ইনসাইড আর্টিকেল

বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র বিকৃত করছে অস্থির রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/11/2018


Thumbnail

বিভিন্ন দিক থেকেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল। এক দশক ধরেই দেশটির অর্থনীতি গড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। গত বছর এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই গতি ভারত এবং পাকিস্তানের থেকেও বেশি। একসময়ে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ছিল। কিন্তু বাজার বিনিময় হারের দিক থেকে হিসেব করলে বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের থেকেও বেশি। সমপর্যায়ের অন্য দেশগুলোর থেকে বাংলাদেশের সদ্যজাত শিশুমৃত্যুর হার অনেক কম। শিক্ষা এবং গড় আয়ুর দিক থেকেও দেশটি উন্নয়নশীল অনেক দেশকেই পেছনে ফেলেছে। ১৬৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল দেশ। কিন্তু অঞ্চলের বাকি শক্তিধর দেশগুলোর তুলনায় এর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেকটাই কম।

উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষনিয় হলেও দেশটির রাজনীতি কাউকেই ঈর্ষান্বিত করবে না। দেশটির প্রধান দুইটি দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। এই দুই দলের মধ্যেই ছাড় না দেওয়া মনোভাব এবং নিয়ন্ত্রণহীন বিবাদ চলে আসছে। দেশটিতে সংসদ কিংবা ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে কোনো সমস্যার মীমাংসা করা হয় না। বরং সাধারণ জনগণের ওপর জোরপূর্বক হরতাল, অবরোধ কিংবা ধর্মঘট চাপিয়ে দেওয়া হয়। দেশটিতে ২০১৪ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন সহিংসতায় ১৮ জন নিহত হয়েছিলেন। ওইদিন শতাধিক পোলিং স্টেশন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে, যা ডিসেম্বরের শেষে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত দেখা যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলো এখনো হরতাল ডাকেনি। রাজনৈতিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য সরকার বিরোধীদলীয় জোটের সঙ্গে সংলাপ করেছে। তা স্বত্বেও নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে এমন আশা কমই।

আওয়ামী লীগের দশ বছরের শাসনামলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিজেদের পছন্দমতো নিয়োগ দিয়েছে। একইসঙ্গে বিরোধীদেরও দমন করেছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াসহ শত শত বিরোধীদলীয় কর্মীদের বন্দি করেছে সরকার। বিরোধীদের আরেকটি অংশকে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের ভুল অবস্থানের জন্য ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। বিএনপি’র মিত্র দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিভিন্ন আইনের কারণে সংবাদ মাধ্যমগুলো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সামাজিক মাধ্যমে সরকারের সমালোচকরাও বাধার মুখে পড়ছে। বিচারকরা আইনি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের নিয়ম বাতিল করে। এ বছর নির্বাচনের আগে বিরোধিদলের কর্মসূচী কম চোখে পড়ছে। এর মানে এই নয় যে, তারা সরকারের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। বরং সরকারের খড়গহস্তের কারণেই তারা শান্ত আছে।

বাংলাদেশে বিরোধী পক্ষ নির্বাচনে সুযোগ পেলে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালোভাবে দেশ শাসন করবে, এমনটা নয়। বিএনপি তাদের শাসনামলে যথেচ্ছ দুর্নীতি করেছিল। ২০০৬ সালে তারা ক্ষমতা হারায়। এরপর সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করে। যারা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের ছেঁটে ফেলতে চেয়েছিল। একইসঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকেও দমন করতে চেয়েছিল।

এক মার্কিন কূটনীতিকের ফাঁস হওয়া মেমোতে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে ক্লিপ্টোক্রেটিক সরকার এবং হিংসাত্মক রাজনীতির প্রতীক বলে অভিহিত করা হয়েছিল। তিনি ঘুষ চাইতেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল ওই মেমোতে।

বাংলাদেশের বর্তমান বিশৃংখল পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার কোনো সহজ পথ নেই। আদর্শিক বিশ্বের নেত্রী হলে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক প্রসিকিউশন বন্ধ করতে পারতেন। একইসঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতেন। কিন্তু এসব পদক্ষেপের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু দুই দলের সামনেই তাদের কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার সুযোগ আছে।

শেখ হাসিনা ভোটের আগে বহুদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় কয়েকজন বিএনপি নেতাকে নিয়োগ দিতে পারেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং ভোট গণনার কিছু কাজে তিনি বিরোধীপক্ষের কয়েকজনকে সম্পৃক্ত করতে পারেন। এটা বিএনপিকে গতবারের মতো নির্বাচন বয়কট না করতে উৎসাহিত করবে। নির্বাচন বর্জন বিএনপি’র জন্য আত্মঘাতী পদক্ষেপ ছিল। এর ফলে সংসদে বিএনপি’র কোনো অংশগ্রহণই ছিল না। এতে করে সরকার অবাধে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী আইন পাস করাতে পেরেছে। নির্বাচন বর্জনের ওই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারকে অবৈধ বলা হচ্ছিলো।

বাংলাদেশ অবশ্যই ভালো রাজনীতি প্রত্যাশা করে। দেশটির প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে এটাই হতে পারে সবচেয়ে ভালো উপায়।

দি ইকোনমিস্ট অবলম্বনে

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭