ইনসাইড আর্টিকেল

বিএনপি কি আসলেই নির্বাচনে যাবে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/11/2018


Thumbnail

দেশে সংকট তৈরির মাধ্যমে নিজেদের সংকট নিরসনের নতুন ষড়যন্ত্রে আশ্রয় নিয়েছে কি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের বোরকার নিচে লুকিয়ে থাকা বিএনপি তথা স্বাধীনতা ও দেশের উন্নয়ন বিরোধী শক্তির জোট! পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, নির্বাচন আরেক দফা পেছানোর দাবি নিয়ে ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৪ নভেম্বর দুপুর ১২টায় এ জোট ইসিতে যাবে।     

নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আগ্রহী নয় বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ মঙ্গলবার ১৩ নভেম্বর বলেছেন, ‘ভোট পেছানোর দাবিতে ইসিতে যাচ্ছি আগামীকাল’। পরে ১৬ নভেম্বর প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করবে ঐক্যফ্রন্ট। এরপর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গেও বসার কথা।   

এই কথার পরে এখন অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে না দেওয়ার নিজেদের পরিকল্পনার কথা নির্বাচন কমিশনের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে ২০ দলীয় জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মানে বিএনপি। তাই তারা ষড়যন্ত্রের সূচনা হিসেবে ১১ নভেম্বর ২০১৮ রোববার দুপুর একটায় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একইদিন দুপুর দেড়টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ ২০ দলের নির্বাচনে যাবার যুগপৎ ঘোষণা দেন। তারা নির্বাচনের তারিখ এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানায়।    

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের দাবি তথা সব দলের অংশগ্রহণে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে সরকার ও দেশের উন্নয়নের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ৭ দিন পিছিয়ে পূর্বঘোষিত ২৩শে ডিসেম্বরের ২০১৮‘র পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে। কিন্তু তাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট তুষ্ট হতে পারে নি। কারণ তারা আসলেই নির্বাচন চায় কি না তা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সবার মনে থাকার কথা যে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমানুল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, ড. মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর রায়, ব্যারিস্টার মওদুদসহ অনেক বিএনপি নেতাই বলেছিলেন যে খালেদা জিয়াকে জেলে নেওয়া হলে তারাও স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবেন! এখন তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিকে ধামাচাপা দিয়েই নির্বাচনে যাবার জন্য দেন দরবার করছেন কেন! এটা তা কি তাদের দল বা জোটের আসল কথা না অন্য কিছু লুকিয়ে কথার কথা বলার জন্য এই বাহানা! মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে যে, জেলে বসে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন যে কোন ত্যাগের বিনিমিয়ে তিনি বর্তমান সরকারের পতন চান।                          

নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাগণ আগেই বলেছেন যে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান  সরকারের মেয়াদ শেষের ৯০ দিন আগেই নির্বাচন শেষ করতে হবে আর সেই শেষ তারিখটা হচ্ছে ২৮ জানুয়ারি ২০১৯। প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ এই বাংলাদেশ। তাই যে কোন সময়ে, সাইক্লোন, টর্নেডো, শৈত্য প্রবাহ, দাঙ্গা, ইত্যাদি জানা না জানা নানা অনিবার্য কারণে নির্বাচনের তারিখ পিছানো লাগতে পারে। সেই কথা বিবেচনায় রেখেই হাতে কিছু সময় রাখা হয়, যাতে সাংবিধানিক সংকট বা শূন্যতা সৃষ্টি না হয়। তাই খুব ঘোষিত তারিখ বেশী পিছানোর সাময় তাদের হাতে নেই। তবুও সবাই একমত হলে কিছুটা পিছান যায়। তাহলে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই এক মাস নির্বাচন পেছানোর দাবি কেন? মানে তারা কেন ২৩ শে জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে নির্বাচন নিতে চান? যেখানে সাংবিধানিক বাধকতা হচ্ছে ২৮ শে জানুয়ারি। তার কেনে নির্বাচনের তারিখকে ‘বড় গিরিখাদের কিনারে’ নিতে চান! কোন মতলব আছে কি এর পিছনে?        

নির্বাচন পিছানোর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আর ২০ দলীয় জোটের (নামে ভিন্ন কিন্তু আসলে এক) আগের ৭ দফা দাবিগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় যে, তাদের প্রায় সব মূল দাবিই ছিল অসাংবিধানিক আর অন্যায্য। সংবিধানের দোহাই দিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন যে সব দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী কাছে তার একটারও যৌক্তিকতা প্রমাণ তিনি করতে পারেন নি। মাথা নিচু করে সবাই ফিরে এসেছেন, কিন্তু হুংকার দিতে ছাড়েন নি। তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে একবারের জন্যেও বলেন নি যে, তারা নির্বাচনে যাবেন না। কারণ তাদের মাথায় নতুন কোন ফন্দি আগে থেকেই ছিল। অনেকেই বলছেন যে, নতুন নতুন চাল তার চালছিলেন নির্বাচন বানচালের জন্য।    

তারা কি সত্যি নির্বাচন করতে চায় নাকি যেনতেন উপায়ে সরকারের পতনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন যাত্রাকে ব্যাহত করতে নতুন কোন ফন্দি ফিকির করছে! বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি দিয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর সফল না হওয়ায় দলে বা জোটের যে ইমেজের যে ক্ষতি হয়েছে সময়ে তার কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বা মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের প্রস্তুতির ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করছে তারা! এরা কী এতোই ভালো মানুষের দল!                

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা সংশোধন আদালত বাতিল করে দেওয়ার ফলে সৃষ্ট সংকট নিরসনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জিয়া পরিবার থেকে বা বাইরের কাউকে দলের প্রধান করা নিয়ে বিএনপি’র মধ্যে কোন আলোচনা নেই, তাদের নির্ভার মনে হচ্ছে। এত নির্ভার তারা থাকে কীভাবে? তারা নির্বাচনের জন্য নমিনেশন বোর্ড গঠন করেছে বা কার সাক্ষরে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ হবে, দলীয় বা জোটের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে তা নিয়ে কোন কথা মিডিয়ায় তেমন করে আসেনি। আর এটা নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা ২০ দলের মধ্যে কোন সিরিয়াসনেস নেই কেন? তাদের প্রবাসী নেতা কি লন্ডন আর মধ্যপ্রাচ্যর ‘যৌথ প্রযোজনায়’ নতুন সংকট তৈরি করে নির্বাচন বানচালের শেষ চেষ্টা করছে? যাতে করে ২১শে আগস্টের মত বড় কোন কিলিং বা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত বা হত্যা করা যাতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ আসে। কারণ ইতোমধ্যেই একজন নামকরা ব্যক্তিকে হত্যা করার মিশনে আসা ৩ জন ধরা পড়েছে বলে নিরাপত্তা সূত্রে দাবি করেছে। আরেক সূত্র বলেছে মুখে মুখে জামায়াতের সাথে বিভেদের নাটক করলেও তারা ২০০১ সালের নির্বাচনের মত ভিতরে ভিতরে এক। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানা গেছে যে, জামায়াতের ‘স্লিপার সেলের’ অনেকেই এখন ঢাকা শহরে ‘পাঠাও’ চালায়। তার কি একযোগে সারা ঢাকা শহর জুড়ে অরাজক কিছু করার পরিকল্পনা করছে! যার থেকে দৃষ্টি সরাতে নির্বাচন পিছানোর নাটক করছে ২০ দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট! নির্বাচনে যাবার প্রস্তুতির চেয়ে নির্বাচন পেছানোর দাবিতে ২০ দল তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এত সক্রিয় কেন, সন্দেহ তাই দানা বাঁধে।   ২০ দল তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবির আড়ালে যে কোন একটা দুরভিসন্ধি আছে তা অনুমানে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। একবার মিথ্যাচার আর ষড়যন্ত্র করে ধরা পড়ার পরে আর কোন মিথ্যাচার বা ষড়যন্ত্র করবে না তা কি কেউ বিশ্বাস করবে? বহুগামীরা সুযোগ পেলেই তা ব্যবহার করে তা প্রমাণিত সত্য। যে যাই বলুন না কেন ২০ দল তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে বাহানাই করুক না কেন তাদের অন্যতম লক্ষ্য যে নির্বাচন বানচাল তাতে বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ নেই বলে রাজনৈতিক মহলের একটা বিরাট অংশ বিশ্বাস করেন। তাই তাঁরা দেখতে চান যে, নির্বাচন কমিশনের মত একটা সাংবিধানিক সংস্থা কতটুকু সতর্কতার সাথে দেশ আর দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাদের দায়িত্ব পালন করেন। ২০ দল তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মানে বিএনপি’র দাবি থেকে তাদের বুঝতে হবে আসলেই তারা নির্বাচনে যেতে চায় কি না।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭