বের হয় তাঁর তুমুল জনপ্রিয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। আধুনিক গানের শ্রোতাদের কাছে এই অ্যালাবামের গানগুলো আজও জীবন্ত।

জনপ্রিয়তা এবিকে নিয়ে যায় চলচ্চিত্রের দিকে। ১৯৯৬ সালে মান্না ও মৌসুমি অভিনীত ‘লুটতরাজ’ ছবিতে প্লেব্যাক করেন এবি। গানের শিরোনাম ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’। গানটি এতোটাই জনপ্রিয়তা পায় যে মফস্বলেও ছড়িয়ে যায় আইয়ুব বাচ্চুর নাম। সিনেমায় প্লেব্যাক তাঁকে শহরের বাইরে পরিচিত করে তুলতে অনেকটাই সহায়তা করে। এরপর একে বহু ছবিতে গান করেন এবি। একক ও ব্যান্ড ক্যারিয়ার দুটোই সমান তালে চলতে থাকে তাঁর। এক সময় ব্যান্ডের মতো কিছুটা বিমূর্ত কথা ও সুর ছেড়ে সর্বজন বোধগম্য কথা ও চিত্তাকর্ষক সুর ব্যবহার করা শুরু করেন গানে। ঈর্ষনীয় সাফল্যও পেয়ে যান। ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘পত্রমিতা বন্ধু তোমায় বেসেছি যে ভাল’, ‘এক আকাশের তারা তুই একা গুনিস নে’, ‘আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে’ এমন গানগুলোই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

এমন গান ছড়িয়ে যাওয়ার পর অনেকেই তাঁকে বস্তাপঁচা সস্তা গানের শিল্পী হিসেবে দুয়োধ্বনি দিতে থাকে। কিন্তু গানগুলো যে অসংখ্য মানুষের বিনোদনের খোরাক জোগানর পাশাপাশি রকের পরিচয়ও বহন করেছে, একথাই বা ক’জন ভেবেছে?

বাংলা ইনসাইডার/ এইচপি               



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭