ইনসাইড আর্টিকেল

কেমন দেশ জিম্বাবুয়ে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/10/2018


Thumbnail

আজ দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশের মুখোমুখি হচ্ছে সফরকারী দেশ জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ক্রিকেট বিশ্ব। ক্রিকেট দল হিসেবে জিম্বাবুয়েকে জানলেও, দেশ হিসেবে জিম্বাবুয়ে সম্পর্কে আমরা জানি কি? জানলেও কতটুকু? আজ আমরা জানাবো ‘জিম্বাবুয়ে’ দেশটি কেমন:

আফ্রিকার দক্ষিণাংশে অবস্থিত দেশ জিম্বাবুয়ে। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত ১৪শ শতকে পাথরে নির্মিত মহান জিম্বাবুয়ে শহরের নামে দেশটির নামকরণ করা হয়েছে। জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারে। দেশটিতে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার ৩৬২ জন। জিম্বাবুয়েতে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরাই সংখ্যাগরিষ্ট।

মূলত: ইংরেজি ভাষাই জিম্বাবুয়ের সরকারি ভাষা। এছাড়া এখানে আরও প্রায় ২০টি স্থানীয় ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে ‘শোনা’ ভাষাতে জিম্বাবুয়ের অর্ধেকেরও বেশি লোক কথা বলে। ন্‌দেবেলে ভাষা দেশটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় ভাষা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়ার পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্লাটিনাম উৎপাদনকারী দেশ এটি।

জিম্বাবুয়ের উত্তর পশ্চিমাংশে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত অবস্থিত। জাম্বেজি নদীর উপর অবস্থিত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সাথে তুলনা করলে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত প্রায় দ্বিগুণ প্রশস্ত ও দ্বিগুণ গভীর। ইউনেস্কো ১৯৮৯ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে জলপ্রপাতটিকে তালিকাভূক্ত করেছে। এটি বহিঃবিশ্বের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের কাছেই অবস্থিত হুয়েঞ্জ ন্যাশনাল পার্ক। বিশাল এ পার্কের আয়তন ১৪,৬০০ বর্গ কিলোমিটার। পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন লেক, বিরল উদ্ভিদ, আফ্রিকান বন্য প্রাণী ও পাখি। হুয়েঞ্জ ন্যাশনাল পার্কে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি হাতি রয়েছে!

এছাড়া আশেপাশের বনগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির অ্যান্টিলোপ, হাতি, জিরাফ, জেব্রা, সিংহ, চিতা ইত্যাদি প্রাণীর বসবাস। পাহাড়ের চূড়ায় বাজপাখি, ঈগল আবাস গড়েছে।



অতীতে জিম্বাবুয়ে, মুতাপা ও রোজওয়ি সাম্রাজ্য নিয়ে বৃহত্তর আফ্রিকান রাজত্বের কেন্দ্র ছিল জিম্বাবুয়ে। ১৮০০-এর দশক থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনে দক্ষিণ রোডেশিয়া নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬৫ সালে এখানকার শ্বেতাঙ্গ অধিবাসীরা রোডেশিয়াকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করলেও যুক্তরাজ্য এটিকে স্বীকৃতি দেয়নি।

১৯৭৯ সালে ব্রিটেনের সহায়তায় অস্ত্রবিরতি চুক্তি ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার পর ১৯৮০ সালের এপ্রিলে গঠিত হয় স্বাধীন দ্য রিপাবলিক অব জিম্বাবুয়ে। তখন থেকেই দেশটির শাসনভারে ছিলেন রবার্ট মুগাবে।

শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা রবার্ট মুগাবে। ১৯৮০ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আরোহণের পর প্রথম ৭ বছর প্রধানমন্ত্রী ও পরবর্তীতে দেশটির রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। ৩৭ বছরের এই শাসনের পর গত বছর ২১ নভেম্বর রবার্ট মুগাবে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বলা হয়, সেনাবাহিনী মুগাবেকে কার্যত গৃহবন্দী করে রেখেছিল। এরপর দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এমারসন নানগাগওয়া।



অনিয়ম-দুর্নীতি ও সাদা-কালোদের দ্বন্দ্বে ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে জিম্বাবুয়ে। প্রায় ১৮ বছর ধরে দেশটির অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। দাতা সংস্থাগুলো দেশটিকে এখন কোনো ঋণ দিতে চাচ্ছে না। কোনো নিয়ম না মেনে সরকার নিজস্ব চাহিদা মেটাতে ইচ্ছামতো মুদ্রা ছাপিয়ে দেশটিকে ঋণভারে জর্জরিত করে ফেলেছে। ফলে এখন নিজেদের মুদ্রা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নিজ দেশে চলছে ডলার, পাউন্ড ও ইউরোর মতো ভিনদেশি মুদ্রা। গত ১৮ বছরের বেশিরভাগ সময়ে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে সর্বোচ্চ ১৫৭ শতাংশে উঠেছে। এর ফলে প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে শূন্যের নিচে। মুদ্রার মান ক্ষয় হয়ে অর্থশূন্য হয়ে গেছে। জীবনযাত্রার মান পড়ে গেছে।

নগদ অর্থের ঘাটতির কারণে ধীরে ধীরে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। এ ছাড়া কৃষিজমি দখলের অনুমোদন দেওয়ার পর উৎপাদন কমতে থাকে ব্যাপকভাবে।



দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামে জিম্বাবুয়ে। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে আপসেট ঘটায় জিম্বাবুয়ে। এরপর থেকেই ক্রিকেট বিশ্বে জিম্বাবুয়ে নামটি পরিচিত।

বাংলা ইনসাইডার/জেডআই/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭