ইনসাইড আর্টিকেল

২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুন:তফসিলের দাবি মেনেও সমালোচনায় ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/11/2018


Thumbnail

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৯ ডিসেম্বর। আচ্ছা তখনোতো ২৫ ডিসেম্বরই বড় দিন ছিল। কিন্তু নির্বাচনী তফসিলের কিছুটা পরিবর্তন এনে নির্বাচন কমিশন একাদশ সংসদ নির্বাচনের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর করায় খুশি নয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা জেএসডি প্রধান আ. স. ম. আব্দুর রব। ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন এবং ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর, নতুন করে এই ঘোষণা দেওয়ার পর আ. স. ম. রব বলেছেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের একদিন পরই ইংরেজি নববর্ষ । ঐ সময় দেশে কোনো কূটনৈতিক ও বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবেন না । সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নির্বাচন বানচাল করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’  ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেছেন, ‘ভোট সাত দিন পেছানোও উদ্দেশ্যমূলক।’

আচ্ছা ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলে ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণে আপত্তি কেন? আর বিদেশিদের দিকে রাজনৈতিক নেতাদের ভরসা কেন দেশের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। বিদেশি পর্যবেক্ষণকারীদের যদি নির্বাচন কমিশন অনুমতি দেয় তাহলে তো তারা ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করে অনায়াসেই পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আর আ. স. ম. রবের প্রশ্ন বড়দিন উপলক্ষে সকল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সবাই কি বাংলাদেশ ছেড়ে যায়। আর বিদেশি কূটনীতিক মানে কি শুধু বড়দিন পালনকারীদেরই বোঝায়? দেশে তো অনেক কূটনীতিকই আছেন, যারা বড় দিন অন্য ধর্মীয় উৎসব পালন করে।

সরকারের সঙ্গে সংলাপ করে এখনো নির্বাচনের তফসিল আবারো সংশোধনের দাবি ঐক্যফ্রন্টের। গতকাল যখন বিএনপির ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচনী তফসিল পুন:তফসিলের দাবি উঠেছিল, তখনই বোঝা গিয়েছিল দ্রুতই নির্বাচন কমিশন এতে সাড়া দিবে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যেভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোটগ্রহণ ও মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ পরিবর্তন করার ঘোষণা দিলেন তাতে মনে হলো তিনি জানতেন যে প্রথম তফসিল বিএনপি মানতে চাইবে না। আর বিএনপিও যখন তফসিল সংশোধনের দাবি জানিয়ে তা মানার ঘোষণা পাবার আগেই মনোনয়নপত্র বিক্রির ঘোষণা দিয়ে দিল তখনই বোঝা গেলো কিছু একটা পরিবর্তন হলেই তারা খুশি। আর আ. স. ম. রব,যিনি এইচ এম এরশাদের আমলে ভোটারবিহীন ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে ‘গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেতার’ তকমা পেয়েছিলেন তাঁর হুঙ্কারে দেশবাসী কিছু অবাকই হন। কারণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণার পরপরই রাজশাহীতে তিনি হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ‘কিসের তফসিল,কার তফসিল, কিসের ভোট।’ এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদাকে ‘বেহুদা’ হিসেবে অভিহিত করে গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তাঁর বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচার’ বহির্ভূত বলেও বলছেন অনেকেই।

এটা ঠিক যে সোমবার ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। এটাই ভালো হতো যে তারা দেখা করে পুন:তপসিলের ব্যাপারে উভয় পক্ষের আলোচনার পর যদি নির্বাচন কমিশন সংশোধিত তফসিল ঘোষণা করতেন। এ তাড়াহুড়া না করলেই ভালো হতো। কারণ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা তাহলে এমন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারতেন না। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে যে তফসিল ঘোষিত হয়েছিল , তা সংশোধনের জন্য আরও দু-একদিন সময় নিতেই পারতেন। কারণ ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটতো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণাই দিয়েছে। এমনকি তারা মনোনয়নপত্র বিক্রিও শুরু করেছে।

নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা এবং সেই তফসিল সংশোধনের ঘোষণা দেওয়ার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে পাঁচজন নেতা সোমবার বিকেলে কারাগারে গিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। তবে কারাগার থেকে বেরিয়ে মির্জা ফখরুল প্রকাশ্যে শুধু এতটুকুই বলেছেন যে, তারা চান আবার যেন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয় । নির্বাচনী তফসিল এবং দলের মনোনয়ন বিক্রি সম্পর্কে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাদের কি আলোচনা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে এর আগে সাত দফা এবং নির্বাচনী তফসিল এক মাস পিছিয়ে দাবি মানার শর্তে ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট যখন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল, তখন নেতারা বলেছিলেন যে দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশক্রমেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দেশ এখন নির্বাচনমুখী । প্রায় সবদলই নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য নানা কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনে মাত্র আটটি দল থেকে সংসদ নির্বাচিত হয়েছিল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩০ , বিএনপি ৩০,জাতীয় পার্টি ২৭ ,জাসদ ৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ২ , জামায়াতে ইসলামী ২, বিজেপি ১, এলডিপি ১ এবং স্বতন্ত্র ছিলেন ৪ জন।  এবার অবশ্য নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী থেকে ভোটে প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নাই।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭