ইনসাইড পলিটিক্স

রব: অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/10/2018


Thumbnail

বাংলাদেশে ভ্রষ্টাচারের রাজনীতি, পদস্থলনের রাজনীতি আর ডিগবাজির রাজনীতির পুরোধা পুরুষ হলেন হালের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ. স. ম. আব্দুর রব। বর্তমানে যদিও তিনি অনেক নীতিকথা বলেন, সবাইকে গণতন্ত্রের শিক্ষা দিয়ে বেড়ান, কিন্তু রবের অতীত কার্যকলাপের দিকে তাকালে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়।

নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে যখন লাখো শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করতে সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে শপথ নেওয়ার কথা, এমন সময় আ. স. ম. আব্দুর রব বঙ্গবন্ধুর পাশ থেকে সরে গিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নতুন দল জাসদ গঠন করলেন। আর আমরা সবাই জানি, জাসদই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যার রাজনৈতিক পটভূমি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

আ. স. ম. আব্দুর রবের রাজনীতি ছিল এমনই। পদস্থলন ও ডিগবাজি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। আজকাল গণতন্ত্র, গণতন্ত্র বলে গলা ফাঁটিয়ে ফেলা আ. স. ম. আব্দুর রবই বাংলাদেশের প্রথম গৃহপালিত দলের নেতা হিসেবে স্বীকৃত। আজকে তিনি দশম জাতীয় সংসদকে গালাগালি করেন, গণতন্ত্রের সবক শেখান। অথচ স্বৈরাচারী এরশাদের অধীনে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে যখন কোনো দল অংশগ্রহণ করেনি, তখন তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি নির্বাচনে গিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ইতিহাসে ’৮৮ এর নির্বাচনটিই সবচেয়ে কলঙ্কিত নির্বাচিত। অনেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কলঙ্কিত নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করতে চান। কিন্তু ’১৪ এর নির্বাচনে কোনো কারচুপি হয়নি, প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৮ সালের নির্বাচন ছিল কারচুপির নির্বাচন। ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা হওয়ায় সে সময় জাতীয় শহীদ মিনারে আ. স. ম. অব্দুর রব নিষিদ্ধ হয়েছিল। ’৮৮ থেকে ’৯০ এর রাজনীতির গতিবিধির দিকে যদি কেউ লক্ষ্য করে তাহলে সহজেই বুঝতে পারবে আ. স. ম. আব্দুর রব রাজনীতিতে এক জোকারে পরিণত হয়েছিলেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পর ’৯০ এ যখন স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন হলো, তখন শুধু সরকারি দলের সদস্যরাই পালায়নি, জনগণের রুদ্ররোষ থেকে পালিয়েছিলেন বিরোধী দলের নেতা আ. স. ম. আব্দুর রবও।

’৯৬ এর নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আ. স. ম. আব্দুর রবকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। ঐক্যমতের রাজনীতিতে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শেখ হাসিনার প্রত্যাশা পূরণ করেননি রব। তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আ. স. ম. আব্দুর রবের বিরুদ্ধে উঠেছে অভিযোগের পর অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে হাস্যকর অভিযোগ ছিল, চিড়িয়াখানায় বাঘদের জন্য যে মাংস বরাদ্দ থাকতো, সেই মাংস তিনি নিজের বাসায় নিয়ে যেতেন। আ. স. ম. আব্দুর রব, যিনি পশুর খাদ্য লুটপাট করতে পারেন, তিনি যে মানুষের জন্য কতটা উপকারী হবেন সে কথা বলাই বাহুল্য।

আজীবন দুর্নীতি, পদস্থলনের উদাহরণ সৃষ্টি করা আ. স. ম. আব্দুর রব এখন নতুন বেশ ধরেছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে সবাইকে গণতন্ত্রের সবকও দিচ্ছেন তিনি। বারবার রূপ বদলানো রব ভবিষ্যতে আবার কোন রূপে আসবেন সেটাই এখন দেখার বিষয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭