নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 19/11/2018
আগের দিন তারেক জিয়া, পরদিনই গণমাধ্যমে আলোচনায় এলেন বেগম খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিলের সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন উঠল,তাহলে বিএনপি দলের প্রধান দুটি মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি না? আদালতে আইনগত ভাবে নিষ্পত্তির আগেই ভোটের রাজনীতিতে এটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন।
বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে আদালতেই। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত এ নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক চলতেই থাকবে। কিন্তু কথা হচ্ছে দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় দুজন নেতা যখন দুর্নীতি এবং হত্যাকাণ্ডের মত মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন, তখন তার প্রভাব কি হতে পারে? যদিও বিএনপির নেতারা দাবি করেই যাচ্ছেন যে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে এসব মামলা ও আদালতের দণ্ড কতটা প্রভাব ফেলে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তবে আইনি ভাষায় দণ্ডপ্রাপ্ত এবং পলাতক বলা হলেও ভিডিও কনফারেন্সে দেশের বাইরে থেকে তারেক রহমান দলের মনোনয়ন প্রার্থীদের সঙ্গে যে কথা বলেছেন তাকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে না নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি সম্পর্কে রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছিল আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে সোমবার বৈঠকও করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশনের বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের সচিব তাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি আচরণবিধিতে পড়ে না। এ ব্যাপারে কমিশনের কিছু করার নাই বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে তিনি একথাও উল্লেখ করেছেন যে এ ব্যাপারে হাইকোর্টে নির্দেশনা আছে। নির্দেশনাটি হচ্ছে গণমাধ্যমে ‘পলাতক ও দণ্ডিত’ তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। তবে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত বিএনপির জন্য একটি সুবিধাজনক বিষয়। এখন থেকে হয়তো নিয়মিতই ভিডিও কনফারেন্স করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। যেমন সোমবার ভিডিও কনফারেন্সে তারেক রহমান সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলেছেন। এটা দলের নেতা-কর্মীদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক হবে সন্দেহ নাই। বলা যায় যারাই বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের মুখোমুখি হবেন তারা সবাই ভিডিও কনফারেন্সে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।
এদিকে উচ্চ আদালতে আপিল করার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপি নেতারা বলতে শুরু করেছেন যে খালেদা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, যদিও অ্যাটর্নি জেনারেল সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির আইনজীবীদের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন। গত ৩০ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এই রায়ের পরপরই দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেছিল উচ্চ আদালতে দণ্ডিত হওয়ায় খালেদা জিয়া নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু সোমবার আপিল করার পরপরই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আইনজীবীরা দাবি করেন যে আপিলের পর খালেদা জিয়া আর নির্বাচনে অযোগ্য থাকছেন না। এই আপিলের আগেই খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে দলের নেতারা।এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে বিচারিক আদালত। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছেন ১৮ নভেম্বর। এই আপিলে খালেদা জিয়ার জামিন এবং দণ্ড স্থগিতের আবেদন করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়া এক রকম আর জামিন পাওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়া আরেকটি বিষয়। এ ব্যাপারে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য। যে দুটি আপিল করা হলো ১৮ ও ১৯ নভেম্বর সেই দুটি আপিল নিষ্পত্তি হলেই কেবল পরিষ্কার হবে খালেদা জিয়া ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন কিনা। আর আগামী নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হবে খালেদা জিয়ার প্রার্থী হওয়া না হওয়ার ওপর। যদি তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন, তাহলে দলের নেতা-কর্মীদের জন্য তা হবে বড় ধরনের অনুপ্রেরণা। বিএনপি এটাকে তাদের নির্বাচনের আগাম বিজয় বলে প্রচার করতে পারে। ফলে তা হতাশার কারণ হবে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের জন্য। এটা বলাই যায় যে, বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে কি থাকলো না থাকলো তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খালেদা জিয়ার প্রার্থী হওয়া না হওয়া । কারণ এটা অনেকটাই নিশ্চিত যে বিএনপির এখনকার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। তাই যদি প্রথম দুজন শীর্ষ নেতা নির্বাচনে অযোগ্য হন তাহলে বিএনপির জন্য তা হবে এক বিরাট হতাশার।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭