ইনসাইড থট

নির্বাচন কমিশন কি বিএনপি’র পক্ষে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/11/2018


Thumbnail

নির্বাচন কমিশন বলেছে, বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। তার জন্য তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কতটুকু নিরপেক্ষভাবে তারা কাজ করছে, তা মনে হয় বাংলাদেশের অনেকের কাছেই পরিষ্কার না। ধোঁয়াশায় আছে অনেক ভোটার, সচেতন দেশ প্রেমিক অনেক মানুষ, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন। বামাতীরা যাদের অনেককে ব্যঙ্গ করে চেতনা ব্যবসায়ী বলে!              

নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দুটি বড় ঘটনা ঘটে গেছে এ মাসেই। একটিতে আদালত অবমাননা করা হয়েছে, আর তাতে বিএনপি’র একদল সিনিয়র নেতা সহযোগিতা করেছেন আদালতের আদেশকে উপেক্ষা করে, আদালত অবমাননায়। আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকা অবস্থায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোনো ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ৭ জানুয়ারি ২০১৫ সালে এ আদেশ দেন।  আদালতের এই আদেশ অবমাননা করা হয়েছে আর এতে স্কাইপিতে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ইন্টারভিউ নিয়ে। এতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের কয়েকজন আবার বিএনপি দলীয় বড় বড় আইনজীবী। ফলে বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনেই আদালত অবমাননার দায়ে এদের সবার শাস্তি হবার কথা। বাংলাদেশের পেনাল কোডে বা সাক্ষ্য আইনে বা বাংলাদেশের অন্য কোন আইনে কিছু লেখা না থাকলেও, নতুন কোন অপরাধের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন আইন না থাকলেও অনুরূপ কোন ঘটনায় বিচার বিভাগের আগের সিদ্ধান্তকে আইন ধরে আদালত তা আমলে নিয়ে রায় দিতে পারেন, সেটা কিন্তু বাংলাদেশের আইনে বলা আছে। অপরাধের সহযোগী সম্পর্কে আদালতের একটি খুব আলোচিত মালার রায়ের উদাহরণ এখানে দেওয়া যায়। সবাই জানেন যে, গণহত্যায় সহযোগিতার দায়ে নিজামীর ফাঁসির রায় হলে তা রিভিউয়ের আবেদন করা হয়। মতিউর রহমান নিজামীর সাজার রিভিউ আবেদনের প্রসঙ্গে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষের উকিল খন্দকার মাহবুব হোসেনকে বলেছিলেন- ‘আপনারা রিভিউর আবেদনে যে লিখিত জবাব দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে নিজামী সাহেব পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী ছিলেন। এট্রোসিটির সঙ্গে ছিলেন। তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।’ কিন্তু এর প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট পক্ষের কারো আচরণ পরিষ্কার না।        

দ্বিতীয় ঘটনাটি হচ্ছে, বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করার জন্য আদালতের আদেশ। গত ৩ নভেম্বর ২০১৮ রাতে নির্বাচন কমিশনের ৩৮তম কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব বলেন, ‘বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্রে কিংবা নির্বাচন কমিশনের আইন-কানুনে যাই থাকুক না কেন আদালত যে নির্দেশনা দেবে সেটা মানা আমাদের জন্য একেবারেই বাধ্যতামূলক।’  কিন্তু বাস্তবে তাঁর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। 

গঠনতন্ত্রের ৭ নং বাদ দিয়ে বিএনপি তাদের সংশোধিত গঠনতন্ত্র ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ রোববার নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। কিন্তু এখনো বিএনপি’র ওয়েব সাইটে তাদের গঠনতন্ত্রের ৭ (ঘ) ধারাটি বহাল দেখা যাচ্ছে, হয়তো নির্বাচন কমিশনের মতামতের অপেক্ষায় আছে।  

বিএনপির গঠনতন্ত্রে ৭ নম্বর ধারায় ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামে বলা আছে, ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’ তাঁরা হলেন: (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি। (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ...... এবং অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের পদবী, দায়-দায়িত্ব ও ক্ষমতা চেয়ারম্যান নিজে নিরূপণ করবেন।

গঠনতন্ত্রের ৪ নং শব্দার্থ ধারার (ঘ) চেয়ারম্যান শব্দটি ক্ষেত্র বিশেষে চেয়ারপার্সনকেও বোঝাবে বলা হয়েছে।

বিএনপি’র গঠনতন্ত্রের ৫ ধারায় দলের সদস্য হবার যোগ্যতা, অযোগ্যতা, সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।  

ধারা ৬ এর (১৩)তে পার্লামেন্টারি বোর্ড সম্পর্কে কী বলা হয়েছে, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কিংবা অন্য যে কোন নির্বাচনের জন্য দলের প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দলের একটি পার্লামেন্টারি বোর্ড থাকবে। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটিই হবে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। তবে যে জেলার প্রার্থী মনোনয়নের জন্য পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভা আহুত হবে সেই জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উক্ত সভায় পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য বলে গণ্য করা হবে। তবে কোন সদস্য যদি নির্বাচন প্রার্থী হন তাঁর নির্বাচনী এলাকার প্রার্থী বিবেচনাকালে বোর্ডের সভায় তিনি অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। দলের চেয়ারম্যান হবেন পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভাপতি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিংবা যে কোন নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব পার্লামেন্টারি বোর্ড পালন করবেন এবং এ ব্যাপারে বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে’।        

যে দলের তার চেয়ারপার্সন আর কো-চেয়ারপার্সন দুজনকেই আদালত অযোগ্য ঘোষণা করেছেন সেই দল কীভাবে পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভা করলো একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামির নেতৃত্বে! কীভাবে তারা মনোনীত ব্যক্তিকে ক্ষমতা দিয়ে দলের প্রতীক বরাদ্দের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেবেন? বিএনপি’র গঠনতন্ত্রের গঠনতন্ত্রের ১ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ...... এবং অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের পদবী, দায়-দায়িত্ব ও ক্ষমতা চেয়ারম্যান নিজে নিরূপণ করবেন। তাহলে কে কাকে দায়িত্ব দেবেন? কারণ প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, কোন দেশ বা দলের বা কোন সংগঠনের গঠনতন্ত্রের এক ধারার সাথে অন্য ধারার/ উপধারার সম্পর্ক থাকে। তাই এককভাবে কোন ধারার ব্যাখ্যা বা প্রয়োগে ওই গঠনতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট ধারা/ উপধারাকে উপেক্ষা করা যায় না, আইনসংগতও নয়।            

বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র প্রশ্নে আদালতের বাধ্যতামূলক নির্দেশনা মানতে বা প্রয়োগে নির্বাচন কমিশন কাল ক্ষেপণ করছেন কেন? সেই সিদ্ধান্ত বিএনপি’র পক্ষে যাবার সম্ভাবনা নেই তাই ভেবেই কি নির্বাচন কমিশন এটা করছে? তাই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে, নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা আর সরকারকে বিব্রত করা তথা দেশকে একটা অস্থিরতায় না নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে গড়িমসির আসল রহস্য কী? বিএনপি বহুদিন ধরেই বলছে এই নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবাহক, যোগ্যতাহীন, অক্ষম ইত্যাদি। সামনে নির্বাচন তাই বিএনপি’র সংশোধিত গঠনতন্ত্র প্রশ্নে আদালতের আদেশ মেনে নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত দেশবাসীকে জানায় না কেন? এত কিছু ঘটনার পরেও বাঁধা কোথায় তাদের? ‘তারেক জিয়া নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেন নি, আমাদের আইনে তার সুস্পষ্ট কিছু বলা না থাকায় কিছু করতে পারি না আমরা। তারেক বিদেশ থেকে এটা করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ার সহায়তায়। এ সম্পর্কে  নির্বাচন কমিশনে সুস্পষ্ট আইন নেই, ইত্যাদি, ইত্যাদি...’ বলতে তো সময় লাগলো না নির্বাচন কমিশনের? তাহলে  কি করছে নির্বাচন কমিশন, কার পক্ষে কাজ করছে নিরপেক্ষ ভাব নিয়ে? নির্বাচন কমিশন কি বিএনপি’র পক্ষে কাজ করছে! প্রশ্নটি আসে অনেকের মনে।     

তথ্যঋণ: বিএনপি’র গঠনতন্ত্র, অনলাইন পোর্টাল, ইত্যাদি।       

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭