ইনসাইড পলিটিক্স

ঐক্যের ঘরে তারেকের আঘাত - ভাঙছে ঐক্যফ্রন্ট!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/11/2018


Thumbnail

আজব এক নাটক শুরু হয়েছে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে। পূর্বের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যে প্রতিবাদের ভাষা ছড়াতে চেষ্টা করে বিএনপি তার গোড়ায় সরকার পানি ঢেলে দেয় উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড দিয়ে।  নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও উন্নয়নের ইচ্ছা শক্তির নিকট পরাস্ত হয় বিএনপির প্রতিবাদ।  উপরন্তু সামনে চলে আসে তাদের নেতৃত্বের নানাবিধ অপকর্ম। আইনের বিচারে দণ্ডিত হয়ে বিএনপি হয়ে পড়ে নেতৃত্ব শূন্য।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যখন বুঝতে পারে তাদের নেতাদ্বয় কেউ আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না তখন রাজনীতিতে টিকে থাকতে চলে এক অভূতপূর্ব সমীকরণ। বিএনপি চেষ্টা করেছে নানা ভাবে জনগণকে জাগিয়ে তুলতে অন্তত একটি আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে। একদিকে যেমন চলেছে এই প্রয়াস, অন্যদিকে ছদ্মবেশে সরকারের দরজায় করেছে দাপ্তরিক আঘাত।  কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু করতে না পেরে যখন তারা হতাশ, ঠিক সেই সময়ে লন্ডনস্থ হুকুমে গঠিত হয় ঐক্যফ্রন্ট। 

ঐক্যফ্রন্টের গঠন এবং তাদের পরবর্তী জনসমাবেশে দেওয়া ভাষণের সঙ্গে বর্তমান ঐক্যফ্রন্টের মাঝে বিশাল এক ব্যবধান চোখে পড়ছে বলেই অনেকের ধারণা। 

দিন যত এগিয়ে চলেছে, ভিন্ন ভিন্ন নিতির মানুষদের মতপার্থক্য ততই সামনে চলে আসছে। 

ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে একটি বক্তব্যই ছিল, নির্বাচন শেষ না হওয়া অবধি তারেক রহমানকে সম্মুখে আনা যাবে না।  তারেক রহমানের অপরিচ্ছন্ন ইমেজ শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও নানা ভাবে প্রকাশিত।  সেই বিষয়কে মাথায় রেখে ড. কামালকে সেই স্থানে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। কারণ ড. কামালের দেশে বিদেশে একটি ইমেজ রয়েছে। যদিও তিনি উল্লেখ করার মতো কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়। 

তাদের যাত্রা শুরুই হয়, অনেকটা ধোঁয়াশা রেখে। জনগণকে বলা হচ্ছে একটি, কিন্তু তাদের অভ্যন্তরে রয়েছে আর একটি।

ড. কামাল তিনি চেয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের সকল আলোচনা, সকল কিছুই নির্ধারণ হবে নিজেদের বৈঠকে। কিন্তু বিএনপির তৃণমূল সেটা মেনে নেয়নি, তৃণমূলের সঙ্গে বেশ বেশি সম্পৃক্ত অনেক উচ্চ পর্যায়ের নেতাও সেটা মেনে নেয়নি।  তবে তারা প্রকাশ্যে এর বিরোধিতাও করেন নি।  কিন্তু যেই মুহূর্তে ড. কামাল কাদের সিদ্দিকী কে সম্পৃক্ত করলেন, সেই মুহূর্তে বিএনপির মধ্যে বডি ল্যাংগুয়েজ বেশ পরিবর্তন এসে গেলো।

বেশ জোরেশোরেই শোনা যায়, এমন ঘটনার পর পাকিস্তান ভিত্তিক আইএসআই বেশ তৎপর হয়ে ওঠে।  তারা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ে বলে জানা যায়। কাদের সিদ্দিকীর অংশগ্রহণ পাকিস্তান ভালোভাবে নেয়নি। কাদের সিদ্দিকী মুখে যাই বলুক সেটা তারা বিশ্বাস করেনি।   কারণ বাংলাদেশের মাটিতে জামাতকে ধরে রাখতে, সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব ধরে রাখতে পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। বিএনপির সঙ্গে জামাত ভিত্তিক রাজনীতিতে পাকিস্তান আইএসাই বেশ মোটা অংকের একটি হিসাব সব সময় রেডি রাখে। 

প্রশ্নটা শুরু হয় এখান থেকেই, কারণ ঐক্য ফ্রন্টের নেতৃত্বে যদি ঐক্যফ্রন্টের সকল দলের নমিনেশন যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাহলে জামাতের প্রার্থী সবচেয়ে বেশি বিরোধিতার মুখোমুখি হবে এটা বলা বাহুল্য।  কারণ ঐক্যফ্রন্টের অনেকের জামাত ব্যাপারে ফোভিয়া আছে।

কিন্তু পাকিস্তান ভিত্তিক আইএসআই সেটা চায়না। বাতাসে এমন সংবাদ ভেসে বেড়াচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে জামাত দলের পর্যাপ্ত সদস্যদের নমিনেশন দেবার  জন্য পাকিস্তানের কোন সদস্যদের সাথে বাংলাদেশে লবিস্টে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে।

মূলত নাটক এই অবস্থা থেকেই ঘুরে যায়। 

পূর্বের দিন ঐক্যফ্রন্টের মিটিং এ নেয়া সিদ্ধান্ত পালটে যায়। বিএনপির নির্বাচনে নমিনেশন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নিতে দৈব ভাবে আবির্ভূত হয় ভিডিও কনফারেন্সে তারেক রহমান।  প্রতিবাদ জানায় একমাত্র গণফোরাম।  শুধু তাই নয়, ঐক্যফ্রন্টের নমিনেশন তালিকা তারেকের নিকট পাঠাতে আদেশ জারি হয়েছে।

তারেক রহমানকে আড়াল করতে ড.কামালের আগমন, এমন স্বীকারোক্তি দিয়ে ভিন্ন কারণে ব্যারিস্টার মইনুল এখন কারাগারে।  অথচ দৈব ভাবে তারেক রহমানের আগমন জানিয়ে দিয়েছে তিনি আর আড়ালে নেই। বরং শতভাগ কর্তৃত্ব নিয়ে তিনি আবির্ভূত ঐক্যফ্রন্টের রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

তাহলে ঐক্যফ্রন্টের গঠন এবং তারেক রহমানের স্কাইপিতে প্রার্থী সাক্ষাতকার এই দুইয়ের বিয়োগফল যা কিছু সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে অতিগোপনীয় অথচ জনগণের চোখে ধুলা দেবার মতো ঘটনা সমূহ। 

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশের মানুষের মুখে একটি প্রশ্ন ঘুরে ফিরছিল, " যদি জয়লাভ করে, কে হবে ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী " নানা ভাবে এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তারা অবতারণা করেছিলো নানা উদাহরণ। 

শেষ অবধি গণ স্বাস্থ্যের ট্রাস্টি জাফর উল্লাহ সাহেব গতকাল এক টকশোতে নিজেকে আর লুকিয়ে রাখতে পারেন নি।  সে উত্তর দিয়েছে, অবশ্যই গণফোরাম নেতা ড. কামাল।

তিনি এটাও বলেছেন, ইতিহাস রচনা করতে চলেছেন ড. কামাল। অনেকটা অতিমানব হিসাবেই তুলে ধরেছেন ড. কামাল কে। 

একদিকে তারেক রহমান বাংলাদেশ আইনে দণ্ডিত হয়েও ভিডিও কনফারেন্সে প্রার্থী নির্বাচন করে ইতিহাস তৈরি করছেন, অন্যদিকে জাফর উল্লাহ্‌ সাহেব ড. কামালকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চাইছেন। 

অন্যদিকে মাহমুদুর রহমান মান্নার চাহিদা নিয়ে বিপাকে বিএনপি।  এই ত্রিভুজ রাজনৈতিক টানা পোড়নে ঐক্যফ্রন্ট দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না এমন অভিমত অনেকের। 

বিশেষ করে তারেক রহমানের কর্তৃত্ব দৈব ভাবে সামনে চলে আসাকে মোটেও মেনে নিতে পারেনি ড. কামাল। তেমনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ড.কামালকে মেনে নেবে না তারেক রহমান।  পাকিস্তান ভিত্তিক আইএসআই জামাতের প্রার্থী দের প্রাধান্য থাকবে না সেটা মেনে নিতে পারবে না, মান্নার অতিরিক্ত আসনের দাবি বিএনপি মেনে নিতে পারবে না।  ড.কামাল যদি কোন ভাবে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে উপলব্ধি করতে পারে যে, বিএনপি তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে।  আর তখন জনগণকে দেয়া ওয়াদা প্রতিফলিত হবে না। পক্ষান্তরে অপমানিত হয়ে বেরিয়ে যেতে পারে, তাহলে আ. স. ম. আবদুর রব, মান্না, জাফর উল্লাহ্‌ গং দের অবস্থান কি হবে সেটা অনুমেয়। 

আর তাই অনেকেই বলছে ঐক্যজোট ভাংছে, সেটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। 

অন্যদিকে বিএনপি এবার নির্বাচনে যাবেই নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে। যদি এমন হয় যে, বিএনপি তাদের প্রধান টার্গেট খালেদা জিয়া, বা তারেক রহমানকে মুক্ত করতে পারছে না তাহলে দেশের মানচিত্রে নামিয়ে দেবে ভয়াবহ অবস্থা।

তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই যে তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য সেটার প্রমাণ তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্স। 

নির্বাচন এবং দেশের স্থিতিশীলতা রয়েছে ২য় অধ্যায়ে বলেই চারদিকে শোনা যায়।

বহুমুখী টানাপোড়ন এবং স্বার্থের দণ্ডে রাজনৈতিক অঙ্গনে কি পারবে তাদের বলা কথাগুলির বাস্তব রুপ দিতে? 

নাকি বিএনপির একচ্ছত্র অধিপতি তারেক রহমানের দৈব ভাবে আগমনে ঐক্যজোটের ঐক্যপক্রিয়া অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে?

সময় তার উত্তর দিয়ে দেবে। অন্যদিকে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফসল নিয়ে আওয়ামীলীগ কতটা জনমনে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বা পেরেছে তার ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত। 

লেখক: কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, দুর্জয় বাংলা সাহিত্য ও সামাজিক ফাউন্ডেশন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭