ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির উদ্বেগের ৫ কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/11/2018


Thumbnail

নানা জল্পনা-কল্পনা এবং অভিযোগের পর বিএনপি আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনে পর থেকেই বিএনপি বলে আসছিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করে বলা হয়, ৭ দফা অর্জিত না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ৭ দফার কোনো দফা অর্জিত না হওয়ার পরেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে।

মূলত বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর চাপ এবং নির্বাচনের বিভিন্ন জরিপ, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা ইত্যাদি নানা বিষয় বিবেচনা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি ৫ টি বিষয়কে তাদের ভয়ের কারণ হিসেবে দেখছেন। বিএনপির নেতাদের মতে, ৫ টি কারণে এই নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হতে পারে।

বিএনপির ভাষ্যমতে, আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনের পরিকল্পনা সাজিয়েছেন, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন হতে পারে। সেই নির্বাচনটা হবে শুধুমাত্র সরকারকে বৈধতা দেওয়ার নির্বাচন। নির্বাচন কেন্দ্রিক বিএনপি যে পাঁচটি বিষয় নিয়ে ভয় পাচ্ছে সেগুলো হচ্ছেঃ

১. ভারতের ভূমিকা: বিএনপি নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন করেও ক্ষমতায় টিকে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ ভারতের সহযোগিতা এবং সমর্থন। ভারত যদি সমর্থন না করতো তাহলে প্রশ্নবিদ্ধ ঐ নির্বাচনের পরেও ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারতো না আওয়ামী লীগ। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি নতুন মাত্রা তৈরি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বিএনপি সর্বোচ্চ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছিল। কিন্তু ভারত বিএনপিকে অনেকগুলো শর্ত দিয়েছিল। যার মধ্যে ছিল তারেক জিয়াকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরানো, খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করাসহ আরও নানা বিষয় ভারতের দেওয়া শর্তগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু শর্তগুলো পূরণ হয়নি। যার ফলে বিএনপি এখনো ভারতের আস্থাভাজন রাজনৈতিক দলে পরিণত হতে পারেনি। তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন। ভারত যেহেতু বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম নিয়ামক শক্তি, তাই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ভারতের ভূমিকা কি হবে, তা বিএনপির নীতিনির্ধারকের কাছে ভয়ের অন্যতম প্রধান একটি কারণ।  

২. নির্বাচন কমিশন: বিএনপি মনে করছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত এই সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই কাজ করবে। সকলের বিরোধিতা সত্ত্বেও তারা ইভিএম ব্যবহারের দিকে যেভাবে এগুচ্ছে, যেভাবে রিটার্নিং অফিসার এবং নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তার সবকিছুই আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী করা হচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা দাবি করছেন। এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকেই সহযোগিতা করবে বলেই ভাবছে বিএনপি।

৩. বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুই জোট: এবারের নির্বাচনে বিএনপি দুটি জোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি নেতৃত্বাধীন এই দুই জোটের মধ্যে কারা সরকারের সঙ্গে মিলে কি ধরনের আঁতাত করছে, সরকারের সঙ্গে কারা কোন ধরনের মেরুকরণ বা সম্পর্ক তৈরি করছে এটা নিয়ে বিএনপির মধ্যে শরিকদের বিষয়ে নানা সন্দেহ এবং অবিশ্বাস কাজ করছে। বিএনপি মনে করছে সরকার এই দুই জোটে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফাটল ধরাতে পারে। যেমন: কোনো আসন দিয়ে বা অন্য কোনো কিছু দিয়ে যদি শরিকদের বিভ্রান্ত করা যায় বা জোটে ফাটল ধরানো যায়, জোটের শরিকরা যদি সরকারের কোনো প্রলোভনের শিকার হয়ে ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে, তাহলে বিএনপির জন্যে এই নির্বাচন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে। কারণ বিএনপি এই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে ইতিমধ্যেই। শেষ মুহূর্তে যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগের জোটে যোগ দেওয়ায় তারা বড় হোঁচট খেয়েছে। এই ঘটনা আবার ঘটতে পারে বলে বিএনপি মনে করছে। নির্বাচনে এই বিষয়টা বিএনপির জন্য একটা বড় উদ্বেগ, আতঙ্ক এবং ভয়ের কারণ। 

৪. বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা: বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার, আটক এবং দণ্ডের কারণে বিএনপি শেষ পর্যন্ত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারবে কি না সেই বিষয়ে তাদের সংশয় আছে। এছাড়াও যারা প্রার্থী হবেন তাঁরা পোলিং এজেন্টসহ মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনে যে দলীয় কর্মী লাগে, সেই কর্মী বাহিনী যোগাড় করতেই বিএনপি হিমশিম খাচ্ছে। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে বিএনপির শীর্ষ মহলকে এ বিষয়ে অভিযোগ করে বলেছেন, ‘তাঁরা নির্বাচনে এজেন্ট নিয়োগের কর্মীও পাচ্ছে না। ২০১৪/১৫ সালে বিএনপি যে আগুন সন্ত্রাস করেছিল, সেই আগুন সন্ত্রাসের কারণে প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। সেই মামলাগুলো এখনো সচল রয়েছে এবং অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। এতদিন তাঁরা আত্মগোপনে ছিল এখন যদি তাঁরা নির্বাচনের জন্যে মাঠে নামে তাহলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার কারণে পুলিশ যদি তাদের গ্রেপ্তার করে, তাহলে নির্বাচন করতে মাঠ পর্যায়ে যে দলীয় লোকবল প্রয়োজন হয়, সেই লোকবল তাঁরা পাবে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির জন্য উদ্বেগের বিষয় মনে করছে বিএনপির শীর্ষ মহল।  

৫. শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি: বাংলাদেশে গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে অবস্থান করছে। সব দলের জরিপেই দেখা যাচ্ছে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ৬৭ থেকে ৭০ ভাগের মাঝামাঝি অবস্থান করছে। শুধু দেশেই নয় সারা বিশ্বেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক সমালোচনা আছে, নেতাদের বিরুদ্ধেও আছে নানা অভিযোগ। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জনগণের আস্থা এবং জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। শেখ হাসিনার এই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছে। নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে ঘায়েল করার মত কোনো শক্তি এবং যুক্তি বিএনপি বা কারও কাছে নেই। শেখ হাসিনার একক জনপ্রিয়তার কাছে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কতটা সফল হবে সেটা নিয়েও দলটির নেতারা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।

বাংলা ইনসাইডার/আরকে



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭