ইনসাইড বাংলাদেশ

প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/11/2018


Thumbnail

১৯৭০ সাল। বাংলাদেশ তখন পাকিস্তান নামক এক অদ্ভূত রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত। পরাধীনতার সেই সময়টাতে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর শতাব্দীর মহাপ্রলয়ঙ্করী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বিরান ভূমিতে পরিণত হয় পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সন্দ্বীপসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল জনপদ। মৃত্যু হয় প্রায় ১০ লাখ মানুষের। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) বিবেচনায় এ পর্যন্ত রেকর্ড করা ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ। 

ইতিহাসের পাতায় ‘ভোলা সাইক্লোন’ নামে ঠাঁই পাওয়া এ ঘূর্ণিঝড়ে মানুষ ছাড়াও মারা যায় যায় লাখ লাখ গবাদি পশু ও জীবজন্তু। ক্ষতি হয় পাঁচ কোটি টন খাদ্যশস্যের। পরদিন সকালে নদীতে ভেসে ওঠে লাখ লাখ লাশ। এমনকি গাছে গাছে ঝুলে ছিল মানুষের লাশ। ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী ছবিগুলো আজও মানুষকে বেদনাবিধুর করে তোলে। সেদিনের ঘূর্ণিঝড়ে স্বজন হারানোর দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে এখনও বেঁচে আছেন অনেকে।

এ ঘূর্ণিঝড়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতি হয় দেশের ১৮টি জেলার। ঝড়ের পর বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছিল চরমমাত্রায়। লাখ লাখ মানুষের লাশ মাটিচাপা দিতে হয়েছিল কাফন ছাড়াই। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এ মহাদুর্যোগকে আমলে না নেওয়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তৎকালীন সরকারের নেতিবাচক ভূমিকা ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও প্রভাব ফেলে। তবে দুর্গতদের পাশে সারাবিশ্ব তখন দাঁড়িয়েছিল। আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমগুলোয় এ মহাদুর্যোগের খবর ব্যাপক প্রচার পায়। তালগাছের মাথায় বেঁচে থাকা মানুষের ছবি আলোড়ন তোলে পৃথিবীজুড়ে।

১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে এ ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয় উপকূলীয় অঞ্চলে। ১১ নভেম্বর সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। পরদিন ১২ নভেম্বর সকাল থেকে কালো মেঘের সঙ্গে আবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বাতাসের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাগর ভয়াবহ রূপ নেয়। ২০ থেকে ২৫ ফুট উঁচু হয়ে একের পর এক ঢেউ উপকূলে আছড়ে পড়তে থাকে। বিকেলের মধ্যে সাত-আট ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় উপকূলের পটুয়াখালীর গলাচিপা, দশমিনা, কলাপাড়া; বরগুনার পাথরঘাটা, বেতাগী, তালতলী ও আমতলী; ভোলার চরফ্যাশন, লালমোহন, দৌলতখান, মনপুরা, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দীন; নোয়াখালীর হাতিয়া, সুধারাম, রামগতি, রায়পুর, সোনাগাজী এবং চট্টগ্রাম জেলার কুতুবদিয়া, বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, আনোয়ারাসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ও দ্বীপ। সেদিন রাত ১টা পর্যন্ত ২৫-৩০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।

পরাধীনতার শেকল ছিড়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ প্রায় ৪৭ বছর। যদিও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর স্বৈরাচার-রাজাকারদের আধিপত্যের কারণে এই সময়টাতে বাংলাদেশ কোনো খাতেই সর্বোচ্চ সফলতা লাভ করতে পারেনি। তবে বিগত কয়েক বছরে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির শাসনে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইলা, সিডর, মহাসেনের মতো একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হলেও কিন্তু এসব দুর্যোগে খুব বেশি প্রাণহানি বা আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়নি বাংলাদেশ, ’৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানির মতো কোনো ঘটনা এখন চোখে পড়ে না।। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের আধুনিকায়নের ফলে বাংলাদেশে এই পরিবর্তনটি ঘটেছে।

তখন চরাঞ্চলে রেডিও বা পূ্র্বাভাস প্রদানের ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় মানুষ মহাপ্রলয়ঙ্করী এ ঘূর্ণিঝড়ের আগামবার্তা জানতে পারেননি। ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিপুল পরিমাণে। কিন্তু এখন দৃশ্যপট অনেকটাই পাল্টে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে বিরূপ আবহাওয়া জলবায়ুর পরিস্থিতি আগে থেকেই জানা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রায় সব আগামবার্তাই উপকূলের প্রতিটি প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে যায় এখন। ফলে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পুরো দেশ এখন সতর্ক থাকতে পারে। এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এসএইচটি/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭