কালার ইনসাইড

নুহাশ পল্লী ও হুমায়ূন আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/11/2018


Thumbnail

আজ নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭০ তম জন্মদিন। সাহিত্যের পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ নাটক, চলচ্চিত্র ও গানের জগতেও রেখেছেন বিশেষ অবদান। তাঁর জন্মদিনে কিছু তথ্য জানা যাক হুমায়ূন আহমেদের নুহাশ পল্লীকে নিয়ে।

একবার হুমায়ূন আহমেদের আমন্ত্রনে বাংলাদেশে এসেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। নুহাশপল্লীতে সময় কাটাচ্ছিলেন তাঁরা। হুমায়ূন আহমেদ জানতেন একদিন পরই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। কিন্তু ভাবনা এমন করছিলেন এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

রাতে খাবার পরে বিশ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সাড়ে এগারোটার দিকে সুনীলকে বললেন চলুন বাইরে থেকে ঘুরে আসি। বাইরে বের হয়েই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘ওয়াও’ বলে একটা চিৎকার দিলেন। নুহাশপল্লীর চারিদিকে মোমবাতির আলোয় এক অন্য ভুবনের আবেশ। প্রবেশপথ থেকে শুরু করে রাস্তাগুলো হয়ে দীঘি পর্যন্ত আলোর এক অন্যরকম খেলা। এভাবেই প্রিয় মানুষদের সারপ্রাইজ দিতেন তিনি।

জীবদ্দশায় হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনগুলোতে কেমন আয়োজন হতো? নিজে খুব একটা পছন্দ না করলেও ঠিকই জন্মদিনে কেক কাটতে বাধ্য হতেন। স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, আসাদুজ্জামান নূর,  চ্যালেঞ্জার, রিয়াজ, ডা. এজাজুল ইসলাম, ফারুক আহমেদ, স্বাধীন খসরুসহ আরও অনেকেই সেদিন উপস্থিত থাকতেন। তাদের জোরাজুরিতে সেদিন আর কিছু বলার থাকতো না।

একটা স্টেজ বানানো হতো। ফায়ার ক্যাম্প হতো। সবাই হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় সব গান গাইতেন। সেলিম চৌধুরী, এসআই টুটুল, কুদ্দুছ বয়াতিসহ আরও অনেকে গাইতেন। এভাবে চলত অনেক রাত পর্যন্ত।

হুমায়ূন আহমেদে নিজেই নুহাশ পল্লীর পুকুরে রুই, কাতলা, কাল বাউশ, চিতলের পোনা ছেড়েছেন। এখনও এখানে কয়েকশ’ চিতল আছে। নিজেই সেখানে জাল ফেলতেন। বড় বড় মাছ রেখে দিয়ে বলতেন সবাইকে খেতে দিবা। ছোট কোনো মাছ রাখতেন না, সব দীঘিতে ছেড়ে দিতেন।

হোয়াইট হাউসে (নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের বাসস্থানের নাম) উনার ঘরের কার্পেট বিছানো মেঝেতে খুব ছোট্ট একটা টেবিলে তিনি লিখতেন। এত কাজের মধ্যে তিনি কখন এত উপন্যাস-গল্প লিখেছেন।

সহজে রাগ করতেন না। তবে কেউ গুরুতর কোনো অপরাধ করলে এমন একটা ধমক দিতেন যে নুহাশপল্লীর মাটি পর্যন্ত কাঁপত। তারপর বলতেন কানে ধরে ওকে সারা নুহাশপল্লী ঘোরাও। তার পেছনে পাঠানো হতো একজনকে। তার পেছনে আবার পাঠানো হতো আরেকজনকে। আসলেই করছে কিনা সেটা দেখার জন্য। তারপর ডেকে এনে বলতেন, যাও তোমাকে মাফ করে দিলাম।

হুমায়ূন আহমেদের পোশা প্রাণীগুলোর দেখাশোনা করতেন ফজলুল হক সরকার। নুহাশপল্লীতে আছেন ১৯৯৭ সাল থেকে। এখনও নানা ধরনের কাজ করেন। হুমায়ূন যখনই আসতেন তার পোষা প্রাণীগুলোর খবর নিতেন। এমনকি শেষবার যখন আমেরিকা থেকে এসেছিলেন তখনও কবুতর, হাঁস, গরুগুলো দেখে রাখতে বলেছিলেন। সেগুলোর পরিচর্যা এখনও খুব ভালোভাবেই চলছে।

লীলাবতী দীঘির সীমানার পরে একটা খাল ছিল। হুমায়ূন আহমেদ তখন একটা বজরা নৌকা ব্যবহার করতেন। নানা জায়গায় নৌকায় আসা-যাওয়াও করতেন।

নুহাশ, শীলা, নোভা, বিপাশা ওদের নিয়েও ঘুরতেন। আবার তিনি নিনিত, নিষাদকেও কোলে নিতেন, ঘুরতেন। সন্তানদের বিষয়ে তার ভালোবাসা অকৃত্রিম। এমনকি তার দুই সন্তানের মৃত্যুর পরেও।

নুহাশপল্লীতে প্রায় তিনশ’ প্রজাতির ফলদ, বনজ গাছ আছে। আছে বিরল ঔষধি বাগান। এ বাগানটি উৎসর্গ করেছেন মৃত ছেলে রাশেদ হুমায়ূন স্মরণে। সেখানে লেখা আছে, ‘আমরা ছোট বাবাকে মনে করছি।’ তার মৃত্যুর পর নতুন করে আর কিছু করা হয়নি সেখানে।

লীলাবতীর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীঘিটির অন্য নাম ছিল। কিন্তু পরে তিনি এটির নাম রাখেন দীঘি লীলাবতী। ফলকটিতে স্পষ্ট করে আরও লেখা রয়েছে ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে’। এখানেই শেষ নয়, হুমায়ূন আহমেদের কারণেই গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের রাস্তার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ এসেছে বলেও জানান সেখানকার স্থানীয়রা।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ 

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭