নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 20/11/2018
প্রতিবেশী দেশের নির্বাচনে নিকট প্রতিবেশীর প্রত্যাশা কি? প্রশ্নটা এজন্য উঠে যখন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনারের সাক্ষাতের খবর গণমাধ্যমে প্রচার পায়। চলতি সপ্তাহেই বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এর একদিন পরই মঙ্গলবার তিনি সচিবালয়ে গিয়ে দেখা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে।
আগের দিন বিকল্পধারার সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের পর হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছিলেন নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এরপর দিনই তিনি দেখা করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে। কূটনীতিক পাড়ার খবর যারা রাখেন তারা জানেন নির্বাচন, রাজনীতি সবকিছুতেই বিদেশি কূটনীতিকরা ‘সক্রিয়’ থাকলেও এগুলো তারা করেন কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে। কখনো কখনো তা যে সীমা অতিক্রম করে না, তা নয় । কিন্তু যেহেতু আমাদের দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই ‘কূটনীতিক যোগাযোগকে’ নিজেদের জন্য ‘প্লাস পয়েন্ট’ হিসেবে দেখেন,তাই এর বিরুদ্ধে রাজনীতিকরা জোরালো অবস্থান নিতে পারেন না।
কিছুদিন আগে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটের সঙ্গে সুজন প্রধান বদিউল আলম মজুমদারের বাসভবনে গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের বৈঠক, গাড়িতে ধাওয়া নিয়ে নানা জল্পনা ছিল। কিন্তু সেই বৈঠকের পরই ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের উদ্যোগ নিলেন কিনা সেই প্রশ্ন এখন আর আমরা কেউ তুলছি না। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর ভারতীয় হাইকমিশনারের দুটি দলের নেতাদের বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন তোলার মানুষের অভাব নাই। স্বাভাবিক ভাবেই সাংবাদিক হিসেবেই ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের কাছেও আমাদের এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই হয় । কিন্তু যত সহজে ভারতীয় হাইকমিশনার সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর বাসায় দুপুরের খাবার খেতে পারেন, তত সহজে ভারতীয় কূটনীতিকরা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন না। কিন্তু তারপরও খোঁজ নিয়ে জানা গেলো তফসিল ঘোষণার আগে পরে হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা আরও অনেক রাজনীতিকের সঙ্গেই দেখা করেছেন, তার সবই যে সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে এমন নয়। এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গেও তাঁর দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। আবারো হতে পারার সম্ভাবনাও ভারতীয় কূটনীতিকরা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো সাম্প্রতিক সময়ে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ. এম. এরশাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও তরিকত ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গেও। এখন তফসিল ঘোষণার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সরাসরি ধারণা নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকাটা’ খুবই স্বাভাবিক’, এমনটাই বলছেন ভারতীয় হাইকমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা। তবে তারা এটা পরিষ্কার করে বলতে চান যে শুধু জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতার সঙ্গে তারা দেখা বা কথা বলবেন না। কারণ তারা ‘মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি’ এবং ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির দোসর’ ছিল। একজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেন ‘বাংলাদেশের ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে ভারতীয় সৈনিকরাও বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়েছে, তাই স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল সম্পর্কে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট।
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে ভারতীয় কূটনীতিকরা কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে চান না। এমনকি এই নির্বাচন নিয়ে ভারত সরকারের বার্তা কি জানতে চাইলে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ইংরেজিতে মন্তব্য করেন ‘নো মেসেজ ইজ এ মেসেজ’ । তিনি বলেন, ‘পরিবর্তন বা ধারাবাহিকতা দুটোরই ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা থাকে। তবে আমরা চাই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক। আর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমাদের উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর উন্নয়নের জন্য জরুরি। এমনকি সন্ত্রাসবাদ বা যৌথ অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা দুদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার এখতিয়ার বাংলাদেশের জনগণের।’
ভারত সরকার গত সময়ের মতো এবারও নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কি না জানতে চাইলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কূটনীতিক জানান এটা নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশনার ও বাংলাদেশ সরকারের ওপর। যদি তারা পর্যবেক্ষক চান আনুষ্ঠানিক ভাবে তবে ভারত সরকার তা ভেবে দেখবে। এই কূটনীতিক বলেন, গত যে কোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন এক সুসম্পর্কের উচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে গত তিন বছরে ১০বার দেখা হয়েছে। তারা দুজন ২৪টি চিঠি বিনিময় করেছেন। দুই দেশের জনগণের মধ্যে সৌহার্দ্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ২০১৭ সালে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ১৪ লাখ ৩০ হাজার ভিসা ইস্যু করেছে। এমনকি এখন থেকে ভারতের সংরক্ষিত এলাকা সিকিম ও লাদাক সফরের ছাড়পত্রও এখন ঢাকা থেকেই দেওয়া হবে। ভারতের ভিসা নেওয়ার সময়ই এই ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হলে লিখিতভাবেই তা দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনার থেকে জানানো হয় যে ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কের ১৮ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রটি বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ ভিসা সেন্টার । অবিলম্বেই তা গিনিজ বুকে নাম লেখানোর জন্য চেষ্টা চলছে বলেও জানান ভিসা সেন্টারের একজন কর্মকর্তা।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭