ইনসাইড পলিটিক্স

জিয়া পরিবারকে পুনর্বাসনের রোডম্যাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/11/2018


Thumbnail

নির্বাচনের আগে নাটকীয়ভাবে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে বিএনপি। তবে নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন যতটা না জরুরি ছিলো, তাঁর চেয়ে বেশি জরুরি ছিলো খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা। মূলত এই সংকট কাটাতেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে বিএনপি, সেটি ক্রমশ. স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

রাজনীতি পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, ঐক্যফ্রন্টের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত জিয়া পরিবার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পেল। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বিএনপির যে সমঝোতা হয়েছে, সেই সমঝোতার মূল উপজীব্য বিষয়ই হলো জিয়া পরিবারকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই জিয়া পরিবারের রাজনীতিতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার রোডম্যাপ স্পষ্ট হয়ে আসছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রোডম্যাপ দৃশ্যমান হলো এ রকম।

১. রোডম্যাপ অনুযায়ী জিয়া পরিবারের বেগম খালেদা জিয়া মূল সদস্য। তিনি কারাগারে। তারেক পলাতক আসামী হয়ে লন্ডনে রয়েছেন। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। কাজেই, এই নির্বাচনে বিএনপি-জামাত নিয়ন্ত্রিত ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেবেন ড. কামাল হোসেন। বিএনপি-জামাতের নেতা হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন তিনি।

২. নির্বাচনে যদি বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্ট বিজয়ী হয়, তাহলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম কাজ হবে জিয়া পরিবারকে পুনর্বাসিত করা। ড. কামাল হোসেন ও বিএনপির মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে, সেটির মূল উপজীব্যই হলো জিয়া পরিবারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া।

৩. নির্বাচনে জয়ী হলে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াও তারেক জিয়াকে নির্দোষ প্রমাণ করা হবে অন্যতম পদক্ষেপ। এর পরই দু’টি আসনে উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে তাদেরকে সংসদে নিয়ে আসা এবং তাদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে এ পরিকল্পনার অংশ।

৪. খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারকে আইনগতভাবে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার ক্ষেত্রে যে বাঁধা রয়েছে, সেটি দূর করা কঠিন আইনী চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রোডম্যাপ অনুযায়ী ঐক্যফ্রন্ট যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে মামলা দু’টি নিয়ে উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়াকে নির্দোষ প্রমাণিত করে সাজা মওকুফ করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করার চেষ্টা করা হবে।

৫.  ‍শুধু সাজা মওকুফ করলেই হবে না, পুনর্বাসনের আরও কিছু কার্যক্রম রয়েই যাবে। বিশেষ করে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কি হবে সেটিও এই রোডম্যাপের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে । বিএনপির হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে দুই বছর সময় লাগবে।

বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া দু’জনকেই আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত করাই ড. কামাল হোসেনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এজন্যই বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র মনে করছে। 

বেগম খালেদা জিয়া দু’টি মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাভোগ করছেন। একটি মামলায় হাইকোর্ট বেগম জিয়ার দন্ড বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তাঁর শেষ ভরসার স্থান হলো আপিল বিভাগ। শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগের রায়ের পর যদি এই দু’টি মামলায় দন্ড বহাল থাকে, সেক্ষেত্রে দন্ড শেষ হওয়ার আরও ৫ বছর পরে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে পুনর্বহাল হতে পারবেন। তবে, তাঁর বয়স বিবেচনায় খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে পুনর্বহাল হওয়ার আর কোনো সুযোগই থাকছে না। কাজেই, এই আইনী লড়াইয়ে ড. কামাল কিভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে সহায়তা দেবেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।

তবে খালেদা জিয়ার চেয়েও বেশি আইনী জটিলতা রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার ক্ষেত্রে। মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক জিয়াকে দন্ড দেওয়া হয়েছে ও গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। মানি লন্ডারিং মামলায় আপিল আবেদনের সুযোগ হারিয়েছেন তারেক। কাজেই তাঁর জন্য এখন সবচেয়ে বড় বাঁধা হলো আপিলের সুযোগ কিভাবে ফিরিয়ে আনবেন? আপিলের মাধ্যমে তিনি আদৌ মুক্ত হতে পারবেন কিনা সেটি এখন বড় প্রশ্ন। এখানেও ড. কামাল হোসেনের আইনী পরামর্শের প্রয়োজন পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, এক্ষেত্রে তারা মালয়েশিয়ার রোল মডেল অনুসরণ করা হবে। মালয়েশিয়ায় আনোয়ার ইব্রাহিম যেমন দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত হয়েছিল, পরে তাকে কারামুক্ত করা হয়। দুই বছর পর তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তেমনি বাংলাদেশেও দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে দন্ডপ্রাপ্ত জিয়া পরিবারের সাজা মওকুফ করিয়ে তাদের সংসদে বসানোই হবে কামাল হোসেনের প্রধান দায়িত্ব। এটিই হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে মূল রাজনীতিক এজেন্ডা। 

 

বাংলা ইনসাইডার/জেডআই

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭