ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনকালীন সংলাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 29/10/2018


Thumbnail

আমাদের দেশে বিয়ের আগে আছে কনে দেখা পর্ব। পরে আলাপ আলোচনা শেষে বিয়ে। তেমন অবস্থা দেখা যায় জাতীয় নির্বাচনেও। নির্বাচনের সময় এলেই এর আগে আসে কনে দেখা ও আলাপ আলোচনা পর্বের মতো নির্বাচনকালীন সংলাপ। গত কয়েকটি নির্বাচন খেয়াল করলে দেখা যাবে সংলাপ যেন নির্বাচনের পূর্বশর্তের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন আসলেই সংলাপ সংলাপ খেলা। এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক পূর্বমুহূর্তে ফিরে এসেছে সেই সংলাপ। নবগঠিত ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ নিয়ে চিঠির জবাবে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়ে দিলেন অবশ্যই সংলাপ হবে। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির নেতাদের সংলাপ শিগগিরই অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। এমন সময়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে সংলাপের বিষয়টি নিয়ে একটু পিছনে ফেরা দেখা যাক।

৯১-এ নির্বাচন ছিল দীর্ঘ দিনের স্বৈরচার লে. জে. (অব.) হু. মু. এরশাদকে হটানোর পর। কিন্তু এরপরও নির্বাচনের আগে সংলাপ বসেন তৎকালীন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গুরুত্বের বিচারে কম হলেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে এভাবেই নির্বাচন পূর্ববর্তী রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের ধারার সূচনা হয়।

১৯৯৬ সালে সংসদের মেয়াদ শেষ হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে গড়িমাসি শুরু করে বিএনপি। দেশের শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। বেগম জিয়া ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন নিয়ে কলঙ্কিত করেন দেশের গণতন্ত্রকে। রাজনৈতিক অস্থির ওই সময়েও চলে নির্বাচনী সংলাপ। নির্বাচন হয়। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্যে দিয়েই শেষ হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা।

পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০১ সালে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে প্রথম স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়িয়ে নির্বাচন দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য এর চড়া মূল্য দিতে হয় আওয়ামী লীগকেই। ওই সময়ও নির্বাচনকালীন সংলাপ হয়েছে। রাজনৈতিক বিভিন্ন সম্পর্ক নিয়েই ঘুরপাক খায় সেসব সংলাপ।

নির্বাচনকালীন সংলাপ গুরুত্ব পেল ২০০৬ সালে। নির্বাচন নিয়ে তালবাহানার কারণে বিএনপি সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে একের পর এক সংলাপ হলো বিএনপির মহাসচিব মান্নান ভু্ঁইয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের মধ্যে। কিন্তু এতসব সংলাপ নাটকেও কোনো সমাধান আসেনি। সংলাপের ফলে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতাও হয়নি।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও সংলাপের দাবি ওঠে বিভিন্নমহল থেকে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে সংলাপের আয়োজন করা হয়। তবে সংলাপ কোনো সমাধান আনতে পারেনি। প্রশ্নবিদ্ধ সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আবার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

আবার এসে পড়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ঘোষিত হবে নির্বাচনের তফসিল এবং সেই অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন। অন্যবারের মতো এবারও সংলাপের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মহল ও বিদেশি কূটনীতিকরা সংলাপের দাবি জানিয়ে আসছেন। সংলাপের ইচ্ছা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যেই হোক গতকাল বিকেলে নবগঠিত ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের পক্ষে থেকে সরকারের কাছে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়। বর্তমান রাজনৈতিক সময়ের সংলাপ না হওয়ার কথাই ভেবেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবাইকে অবাক করে দিয়ে সংলাপে সম্মতি দিয়েছেন। শিগগিরই হতে পারে এই সংলাপ।

রাজনৈতিক সচেতনদের মতে, বাংলাদেশের নির্বাচন এলেই সংলাপ যেমন অবধারিত, তেমনি এসব সংলাপের ফলাফলও। এখনো পর্যন্ত বড় কোনো সমাধান আসেনি নির্বাচনকালীন সংলাপে। আর রাজনৈতিক সংলাপেও জনগণের সংশয়, ভীতি কতোটা দূর হবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭