ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

লুক্সেমবার্গ নির্বাচন: ভোটাধিকার বঞ্চিত অর্ধেক জনগোষ্ঠী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/10/2018


Thumbnail

সম্প্রতি ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু সেখানকার ৪৮ শতাংশ মানুষই এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, দেশটির ৭৫ বছরের কম বয়সী অধিবাসীদের ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু অধিবাসীদের মধ্যে যারা দেশটির নাগরিক নন, তারা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে না। অবশ্য এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রায় সব দেশেই একই নিয়ম প্রচলিত। তবে পৃথিবীর অন্য যেকোন দেশের থেকে লুক্সেমবার্গ একটু ভিন্ন।  

মাইগ্রান্ট ইন্টিগ্রেশন পলিসি ইনডেক্স অনুযায়ী, লুক্সেমবার্গ উন্নত বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের অধিকাংশই জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। জার্মানির ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন অধিবাসীর মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ দেশটির জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে না। কিন্তু লুক্সেমবার্গে এই হার কয়েকগুণ বেশি। কারণ দেশটির জনসংখ্যার একটি বড় অংশই ইউরোপীয় অথবা অন্য কোনো অঞ্চল থেকে আগত।

লুক্সেমবার্গে বসবাসকারী মানুষের বড় একটি অংশ ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে সেখানে গণতন্ত্রের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। দেশটিতে ‘গণতন্ত্রের ঘাটতি’ সংক্রান্ত এই বিতর্ক ১৯৮০ সাল থেকেই চলে আসছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।

২০১৩ সালে ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল পিপল’স পার্টির (সিএসভি) পতনের পর দ্বায়িত্ব নেওয়া জোট সরকার বিদেশি অধিবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়ার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। তারা প্রস্তাব করেছিল, ১০ বছর ধরে লুক্সেমবার্গে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিক, যারা নিজ দেশ অথবা ইউরোপের কোন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তারা ভোটাধিকার পাবেন। এ বিষয়ে জনগণের রায় জানতে গণভোট ডেকেছিল সরকার।

কোন দেশে বিদেশি নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রদানের ঘটনা বিরল। তবে এর নজির রয়েছে। নিউজিল্যান্ড এক্ষেত্রে সবচেয়ে উদার। সেখানে এক বছর ধরে স্থায়ীভাবে বাস করছেন এমন অধিবাসীরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন।  চিলিতে পাঁচ বছর স্থায়ীভাবে বসবাসকারীরা এই সুযোগ পেয়ে থাকেন। মালাউয়িতে সাত এবং উরুগুয়েতে আট বছর স্থায়ীভাবে বসবাসের পর বিদেশি নাগরিকরা ভোটাধিকার পেয়ে থাকেন। তবে লুক্সেমবার্গে ২০১৫ সালের গনভোটে ভোটাধিকার সংস্কারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল জনগণ। ৭৮ শতাংশ ভোটারই ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে রায় দিয়েছিল। বলাই বাহুল্য, লুক্সেমবার্গের নাগরিকরাই শুধু গণভোটে অংশ নিতে পেরেছিলেন। ওই ভোটের আগে ডানপন্থীরা একটি বিতর্ক উস্কে দিয়েছিল। তা হলো, বিদেশিদের ভোটাধিকার দেওয়া হলে, লুক্সেমবার্গের নাগরিকদের ভাষা এবং পরিচয় হুমকির মুখে পড়বে। নিজেদের ভাষা ও পরিচিতি হারাবার ভয়েই হয়তো লুক্সেমবার্গিশরা বিদেশিদের ভোটাধিকার আটকে দিয়েছিল।

২০১৫ সালের ওই গণভোটের রায় এবারের জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব ফেলেছে। প্রচারাভিযানে দলগুলো দেশের নিরাপত্তা এবং ঐতিহ্য নিয়ে অনেক বক্তব্য দিলেও গণতান্ত্রিক ঘাটতি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন জোট সরকার আবারও সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনের সময় নেতারা নিশ্চুপ থাকলেও সরকারের একজন মুখপাত্র স্বীকার করেছেন, গণতন্ত্রের ঘাটতি বড় একটি সমস্যা। তিনি বলেছেন, ‘সরকার এ বিষয়ে আরও পরীক্ষা নীরিক্ষা চালাবে এবং সবচেয়ে ভালো সমাধানটি খুঁজে বের করবে।’ 

বিশ্লেষকরা বলছেন, গনতন্ত্র ঘাটতি কাটাতে লুক্সেমবার্গ সরকারের খুব দ্রুতই  পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কয়েক বছরের মধ্যেই দেশটির ভোটাররা সংখ্যালঘু অংশে পরিণত হবে।

সূত্র: দি ইকোনমিস্ট

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭