ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

কেমন ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/11/2018


Thumbnail

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৪ সালের জুলাই থেকে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল এই যুদ্ধ। আজ রোববার প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির শতবর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে। কেমন ছিল এই যুদ্ধ? কেনইবা বিশ্বশক্তিগুলো এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল?

১৯১৪ সালের ২৮শে জুন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। তবে যুবরাজ ফার্দিনান্দের হত্যাই এই যুদ্ধের একমাত্র কারণ ছিল না। শক্তিধর দেশগুলোর উগ্র জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও শক্তি প্রদর্শনের মানসিকতার কারণেই মূলত একের পর এক দেশ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের এক পক্ষে ছিল অস্ট্রিয়া, জার্মানি, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া। যাদের বলা হতো কেন্দ্রীয় শক্তি। আর অন্যপক্ষ মিত্র শক্তিতে ছিল সার্বিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র। ৬০ মিলিয়ন ইউরোপীয়সহ ৭০ মিলিয়ন সেনা এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।

যুদ্ধের শুরুতেই বেলজিয়াম দখল করে নেয় জার্মান বাহিনী। এরপর তারা ফ্রান্সের দিকে অগ্রসর হলে দেশটির সেনাধ্যক্ষ মার্ন নদীর তীরে জার্মান বাহিনীকে দমন করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে জার্মান সেনাধ্যক্ষ হিন্ডেনবার্গের সহকারী সেনাপতি লুভেনডর্ফ টেননবার্গের যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে পরাজিত করে।

১৯১৫ সালে রাশিয়া আক্রমণ করে ইউক্রেন ও ক্রিমিয়ার দখল নেয় জার্মান বাহিনী। পরবর্তীতে রাশিয়া বিভিন্ন ভাবে জার্মানি আক্রমণ করতে চাইলেও তারা ব্যর্থ হয়। তুরস্ক জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিয়ে মিত্রশক্তিকে প্রতিহত করতে দার্দানেলিস প্রণালী বন্ধ করে দেয়। ইঙ্গ-ফরাসী বাহিনী দার্দানেলিস প্রণালী দখল করতে চাইলে তুরস্কের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। যুদ্ধের প্রথমদিকে দাপুটে অবস্থানে থাকলেও দ্বিতীয় বছর অস্ট্রিয়ার কাছে পরাজিত হয় সার্বিয়া।

১৮২৩ সালের ‘মনরো নীতি’ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের রাজনীতিতে না জড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ১৯১৪ সালে ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্র কোন পক্ষে না জড়িয়ে নিরপেক্ষতা বজায় রাখছিল। কিন্তু জার্মানি সাবমেরিন হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। এর জের ধরে ১৯১৭ সালের ৬ এপ্রিল জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

১৯১৮ সালে জার্মানি মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। তবে জার্মান বাহিনী পরপর তিনটি আক্রমণ করেও মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। জার্মানি ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়তে থাকে। তুরস্ক, বুলগেরিয়া, অস্ট্রিয়া একে একে পরাস্ত হয়ে মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে। অন্যদিকে জার্মানির নৌবাহিনী বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এ অবস্থায় জার্মানির সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলহেইম গণ অসন্তোষ ও বিদ্রোহের মুখে সিংহাসন ত্যাগ করে হল্যান্ডে পালিয়ে যান। জার্মানিতে প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠন করা হয়। ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রজাতান্ত্রিক সরকার মিত্রশক্তির সঙ্গে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি সাক্ষর করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে। চার বছর স্থায়ী এই যুদ্ধে দেড় কোটি মানুষ নিহত হয়। আহত হয় আরও অন্তত দুই কোটি মানুষ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে বিশ্বের মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। জার্মান, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান, অটোমান ও রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে নতুন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সৃষ্টি করে এই যুদ্ধ। যুদ্ধশেষে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্যারিস সম্মেলন ও ভার্সাই চুক্তির ফলে অস্ট্রিয়া, চেক স্লোভাকিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া এবং তুরস্ক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭