নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 14/11/2018
একটি সার্চ কমিটির মধ্যে দিয়ে গঠিত হয়েছিল বর্তমান নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে, সবার প্রস্তাব বিবেচনা করে বর্তমান কমিশন গঠন করেছিল সার্চ কমিটি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনে কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিএনপির মনোনয়নে এসেছেন। জাসদের মনোনয়নে এসেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন কবিতা খানম। তাই নির্বাচন কমিশন গঠনে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সবারই অংশগ্রহণ দেখা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে তারা কার জন্য কাজ করছে এই প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে প্রশ্নগুলো বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে, যুক্ত হচ্ছে নতুন অনেক প্রশ্ন। নির্বাচন কমিশন নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রকম বিতর্ক।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে। বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সিইসি নুরুল হুদা দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলেন। বিষয়টি তখনই বিতর্কের ঝড় ওঠে।
নির্বাচন কমিশনে ইভিএম ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কমিশনারদের মধ্যেকার মতবিরোধ অনেকবারই গণমাধ্যম পর্যন্ত এসেছে। এমনকি সম্প্রতি ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত এক বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বিষয়টি নিয়ে আবার বিতর্কের মুখোমুখি হয় নির্বাচন কমিশন।
একেক জন নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন কমিশনের কোনো বিষয় নিয়ে একেক রকম মন্তব্য করেন। সর্বশেষ তফসিল নিয়ে একেক নির্বাচন কমিশনার একেক রকম মন্তব্য করেছিলেন। নির্বাচনের বিষয়টিকেই ঘোলাটে করে করে ফেরেন তাঁরা। তাঁদের এমন বিক্ষিপ্ত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের সমন্বয়হীনতার বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়।
সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা। কিন্তু দেখা গেল হঠাৎ করেই সিইসি ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করল। তফসিল ঘোষণার পর যখন রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচন পেছানোর দাবি করা হলো, তখন তিনি আবার রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে পরামর্শ, এমনকি নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা না করে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বক্তৃতার মাঝে তফসিল পরিবর্তনের ঘোষণা দিলেন। আবার পুন:তফসিল ঘোষণার পর আজ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আবার যখন নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করলেন, তখন নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারে আবার আশ্বাস দিলেন সিইসি।
এর আগে নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে ইভিএম কেনা নিয়েও সিইসি বিতর্কের মুখে পড়েন।
সম্প্রতি দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময়ও দেখা গেল নির্বাচন কমিশনের বিতর্কিত ভূমিকা। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনতে দলে দলে মানুষ ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে ধানমন্ডি গেল। ধানমন্ডিসহ পুরো রাজধানীতেই দেখা গেল তীব্র যানজট। অথচ, নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু খুঁজে পেলো না। কিন্তু, বিএনপি মনোনয়নপত্র বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে কমিশন আচরণ বিধি লঙ্ঘনের প্রচার শুরু করল। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন কমিশনের এরকম ভূমিকাই আজ রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ভাঙচুর জ্বালাও পোড়াওয়ের ঘটনার ইন্ধন দিয়েছে।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, বিতর্কিত করতেই কি নির্বাচন কমিশন এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। নাকি নির্বাচন কমিশনের অন্যরকম কোনো পরিকল্পনা আছে।
এর মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, একজন নির্বাচন কমিশনারের মেয়ের বিয়ে জানুয়ারিতে। এই কারণে শুরুতে জানুয়ারিতে নির্বাচন করার পরিকল্পনা থাকলেও তা পিছিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই রাখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সব প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, নির্বাচন কমিশন কার পক্ষে, কার জন্য কাজ করছে? নির্বাচন কমিশনের একের পর এক সৃষ্ট বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এমন বিতর্ক নির্বাচনকেই বিতর্কিত করে কিনা?
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সামনে একটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে, যে জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হয়েছে। আর এমন সংলাপের কারণেই নির্বাচনের মহাসড়কে শামিল হয়েছে সব রাজনৈতিক দল। এমন সুযোগে কাজে লাগানো হলো নির্বাচন কমিশনের মূল দায়িত্ব।
আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন কথা কম বলবে, আশ্বাস কম দেবে, কাজ বেশি করবে। দায়িত্বশীলতার সঙ্গেই তাদের কাজগুলো সম্পন্ন হবে। নির্বাচনের আইন, বিধি অনুযায়ীই চলবে নির্বাচন কমিশন। কারও প্রতি অনুরাগ, বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবে না এই কমিশন। এর মাধ্যমে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তৈরি করবে নির্বাচন কমিশন। নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন দেশের মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করবে। জনমনে এই বিশ্বাস নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করবে যে, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে আগ্রহী তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়া-পাওয়ার হিসেবে না গিয়ে জনগণের চাওয়ার পাওয়ার প্রতিফলন ঘটাবে নির্বাচন কমিশন এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের। সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন না করলে পারলে এই নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭