ইনসাইড থট

আবেগপ্রবণ মগজে কিসের আঘাত!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/11/2018


Thumbnail

রাজনীতি কোন নীতি মানে না সেটাই ক্রমান্বয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন মঞ্চে উপবিষ্ট নেতারা। আচ্ছা মঞ্চে দাঁড়ালেই কি যা ইচ্ছা বলা যায়? এটা কিসের সংস্কৃতি?

মঞ্চে দাঁড়িয়ে যা বলছেন তাকে দুই ভাগে ভাগ করলে দাঁড়ায়,

১। অপর রাজনৈতিক দলের প্রতি বক্তব্য।

২। নিজ দলের প্রতি বার্তা।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির মাঠে মঞ্চে দাঁড়ানো নেতাদের বাচন ভঙ্গি, শব্দচয়ন নিশ্চিত ভাবে সবচেয়ে কুরুচিপূর্ণ এবং বিধ্বংসী।

নেতারা যখন মঞ্চে ভাষণ দেন তখন তারা রাজনীতির কোন নীতিমালা মেনে চলেন জানি না, তবে সেটাই বলা উচিত যেটা তারা বিশ্বাস করেন, নিজে মানেন, মানুষের জন্য করতে চান এবং তার আলোকে মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারেন।

বর্তমান সরকার ১০ বছর দেশ পরিচালনা করেছেন, তাদের দিক থেকে সেটাই প্রচার করবে যা তারা বিগত ১০ বছরে করেছে। মানুষ যদি সেই সকল বিষয় গ্রহণ করে তাহলে সে আবার ক্ষমতায় আসবে। অপর দিকে ঐক্যজোটের আদলে বিএনপি এখন ক্ষমতায় আসার জন্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে উন্নত, আধুনিক কোন জনবান্ধব প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের মনে স্থান করে নিতে হবে। অবশ্যই তার আগে মানুষের কাছে যাবার একটি কালচার, মানুষকে ভালোবাসেন এবং তাদের জন্য কিছু করতে চান এমন বিষয় মানুষের মননে গেঁথে দিতে হবে।

বিগত ১০টি বছরে বিএনপি সময় পার করেছে তাদের অস্থিত্ব ধরে রাখার আপ্রান চেষ্টাতে, বিভিন্ন ধরণের অপরাধ করার কারণে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে নির্দোষ প্রমাণ এবং দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাতে।

এই খেলায় তাদের কখনই কোন মানুষের নিকটে গিয়ে নিজেদের প্রমানের চেষ্টা করতে দেখা যায়নি। সরকার কোন একটি পদক্ষেপ নিলেই সেই বিষয় নিয়ে বিবৃতি প্রদান ছাড়া কার্যত তাদের সাধারণ মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়নি।

ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য দলের কথা নাইবা বললাম। আ স ম আব্দুর রব নিজেও জানে তার দলের অবস্থান কি, ডা.বদরুদ্দোজা নিজেও জানে তিনি এবং তার দল কি করতে পারে। আর যারা আছেন তাদের কোন দলই নেই। বিগত ১০ টি বছর যারা বিদেশে থেকেছেন, নিজেদের ব্যবসা দেখেছেন, টেলিভিশনের টকশোতে সময় পার করেছেন। অন্যদিকে সরকারকে উন্নয়নমুখী কর্মকান্ডে কতটা বাঁধা দেয়া যায় তার নিল নক্সা একেছেন। সাধারণ মানুষ কি ভাবে, কি চায়, কি বলে তার ধারে কাছেও গিয়ে দেখেন নি। অথচ আজ যখন নির্বাচন দোড় গোড়ায় কড়া নাড়ছে তখন জনগন জনগন বলে চিৎকার করছে ।

রাজনীতির মাঠে সরকার বা ক্ষমতাসীন দল সেই সুযোগ নেবেন সেটাই স্বাভাবিক । তারা তাদের উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড সঠিক ভাবে পরিচালনা করেছে সেটা শুধু দেশের মানুষ নয় আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। এই প্রচারণা নিশ্চই চালাবে । একিসাথে তারা ভুলেও চাইবে না বাংলাদেশ আবার তলাবিহিন ঝুড়িতে রূপান্তরিত হোক ।

কিন্তু গণতান্ত্রিক পক্রিয়া বলে নির্বাচন হলে সেখানে সকল দলের অংশগ্রহণ নির্বাচনকে শক্তিশালী করে, যারা ক্ষমতায় আসবেন তাদের ভিতরে একটি শক্তি কাজ করে মানুষের জন্য কাজ করার ।

আজ যখন নির্বাচন এসেছে দরজার গোঁড়ায় তখন আচমকাই লাফ দিয়ে গড়ে ওঠা ঐক্যজোট সংশয়ের জন্ম একের পর এক দিয়েই চলেছে । একটু ঠান্ডা মাথায় যদি চিন্তাকরি তাদের বর্তমান আন্দোলনের ধারা তফসীল ঘোষণার প্রাক্বালে কেন ? কেন তারা তফসীল ঘোষণা করা যাবে না, বা মানিনা বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে ?

তাদের এই ঐক্য আন্দোলন যদি কয়েকমাস আগে শুরু হতো, তাহলে আজকে তফসিল ঘোষণা কেন করা হলো বা সরকারের সাথে আলোচনা আর নয় কেন বা তাদের যে সকল চাহিদার কথা এখন শোনা যাচ্ছে সেই সকল চাহিদা কয়েক মাস আগেই শোনা যেতো । তারা এবং সরকার যথেষ্ট সময় পেতো নিজেদের মধ্যে সমন্বয়/বোঝাপড়া করে নেবার । কিন্তু দেখাগেছে গত ২ মাস আগেও তাদের সকল কার্যক্রম ছিলো বিবৃতি, সরকারের সমালোচনা ইত্যাদির মধ্যে । তাহলে কি নিজেদের অবস্থান বুঝতে পেরে তারা নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এবং সেই শূন্য মাঠে কোন তৃতীয় শক্তির অংক করে রেখেছিলেন ?

যতটা বোঝা যায় তাদের সভা সমাবেশে বিধ্বংসী সংলাপ সরকারকে যতটা না ভিত করার লক্ষে তারচেয়ে বেশি আবেগপ্রবণ বাঙালী জাতীর মধ্যে একটি প্রতিহিংসা ছড়িয়ে দেবার লক্ষে আবর্তিত ।একটি কথা উল্লেখ না করলে নয়, রাজশাহীতে অবস্থান কালে এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে আ স ম আব্দুর রব বলেছেন , "কিসের তফসিল, কার তফসিল"? তিনি আরো বলেছেন, আনসারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে জালভোট কিভাবে করতে হয়? তিনি আরো বলেছেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে আপনারাতো থাকবেন।

তার উচিত কোথায় আনসারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে জালভোটের জন্য সেই তথ্য প্রদান করা, তাছাড়া ভেবে দেখা উচিৎ তিনি বাংলাদেশের ২০১৯ সালে কিসের ইংগিত দিচ্ছেন এটা পরিষ্কার করা ।

চলছে হুমকির পর হুমকি, একের পর এক হুমকি দিয়ে আবেগপ্রবণ বাঙালীর মনে যে বিষক্রিয়া সুপার ইন্ডোজ করা হচ্ছে আর সেই পথ ধরে যদি দেশের মধ্যে সত্যি কোন আগুণ জ্বলে তাহলে তার দায় এই সকল ব্যক্তিকেই কাঁধে তুলে নিতে হবে ।

বিগত ১০ বছরে ঐক্যজোটের কেউ সাধারণ মানুষের নিকট যায়নি, তারা বর্তমান প্রজন্মের চাওয়া পাওয়া জানে না । তবে এটুকু বোঝে যে, বাঙালী আর রক্ত চায় না, বাঙালী হরতাল, অবরোধ, রক্তাক্ত প্রান্তর চায়না । কারন তারা বুঝে গেছে উস্কানি দেবে নেতা , লাশ পড়বে সাধারণ মায়ের সন্তানের । আমার ধারণা বর্তমান সরকার সেটা অনুধাবন করতে পেরেছিলো, তাই তারা প্রজন্মকে সেই ভাবেই ব্যবহার করেছে যে ভাবে তারা চায় । আর তাই নিশিতভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাতে সমর্থ হয়েছে । তবে সেই উন্নয়ন বণ্টনে যে সমস্যা নেই সেটা নয় । তবে আশাকরি তারা সেটা বুঝেই আগামীতে চলবেন ।

তারা কাজ চেয়, তারা মেধার বিকাশ চেয়, তারা ঘাম দিতে চায়, তারা তাদের শ্রম দিতে চায় । এই ধরণের বিশেষণ সম্পর্কে কোন সম্মুখ ধারনাই নেই বর্তমান ঐক্য জোটের ।

তারা এটা জানে বাঙালী চিরকাল আবেগপ্রবণ, সামান্য ঘষাতেই ওদের রক্তক্ষরণ হয় , আর এই অংশের উপর নির্ভর করে সম্মোহিত করার যে সূত্র তারা প্রয়োগ করছে সেটা মোটেও মঙ্গল জনক নয় । কোন দুরভিসন্ধিতে না গিয়ে তারা যদি সত্যি বিগত ১০ বছর মানুষের মধ্যে বিচরণ করতো, সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করতো তাহলে আজ হয়তো তাদের মারমুখি হতে হতোনা ।

বিজ্ঞানের থিওরি বলে দুর্বল সব সময় জোরে চিৎকার করে , কিন্তু সেই চিৎকারের মেয়াদ হয় খুব ক্ষণস্থায়ী ।

আমরা আবেগপ্রবন, তবে এটা চাইনা যে, সেই স্থানকে পুঁজি করে সবুজ দেশের মাটি রক্তাক্ত হোক।

মোঃ তৈমুর মল্লিক ভূঁইয়া

কলামিস্ট

সাধারণ সম্পাদক

দুর্জয় বাংলা সাহিত্য ও সামাজিক ফাউন্ডেশন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭