ইনসাইড থট

গণতন্ত্র কেন হুমকিতে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/10/2018


Thumbnail

কট্টর ডানপন্থী, অস্ত্রপ্রেমী এবং প্রচারপ্রিয় জাইর বোলসোনারো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। বর্তমান বিশ্বের বড় কয়েকটি গণতান্ত্রিক দেশের মতো ব্রাজিলেও কট্টরপন্থার উত্থানের বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগজনক। এটা আমাদেরকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করছে যে, গণতন্ত্র কেন হুমকিতে?

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যেমন ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে ঠিক তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে। এটা মানুষকে দুর্বল, উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ করে তুলছে। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক সংকটও বাড়িয়ে তুলেছে। আমরা কীভাবে এই সংকট মোকাবেলা করবো তা স্পষ্ট নয়।

বর্তমানে আমরা একটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে রয়েছি। দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, বিশেষ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই আমাদের অর্থনীতি ও সমাজের গতিধারা নির্ধারন করে দিচ্ছে। এই প্রযুক্তিগুলো নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন এনেছে। পাশাপাশি গুরুতর অনেক চ্যালেঞ্জের সামনেও আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। প্রযুক্তির কারণেই মানুষ এমন কিছু পরিস্থিতির সংস্পর্শে আসছে যা তাদের আক্রমনাত্মক করে তুলছে।

সাম্প্রতিককালে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে জিডিপিতে মজুরির আপেক্ষিক অংশ হ্রাস পেয়েছে। সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য বেড়েই চলেছে। ফলে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করছে।

আগে মানুষ কারখানার কাজ করেই তার যাবতীয় খরচ মেটাতে পারত। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। আধুনিক যন্ত্রপাতি তাদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে। কোম্পানিগুলো মানবিক শাখার বদলে বিজ্ঞান শাখা থেকে কর্মী নিয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন মানুষের হতাশা বাড়াচ্ছে। বিষয়টি এমন যে, একজন বহু বছর সাধনা করে বডি বিল্ডার হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করল, কিন্তু শেষে এসে দেখল শুধুমাত্র দাবারুদেরই পুরষ্কৃত করা হবে। বিষয়টি আসলেই অন্যায় এবং হতাশাজনক। প্রকৃতপক্ষে এই অন্যায্য অবস্থা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করেনি। এই পরিবর্তনগুলো প্রযুক্তির উন্নয়নের স্বাভাবিক পথ ধরেই সম্পাদিত হয়েছে। বলা চলে, এটা প্রকৃতির অন্যায়।

প্রযুক্তির বিকাশ শিক্ষা ও সুযোগের ক্ষেত্রেও বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। ধনী পরিবারের একটি শিশু ভালো স্কুলে পড়তে পারছে। একই সঙ্গে উচ্চ শিক্ষারও সুযোগ হচ্ছে তার। ফলে ভালো জায়গায় বেশি বেতনে চাকরি পাচ্ছে সে। নিজের ইচ্ছামতো ক্যারিয়ারও বেছে নিতে পারছে। অন্যদিকে তুলনামূলক অভাবী পরিবারের সন্তান সব সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যুদ্ধ করে নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে হচ্ছে তাঁকে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতিই তাঁকে আক্রমণাত্মক করে তুলছে। সমাজের সব ক্ষেত্রে পার্থক্যের কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে সে।

সমাজের সার্বিকক্ষেত্রে অন্যায় ও বৈষম্যমূলক পরিস্থিতির কারণে মানুষ ট্রাম্প কিংবা বোলসোনারোর মতো নেতাদের বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে, যারা তাদের পরিবর্তনের কথা শোনাচ্ছে। বিতর্কিত নেতাদের বেছে নেওয়ার আগে জীবন- জীবিকা ছাড়া আর বেশি কিছু ভাবতে পারছে না সাধারণ জনগণ। 

আমরা এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে রয়েছি, যখন রাজনৈতিক অর্থনীতি নতুনভাবে চিন্তা করা দরকার। ডাইনোসরের আত্ম-বিশ্লেষণের ক্ষমতা ছিল না। এ কারণে তারা ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমরাও সভ্যতার ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমরা পৃথিবীর প্রথম প্রজাতি যাদের আত্ম-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রয়েছে। এ কারণে আমাদের চারপাশে অসংগতি বা টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হলে আমরা সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারি। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যে অস্থিতিশীল অবস্থা চলছে, সেখান থেকে বের হয়ে আসাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

লেখক: ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭