ইনসাইড পলিটিক্স

ঐক্যফ্রন্ট খুশি, ২০ দল নাখোশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/11/2018


Thumbnail

বিএনপি এখন দুই ঘর করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর দীর্ঘদিন ২০ দলের খবরই রাখেনি বিএনপি। অবশ্য, চলতি মাসের শুরুতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময়কালে আবার ২০ দলকে ঘন ঘন সময় দেয় বিএনপি। ২০ দলের মন ভাঙাতে কর্নেল অলি আহমেদকে ফিরিয়ে আনা হয়। দলগুলোকে নিয়ে কয়েকটি বৈঠকও হয়। কিন্তু তফসিল পরবর্তী সময়টুকু কাটতে না কাটতেই আবার অবহেলিত, বঞ্চিত ২০ দল। বর্তমান সময়ে ঐক্যফ্রন্ট নিয়েই সব ব্যস্ততা বিএনপির।

অতি সম্প্রতি ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করল বিএনপি। সেখানে ছিলনা ২০ দল। ২০ দলের অন্যতম নেতা কর্নেল অলি আহমেদও বলেছিলেন তারা নির্বাচন কমিশনে যেতে চান, তাদেরও কিছু বিষয় আছে আলোচনার। কিন্তু ২০ দলের নির্বাচন কমিশনে যাওয়া আর হয়নি। কর্নেল অলির একবার মান ভাঙলেও আবার তিনি আগের অবস্থায়ই ফিরে যাচ্ছেন।

২০ দলের অন্যতম শরিক দলহীন মার্কাহীন জামাত। জানা গেছে, এরই মধ্যে ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানকে তিন দফা চিঠি দিয়েছে জামাত। এসব চিঠির ভাষ্য একটাই আসন্ন নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চায় তারা। কিন্তু জামাতের আহ্বানে এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি বিএনপি। জামাতের ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক মনোভাবও দেখাচ্ছে না এখন। জানা গেছে, এরই মধ্যে দেশের ৬২ টি এলাকা থেকে জামাত মনোনয়ন কিনেছে।

জামাত ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, যেসব এলাকায় ঐক্যফ্রন্টে হেভিওয়েট প্রার্থী থাকবে সেখানে জামাতও প্রার্থী দেবে। বগুড়া-২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার নির্বাচন করার কথা। কিন্তু এরই মধ্যে সেখানকার মনোনয়ন কিনেছেন জামাতের প্রার্থী। স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সেখানে জামাতের প্রার্থী বেশ শক্তিশালী অবস্থানেই রয়েছে। একই ভাবে ঢাকার একটি আসনে ড. কামাল হোসেন এবং লক্ষ্মীপুরে আ. স. ম. আবদুর রব নির্বাচন করার কথা। এসব আসনেও জামাত প্রার্থী দিতে পারে বলে জানা গেছে।

জামাতের সঙ্গে বিএনপির মনোমালিন্যের শুরুটা অবশ্য বেশ কিছুদিন আগেই। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় প্রার্থী দেওয়া নিয়ে জামাতের সঙ্গে বিএনপির বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। সর্বশেষ তিন সিটি নির্বাচনে সিলেটে জামাতের প্রার্থীই নির্বাচনে দাঁড়ায়। আর রাজশাহীতে মেয়র প্রার্থী না দিলেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পর্যায়ে জামাতের অনেক প্রার্থী ছিল। রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রচারণায় জামাত কোনো সহায়তাই করেনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে বিএনপির বাইরে একমাত্র সংগঠিত রাজনৈতিক দল হলো জামাত। বিএনপি তাদের যতোই আড়াল করতে চাইলে ততই অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছে জামাত। আর অসন্তোষ থেকে নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রতিপক্ষ হয়ে দেখা দিতে পারে তারা।

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, জামাত  শুধু একাই নয়, অন্যান্য ইসলামী দলগুলোকেও একত্রিত করে একটি নির্বাচনী প্লাটফর্ম বা জোটেরও চেষ্টা করছে তারা। এবার নির্বাচনে জামাতের সবচেয়ে সুবিধার দিক হলো, তাদের সব প্রার্থীই স্বতন্ত্র ভাবে দাঁড়াতে পারবে। দলীয় শৃঙ্খলা বা দলীয় নির্দেশের কোনো বাধ্যবাধ্যকতা নাই এবার।

জামাতের একাধিক নেতা বলছেন, যেহেতু তাঁরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন, সেজন্য তাঁদের কর্মীদের ধরে রাখাই এবার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ধানের শীষ প্রতীকের পিছনে ছুটলে তাদের কর্মীরা আগেই সরে যাবে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের সময় চরম সংকটে থাকা জামাতের পাশে থাকেনি বিএনপি। এমনকি এ নিয়ে একবারের জন্যও তারা দীর্ঘদিনের শরিকের জন্য প্রকাশ্যে কোনোকিছুই করেনি বিএনপি। তাই এই নির্বাচনে বিএনপির পাশে জামাত থাকবে এমন কোনো বিষয় নেই।

আবার ২০ দলের অন্য দলগুলোর মধ্যে দু-একটি দল বাদে প্রায় সবাই সম্মানজনক আসন প্রত্যাশা করছে জাতীয় নির্বাচনে। এমন আসন প্রাপ্তি না ঘটলে তারা অন্যরকম কিছু ভাবতে পারে বলেই জানাচ্ছে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো।

২০ দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি, সেটি ঠিক আছে।  কিন্তু একই রকম গুরুত্ব যদি ২০ দলকে না দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে তারা নির্বাচনের আগে অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থের অন্যরকম কিছু ভাবতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির এখন ‘শ্যাম রাখি, না কূল রাখি অবস্থা। ঐক্যফ্রন্টকে খুশি করতে যেয়ে ২০ দলের শরিকদের সঙ্গে তাদের যে দূরত্ব বাড়েছে। এই দূরত্ব বেড়ে যাওয়া মনোনয়ন দাখিল পর্যন্ত চলতেই থাকে, তাহলে ২০ দলের অনেক শরিক আলাদা হয়ে নির্বাচন করার মতো সিদ্ধান্ত নিলেও তা অবাক করা কোনো বিষয় হবে না। আর এমনি ঘটলে ওই দলগুলো হয়তো জিতবে না, কিন্তু আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটটাকে বিভক্ত করে দেবে। আর নির্বাচনে সেটি বিএনপির জন্য মোটেই মঙ্গলজনক হবে না। এমনটি ঘটলে সেটি নির্বাচনে বিএনপির বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে বলেও মত বিশ্লেষকদের।   

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭