ইনসাইড থট

প্রশাসন টেম্পার হারালেই বিপর্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/11/2018


Thumbnail

আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এই মুহূর্তে চলছে সম্পূর্ণ নার্ভের যুদ্ধ। বিগত সকল নির্বাচনের চেয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ ভিন্ন একটি ধারা নিয়ে এগিয়ে চলেছে, বলা চলে অন্য কোনো নির্বাচনের সঙ্গে কোনো মিল নেই। 

৭১ পরবর্তী সরকার সংশয়হীন ভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে।  সরকারের হাতে পায় একটি যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ এবং চারপাশে সুযোগ সন্ধানী বেঈমান।  তার প্রমাণ মেলে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে।  সেনাবাহিনীর মধ্যে গড়ে ওঠে ক্ষমতালিপ্সু মনোভাব।  তার প্রমাণ পরপর কয়েকটি সামরিক ‘ক্যু’। 

সামরিক ‘ক্যু’ এবং কৌশল এর মাধ্যমে পরবর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।  অর্থনৈতিক দৈন্যতা নিয়ে অনেকটা ঘাত প্রতিঘাত এবং প্রতিশোধ স্পৃহার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলে বাংলাদেশ।  শিক্ষা, অর্থ, উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত দিকে দুর্বলতার ছাপ রেখে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে জন্ম নেয় ছাত্র সিন্ডিকেট, যুব সিন্ডিকেট, দেশ ব্যাপী লাভ করে দলীয় ইজারা প্রথা।  স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মধ্যে প্রবেশ করে অনৈতিক ক্ষমতার গন্ধ, অনৈতিক ভাবে অর্জিত অর্থের গন্ধ।  রাজনীতির নামে দলীয় মনোভাব বিস্তার লাভ করে সীমাহীন ভাবে।  যে প্রভাব থেকে আজও বের হয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ।  চলছে যা বিভিন্ন নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে। যা সারাদেশে একটি ব্যবসায় রূপ লাভ করেছে বলা চলে। 

এর পরবর্তীতে যে সরকার ক্ষমতায় আসে, সেও সেই পুরাতন ভাবনার মধ্যে দিয়েই এসেছে। অর্থাৎ ক্ষমতা লিপ্সু মনোভাব থেকে।

ক্ষমতায় এসেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন এবং সেই দলকে প্রতিষ্ঠা দেবার অভিপ্রায়ে অন্য সকল কিছুকে অবজ্ঞা করার মধ্যে যে একনায়কতন্ত্র কাজ করে সেই মনোভাব প্রতিষ্ঠা করা এবং পরিকল্পনাবহির্ভূত অথচ বাস্তব সম্মত এমন সকল কাজ করার চেষ্টা করাই ছিল সেই সরকারের কার্যক্রম।

পূর্ববর্তী সরকারের আমলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কতটা শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিল সেটার প্রমাণ মেলে একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র হিসেবে পরিচিত সরকারের সময়। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে গিয়েই তার পতন দ্রুততম সময়ে ঘটে যায়। 

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, মান উন্নয়ন, প্রযুক্তি বিষয়ক দুর্বলতা ইত্যাদি রেখেই সরকারের বিদায় ঘটে।

কিছু কিছু বিষয় থাকে যে বিষয়গুলো সমাজে যুবক বা উদীয়মান জনস্রোত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এবং তাদের দ্বারাই সেই বিষয়ের প্রচার ও প্রসার ঘটে। তারাই হয় তখন তার বিজ্ঞাপন, তারাই হয় তার মডেল। 

যুব শ্রেণির এই উৎকর্ষতায় তখন দেশের বিশেষ একটি সমাজ ধন্য হয়, এবং সেটাই তারা গর্বের সঙ্গে বলে যেটা বললে তাদের প্রভাবের স্থান অক্ষুণ্ণ থাকে, নির্বিঘ্নে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। 

এমন বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হলো সকল পর্যায়ে দলের বিস্তার, সিন্ডিকেটের বিস্তার ঘটানো।  সবচেয়ে মজার বিষয় সেই কাজটির নাম হয় তখন রাজনীতি। লক্ষ করলেই দেখবেন দেশের মেজরিটি বাবা দেশ রসাতলে গেলো বলে আফসোস করলেও, নিজের সন্তান রাজনীতির সাথে যুক্ত হোক সেটা চায় না। কারণ তাদের অভিজ্ঞতা এতটাই তিক্ত হয়ে গেছে। 

একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্রের পরাজয়ের মাধ্যমে এমন দলীয় রাজনীতি বদ্ধমূল হয়ে যায় সমাজে। যার থেকে বের হয়ে আসার আর কোন উপায় নেই বা সেই সুযোগ দৃশ্যমান নয়।  

এমন একটি চরিত্র নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি আবর্তিত হয় প্রধান ২ টি দলের মধ্যে। বিভক্ত হয়ে যায় দেশের জনগণ। উভয়ের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ নয়, মূলত তাদের মধ্যে সম্পর্ক এসে দাঁড়ায় প্রতিপক্ষ বা শত্রুতার সকল বৈশিষ্ট্য নিয়ে। 

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এমন যুক্তিকে নিশ্চয়ই সমর্থন করে। এই হামলার মাধ্যমে জাতীর জনকের বেঁচে যাওয়া রক্ত এবং তার রেখে যাওয়া দলকে নেতৃত্ব শূন্য করার অভিলাষে চালানো হয়। 

১টি বা ২টি গ্রেনেডের বিক্ষিপ্ত বিস্ফোরণ হলেও সেটা একটি সাধারণ শত্রুতার পক্ষে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ বলে হয়তো বিবেচিত হতো। কিন্তু ১ নয় ২ নয় ১৩/১৪ টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ এটা জানিয়ে দেয় যে, ঐ স্থানে উপস্থিত কেউ জীবিত থাকার উদ্দেশ্যে সেটা পরিচালিত ছিল না। 

সেনাবাহিনীর যুদ্ধাভিযানে কোন সংঘবদ্ধ শত্রুর বিপক্ষে একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের নিহত/আহত করার জন্য, এরপরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয় স্মল আর্মস (যদিও সেটি নির্ভর করে পরবর্তী পরিস্থিতির উপর)। 

এই সূত্রকে ধরে যদি ২১ আগস্টের হামলাকে দেখি তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, যে কাজ ১৫ আগস্টে অসমাপ্ত ছিল, সেটির সমাপ্তি টানতেই ২১ আগস্টের জন্ম হয়। 

এমন শত্রু মনোভাবের মধ্যে থেকে বেঁচে ফিরে বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনা করল ১০ টি বছর। বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতি উন্নয়নের ৩ টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমান অবস্থায় রয়েছে।

এসেছে জাতীয় নির্বাচন। একদিকে নির্বাচন, অন্যদিকে বিভাজিত মানুষের দ্বিতীয় দলের মধ্যে রয়েছে যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাবার আগ্রহ।  সেই আগ্রহ আরও দ্বিগুণ হয়েছে তাদের দলের ২ জন কর্ণধার আইনের নিকট অপরাধী এবং সাজাপ্রাপ্ত। 

তাদের নিকট এটা নিশ্চিত, যে কোনো উপায়ে তাদের মুক্ত করতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। এবং তারা সেটা স্বীকারও করেছে। তারা বলেছে, কৌশলগত কারণে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে।

এই কৌশল শব্দটাই সব কিছু ভাবতে সহায়তা করে।  দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতাকে পিছনে ফেলে কৌশল শব্দটি সামনে এসেছে।

যেহেতু কৌশলগত কারণে অংশ নিয়েছে সেখানে তাদের প্রধান দায়িত্ব তাদের দলের ২ কর্ণধারকে মুক্ত করা।  কোন কারণে যদি তাদের একটি কৌশল অকার্যকর হয়, তাহলে তারা কৌশল অবশ্যই পরিবর্তন করবে। এই কৌশল যেহেতু তাদের নির্বাচনে এনেছে, ফিরিয়েও নিয়ে যেতে পারে।

নির্বাচন ঘিরে যদি তাদের কোন প্রাপ্তি না আসে, তাহলে কৌশল পরিবর্তিত হয়ে চলে যেতে পারে শেষ স্টেজে। অর্থাৎ নির্বাচনকে প্রতিহত করা। যার একমাত্র পথ দেশের মধ্যে এমন পরিস্থিতি জন্ম-দেয়া যেখানে নির্বাচনের সময় পার হতে বাধ্য।

আর তখনই জন্ম নেবে ৩য় অস্থায়ী শক্তি। যার মাধ্যমে দাবার গুটি চলবে অন্যভাবে। 

অপরদিকে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে তেমন কোন এজেন্ডা নেই, তাদের একটি এজেন্ডা।

যেহেতু তারা দেশ পরিচালনায় সফল, অন্তত বিশ্ব সম্প্রদায় তাই বলে। যেহেতু দেশের মধ্যে ২ টি ভাগ সেহেতু তাদের ভাগের উল্টোদিকে যারা আছে তারা কখনই সেই স্বীকৃতি দেবেনা এটা প্রমাণিত। অন্তত ১৫ আগস্ট,  ২১ আগস্ট সেই সাক্ষ্যদান করে না।

সেহেতু বিদেশি সম্প্রদায়ের কথা বলেই উদাহরণ দিয়েছি।

এমন একটি পরিস্থিতিতে যে কোন সময় যে কোন কিছুই ঘটতে পারে। নির্বাচনে কে হারবে কে জিতবে সেটা চিন্তার বিষয় নয়। চিন্তার বিষয় এই নির্বাচন বাংলাদেশকে কি উপহার দিতে চলেছে?  অন্ধকার নাকি আলো? 

যাই কিছু ঘটুক, কোন বিপর্যয় দেখতে চাই না। আর তাই বলতেই হচ্ছে প্রশাসন টেম্পার হারালেই বিপর্যয় সামনে এসে দাঁড়াবে। যা হতে পারে এগিয়ে যেতে থাকা বাংলাদেশের উলটা পথে যাত্রা করা।

লেখক: কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, দুর্জয় বাংলা সাহিত্য ও সামাজিক ফাউন্ডেশন

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭