ইনসাইড থট

আজ থেকে ক্ষণগণনা শুরু: নির্বাচনের সম্ভাবনা কতটুকু?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/10/2018


Thumbnail

শুরু হয়ে গেলো ক্ষণগণনা। রাজনীতির মাঠ গরম। জোট গঠন, ভাঙনে ভোটের হাওয়া উত্তপ্ত হচ্ছে ক্রমশই। কিন্তু ভোট হবে কি? সেই প্রশ্নই বেশি শুনতে হলো পূজার সময় নিজের জেলায় গাইবান্ধা গিয়ে। রাজনীতি সচেতনদের সেই উদ্বেগই বেশি, সময়মত হবে কি না জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ প্রশ্ন বারবার করেন গুলশান-১ এর এক দোকানদার। সকল টিভি চ্যানেলের নিয়মিত দর্শক সে। দেখা পেলেই হাজারো প্রশ্ন। ভোট হবেতো , ঐক্যফ্রন্টের কোনো দাবিই কি সরকার মানবে না ? খালেদা জিয়ার ডাবল সাজা হলে, তাঁকে জেলে রেখে বিএনপি কেন ভোটে আসবে? প্রশ্ন শুনেই পাশের দোকানদারও পাল্টা বলেন, আরে বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন দুজনই দণ্ডিত, তাঁরা তো ভোটেই প্রার্থী হতে পারবেন না ‘ চায়ের টেবিলও এক বড় টকশোর মঞ্চ। তাই প্রশ্ন ওঠে, আরে সরকার এত উন্নয়ন করলে,পদ্মা সেতু আর বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান করল, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট দিলে অসুবিধা কি ?’ আরে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপি থেকে দুজনকে টেকনোক্রাট কোটায় মন্ত্রী করলেইতো ল্যাঠা চুকে যায়।’ হায় কত চিন্তা করে সাধারণ মানুষ?

আর এই যে এতশত প্রশ্ন, তার মধ্যেইতো শুরু হয়ে গেলো ভোটের ক্ষণগণনা।সংবিধানের বর্তমান বিধান অনুসারে ২৯ অক্টোবর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে হতে হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে গঠিত সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২৯ জানুয়ারি। সেদিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদ বর্তমান সংসদের। আর সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩(ক) ধারায় বলা আছে, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববতী নব্বই দিনের মধ্যে‘ নির্বাচন হতে হবে। সেজন্য ২৯ অক্টোবর-২৯ জানুয়ারির তারিখ সামনে এসেছে।

নির্বাচন কমিশন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতি থেকে বোঝা যাচ্ছে সহসাই ঘোষিত হতে পারে নির্বাচনের তফসিল। নির্বাচন কমিশন আগামী ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবেন বলে এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে। এই সাক্ষাতের পেছনে তফসিল ঘোষণার বিষয় রয়েছে বলেই সবাই ধারণা করছেন। দেশে এখন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৩৯টি । কিন্তু কমপক্ষে ২০০ রাজনৈতিক দল , যাদের বেশিরভাগই এক/দুই নেতা এবং লেটারহেড ভিত্তিক। আবার জোটও নাকি আছে বেশ কয়েকটি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল, ১৪ দল আর জাতীয় পার্টি মিলে মহাজোট, বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট, বিএনপি, গণফেরাম, জেএসডি, ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সবাই চিনে। আছে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে ৫৮ দলের সম্মিলিত জাতীয় জোট। লেটারহেডে ছাপানো ১৪টি দল নিয়ে আরও আছে ইসলামিক ডেমোক্রেটি এলায়েন্স, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান এর নেতা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সদস্য পরিচিত রাজনীতিক ব্যারিস্টার নাজমূল হুদাও একটি জোটের নেতা। তার দাবি এই জোটে আছে ৩৪টি রাজনৈতিক দল।

দলের শেষ নাই যদিও তাদের ভোট কত, সে প্রশ্নের জবাব মেলে না এসব দলের নেতাদের কাছ থেকে। জোট করতে করতে ঐক্যফ্রন্ট থেকে পিছলে গেছে বিকল্পধারা। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এখনো একলা চলো নীতিতেই আছেন। আবার চমক দিয়ে বিকল্পধারায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির সাবেক নেতা শমসের মোবিন চেৌধুরী, জাতীয় পার্টি থেকে গোলাম সারোয়ার মিলন ও নাজিমউদ্দিন আল আজাদ। সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল,খলিলুর রহমানসহ আরও কয়েকজন সংস্কারপন্থীকে দলে ফিরিয়ে এনেছে বিএনপি। এসব কিছুই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে।

বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে যে সাত দফা দাবি তুলে ধারা হয়েছে,তার অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনের আগেই সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া, দুনীর্তির মামলায় দন্ডিত বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এবং নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা। এসব দাবির কোনটিই যদি ক্ষমতাসীনরা না মানে তাহলে কি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিবে ? এ প্রশ্নের সরাসরি সঠিক জবাব এ মুহূর্তে হয়তো বিএনপি নেতাদের কাছেও নাই। বা তারা এখনি স্পষ্ট করে বলবে না। আবার যদি আওয়ামী লীগের যেসব নেতা বলছেন সাতদফার সবই অসংবিধানিক,তার কোনটিই মানা হবে না , তাদের কাছে যদি প্রশ্ন করি তাহলে বিএনপি ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠন কি সম্ভব ? তারাও চট করে সুনির্দিষ্ট জবাব দিবেন বলে ভরসা পাই না।

এমন পরিস্থিতিতেই আজ থেকে ক্ষণগণনা শুরু হলো। আগামী ৯০ দিন  অর্থাৎ তিনমাস উত্তাল থাকবে দেশের রাজনীতি। এরই মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও একটি দুনীর্তি মামলার রায় অপেক্ষমান আছে। আর আগামী ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সাক্ষাতের পর তফসিল ঘোষণার বিষয়টি আরও একটু পরিষ্কার হবে।

লেখক: সাংবাদিক

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭