ইনসাইড আর্টিকেল

কোন দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেমন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/10/2018


Thumbnail

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি বর্তমান বিশ্বের বহুল আলোচিত একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। বলা হচ্ছে, বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই মুক্ত সাংবাদিকতার সুযোগ কমে আসছে। সারা বিশ্বেই গণমাধ্যমগুলো কম-বেশি বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন বন্ধে একের পর প্রতিবন্ধকতা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সাংবাদিকদের ওপর। আর শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কিছু লেখার ফলাফল যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি।

পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গণমাধ্যমের কোন স্বাধীনতা নেই। চীনসহ অন্যান্য কম্যুনিস্টপন্থী দেশগুলোর ক্ষেত্রেও রয়েছে অনেক অভিযোগ। এমনকি মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতীক ইউরোপের দেশগুলোতেও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেমন সেটাই এখানে তুলে ধরা হলোঃ

যুক্তরাষ্ট্র

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীন এমনটাই ধারণা করে থাকেন বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে ভিন্ন চিত্রই উঠে এসেছে। গণমাধ্যমবিষয়ক আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম-২০১৮ সূচক অনুযায়ী, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার দিক থেকে বিশ্বে যুক্ররাষ্ট্রের অবস্থান ৪৫। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত কয়েক বছরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে আক্রমণ চালিয়েছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে দেশের শত্রু হিসেবেও অভিহিত করেছেন। নিজের বিরুদ্ধে কোন সংবাদ গেলে তিনি নিয়মিতভাবে সেগুলোকে ‘জাল খবর বলে মন্তব্য করে যাচ্ছেন। স্পর্শকাতর কোন বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য বিদেশি সাংবাদিকরা দেশটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধার  সম্মুখীন হয় বলে জানিয়েছে আরএসএফ।

যুক্তরাজ্য

আরএসএফ’র সর্বশেষ সূচকে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ৪০। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য জাতীয় নিরাপত্তার নামে নিয়মিতভাবেই সংবাদপত্রের ওপর হস্তক্ষেপ করে আসছে। দেশটির সরকার ও গোয়ান্দা সংস্থাগুলো সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি চালিয়ে থাকে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। প্রাধান দুই দল কনজারভেটিভ এবং লেবার পার্টি ২০১৭ সালে নির্বাচনি প্রচারণার সময় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করেছিল। দেশটির বিভিন্ন ক্ষেত্রেই এ অবস্থা বিরাজ করছে।

কানাডা

ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম-২০১৮ অনুযায়ী, মুক্ত গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে কানাডার অবস্থান ১৮। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সবসময়ই মুক্ত গণমাধ্যমের কথা বলে থাকেন। তবে নিরাপত্তা ইস্যুতে তাঁর গৃহীত কিছু নীতি সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছে আরএসএফ। 

চীন

চীন বরাবরই গণমাধ্যমকে কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে। দেশটির সরকারি মিডিয়া সরকারের নির্দেশেই চলে। অন্যদিকে হাতেগোনা যে কয়েকটি বেসরকারি মিডিয়া রয়েছে, সেগুলোও ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে কঠোর শাস্তি পেতে হয় সেখানে। বর্তমানে দেশটিতে অন্তত ৫০ জন সাংবাদিক বা ব্লগার আটক অবস্থায় রয়েছে। সরকার বিরোধী হিসেবে পরিচিত নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী লিউ জিয়াওবো এবং ইয়াং টঙ্গান নামের একজন ব্লগার গত বছর আটক অবস্থায় মারা যান। তাঁরা দুজনই ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন বলে জানা যায়। তবে সরকারি বাহিনী আটক করে রাখায় বিনা চিকিৎসাতেই মারা যান তাঁরা। আরএসএফ’র সর্বশেষ সূচকে দেশটির অবস্থান ১৭৬।

জাপান

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি জাপানে সাধারণত মুক্ত গণমাধ্যমের নীতিগুলোকে অনুসরণ করা হয়। তবে নিরাপত্তার কারণে দেশটিতে সাংবাদিকদের ওপর কঠোর নজরদারি করা হয়। এছাড়া বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংবাদ সংগ্রহ করতেও বাধার মুখে পড়ছে সাংবাদিকরা। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম-২০১৮ অনুযায়ী, মুক্ত গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে জাপানের অবস্থান ৬৭। দেশটির কয়েকটি সাংবাদিক সংগঠন অভিযোগ করেছে, ২০১২ সালে শিনজো অ্যাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গণমাধ্যমের ওপর বেশ কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আইনবহির্ভুউত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে ১০ বছরের শাস্তির বিধানও করা হয়েছে।

সিঙ্গাপুর

আরএসএফ’র সূচকে সিঙ্গাপুরের অবস্থান ১৫১। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে সরকার বিরোধী সংবাদের ক্ষেত্রে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায় দেশটির সরকার। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এমনকি তাদের দেশ থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্যও করা হয়। সিঙ্গাপুরের প্রশাসন যেকনো সংবাদ সেন্সর করারও ক্ষমতা রাখে। দেশটিতে প্রচলিত কয়েকটি আইনে সাংবাদিকদের ২১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডেরও বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত একটি আইনে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গণমাধ্যমকর্মীদের বাড়ি এবং ব্যক্তিগত ইলেকট্রনিক ডিভাইস তল্লাশির বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭