ইনসাইড আর্টিকেল

কঠিন সময়ে তুমি থেকো পাশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/11/2018


Thumbnail

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কাকতলীয়ভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দুই বোন ছিলেন জার্মানিতে। স্বামীর সঙ্গে শেখ হাসিনা জার্মানি গেলেও শেখ রেহানার সেখানে থাকার কথাই ছিল না। কিন্তু দেশ ছাড়ার আগে মূলত শেখ হাসিনার চাপেই তাঁর সঙ্গে জার্মানি যেতে বাধ্য হন শেখ রেহানা। জার্মানি যাওয়ার কারণেই ৭৫ এর বিভীষিকা থেকে রক্ষা পান দুই বোন। তারপর থেকেই দেখা গেছে দুই বোন দুটি মানুষ হলেও হৃদয় যেন একটাই। দুজন দুজনার দু:সময়ে, কঠিন সময়ে একজন আরেকজনার পাশে থেকেছেন। সৃষ্টিকর্তাই যেন তাঁদেরকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে তৈরি করে পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর কঠিন সময় পার করতে হয়েছে দুই বোনকে। কঠিন ওই দু:সময়ে এক আরেকজনের সাহসদাতা হিসেবে থেকেছেন। একজন আরেকজনের ছিলেন সান্ত্বনাদাতা। একজনের চোখের পানি মুছেছেন আরেকজন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশে আসেন শেখ হাসিনা। তখন শেখ হাসিনাকে দুই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়েছে। এক ছিল দলের বাইরে সামরিক স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম। আরেকটি সংগ্রাম ছিল দলের ভিতরে। শেখ হাসিনার রাজনীতিকে পছন্দ করেনি দলের মধ্যে থাকা কয়েকজন সিনিয়র নেতারা, যাঁর মধ্যে ছিলেন ড. কামাল হোসেন। দল থেকে ছিটকে পড়া ও দলের মধ্যে আজ থেকে যাওয়া অনেক নেতা ওই সময়ে শেখ হাসিনাকে দলের নেতৃত্বে পছন্দ করেননি। ভেতরে ভেতরে তাঁরা দলের বিরুদ্ধেই কাজ করে গেছেন। রাজনৈতিক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ওই সময়ে বোনকে সবসময় সাহস যুগিয়েছেন শেখ রেহানা। দ্বিমুখী রাজনৈতিক লড়াইয়ে শেখ হাসিনার একমাত্র আস্থার স্থল ছিলেন শেখ রেহানা। শেখ রেহানা কাছে থাকলে শেখ হাসিনাই যেন দৃঢ়চিত্তে কাজ করার ভরসা পান, বেড়ে যায় মানসিক শক্তি।

আবার শেখ রেহানার কঠিন সময়েও সব সময় পাশে থেকেছেন শেখ হাসিনা। শেখ রেহানার স্বামী যখন মৃত্যুর দুয়ারে ঠিক তখন শেখ হাসিনা ছুটে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। চিকিৎসার সবরকম খোঁজ খবর নিয়েছেন।

রাজনৈতিক জীবনের কারণেই দুই সন্তানকে বোর্ডিং স্কুলে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। প্রায়ই রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে দুই সন্তানকে দেখার সৌভাগ্য হতোনা তাঁর। তখন শেখ রেহানাই বোনের সন্তানদের দেখা-শোনার বিষয়টি নিজের কাঁধে তুলে নিতেন। নিজ সন্তানের মতোই শেখ হাসিনার সন্তানদের যত্ন-আত্তির, আবদার শুনতেন শেখ রেহানা।

দুটি মানুষের পারস্পরিক নির্ভরতার বড় পরিচয় পাওয়া যায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময়। ওই হামলার সময় শেখ হাসিনা অলৌকিক ভাবে বেঁচে যান। তখন শেখ রেহানাই ছিল তাঁর একমাত্র ভরসা। ঘোর বিপদে দুই বোনের একে অপরের নির্ভরতার চিত্র দৃশ্যপটে বারবার ভেসে ওঠে।

২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে অনির্বাচিত একটি সরকার ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশের। অনির্বাচিত সেই সরকার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করলে তখন দলের হাল ধরেন শেখ রেহানা। তখন আওয়ামী লীগের মধ্যে সংস্কারপন্থী নামে একটি গ্রুপের আবির্ভাব হয় যাঁরা দলের নেতৃত্ব থেকে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে সরিয়ে দেওয়ার নোংরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কিন্তু এমন সময়ে আওয়ামী লীগের ঐক্য রক্ষার নেপথ্যে ছিলেন শেখ রেহানা। শেখ রেহানার বিচক্ষণতা ও দৃঢ়চিত্ত কার্যক্রমের কারণেই সেই সময় আওয়ামী লীগ একটি নিশ্চিত ভাঙন থেকে রক্ষা পায়।

২০১৪ এর নির্বাচনের পর সৃষ্টি হয় এক অনিশ্চয়তা। চারদিকে বিএনপি-জামাতের জ্বালাও পোঁড়াও ভাঙচুর। কিন্তু দেশের এমন অবস্থায় লন্ডনে সবকিছু ফেলে শেখ হাসিনা চলে আসেন ঢাকায়। সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে তিনি শেখ হাসিনার পাশে থাকেন তিনি। আর তাঁর পাশে থাকার শক্তিতেই শেখ হাসিনা পার হয়ে যান নির্বাচনের সেই বৈতরণী।

কোনো রকম রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ, অভিলাষ ছাড়াই একজন নেপথ্যচারিনী হিসেবে শেখ হাসিনার শক্তি যুগিয়েছেন শেখ রেহানা।

শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা-দুজন পৃথক দুই মানুষ হলেও তাঁদের লক্ষ্য একটাই জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশে গড়া। 

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭