ইনসাইড থট

শেখ হাসিনাকে নিয়ে চরম শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/11/2018


Thumbnail

একটা খবর অনেকেরই চোখে পড়া কথা। কেউ বলতে পারেন এটা খুব সাধারণ একটা পলিটিক্যাল খবর। কেউ বলতে পারে না, তা নয়। কিন্তু যারা এই খবরের মূল কিছু ঘটনা জানেন তাঁরা খুব আপ্লুত আবার একইভাবে চরম শঙ্কিত। এই শঙ্কা নিজের অস্তিত্বের কথা ভেবে, এই শঙ্কা দেশের কথা ভেবে, এই শঙ্কা বাঙালি জাতির কথা ভেবে।     

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আশরাফ গুরুতর অসুস্থ হয়ে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুগ্রাদ হাসতাপালে চিকিৎসাধীন। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাননি তিনি। এরপরও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও ইচ্ছায় সৈয়দ আশরাফ নির্বাচন করছেন। তবে এবারের নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচনী প্রচারণায়ই হয়তো দেখা যাবে না তাঁকে। 

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর তাঁর একজন ব্যক্তিগত স্টাফ এবং সৈয়দ আশরাফের একজন নিকটাত্মীয় ব্যাংককে পাঠিয়েছেন মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য। সৈয়দ আশরাফ স্বাক্ষর দেওয়ার মতো অবস্থায় থাকলে মনোনয়নপত্রে তাঁর স্বাক্ষর নেওয়া হবে। আর স্বাক্ষর দেওয়ার মতো অবস্থায় না থাকলে টিপসই নেওয়া হবে বা হয়েছে। সৈয়দ আশরাফের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে শনিবার রাত বা রবিবার সকালে তাঁরা দেশে ফিরে আসতে পারেন। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন সৈয়দ আশরাফের স্বাস্থ্যেরও আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আর সৈয়দ আশরাফের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে অনড় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

রাজনৈতিক পরিবারে, মানে রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর রাজনীতির শিক্ষক তাঁর পিতা, জাতির পিতা শেখ মুজিব। যদিও রাজনীতির প্রতি তীব্র আকর্ষণ ও ঝোঁক থাকার ফলে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনেরও হাতেখড়ি ঘটে তাঁর গৃহশিক্ষক হামিদ মাস্টারের হাতে। তাঁর গৃহশিক্ষক হামিদ মাস্টার তৎকালে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং যার মাধ্যমে তিনি বাড়ি বাড়ি ঘুরে ধান-চাল সংগ্রহ করে ধর্মগোলা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখান থেকে গরিব-দুঃখীদের মাঝে সেসব বিলিয়ে দিতেন। বলা যায়, গরিব-দুঃখীদের দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে ও তাদের সাহায্য করার শিক্ষা বা মানসিকতা শেখ মুজিবের শৈশবেই গড়ে উঠেছিল। স্কুলের বন্ধুর ছাতা নেই বলে তাকে নিজের ছাতা দিয়ে দেওয়া, নিজের জামা ও বই পর্যন্ত দেওয়ার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের।

এটাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিজীবনের অন্যতম চারিত্রিক গুণাবলি। এ কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায়, একজন বিশ্ববরেণ্য জননন্দিত নেতার ব্যক্তি চরিত্রে যেসব মানবিক গুণাবলি থাকার কথা তার সবকিছু নিয়েই যেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ জন্যই আরব্য সাহিত্যের কবি আব্দুল হাফিজ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আমি তার মধ্যে তিনটি মহৎ গুণ পেয়েছি, সে গুলো হলো-দয়া, ক্ষমা ও দানশীলতা।’ 

এখানেই শঙ্কা আমাদের মত অনেকের। কারণ শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু কন্যা, বঙ্গবন্ধুর রক্ত তাঁর ধমনীতে। তাই বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক কারণেই  দয়া, ক্ষমা ও দানশীলতা এই তিন গুন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রক্তের মধ্যে বিদ্যমান, দৃশ্যমান অতিমাত্রায়। এটা আমরা অনেকেই না বুঝলেও যারা জ্ঞানী তাঁরা বোঝেন, জ্ঞানী দুষ্টু লোকেরা আর বেশী বোঝেন বলেই সমস্যা। জার্মান বিজ্ঞানী Gregor Mendel তাঁর pea plants মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, আসলে মানুষের রক্তে যা মিশে আছে অর্থাৎ মানুষের বা প্রাণীর শরীরে থাকা জিনের প্রভাব পরিবর্তিত হতে তিন জেনারেশন সময় লাগে, যদি পরিবর্তন চায়।  তাই আমরা বঙ্গবন্ধুর সেই তিন গুণাবলী ‘দয়া, ক্ষমা ও দানশীলতা’ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে শুধু দৃশ্যমানই নয় বরং আর প্রকট।  

১৯৭১ সালে চরম বিতর্কিত ভূমিকার জন্য সমালোচিত ড. কামাল হোসেন আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা কিছুদিন আগে বিচারপতি সিনহার মাধ্যমে ‘ফতোয়া’ দিয়েছিলেন যে, ১৯৭২ সালে তার নেতৃত্বে তৈরি করা সংবিধান ভুল! তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহার ঘাড়ে ভর করে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ করতে ব্যর্থ হয়ে ইদানীং তিনি হুংকার ছাড়ছেন, আগামীতে বিচারপতি সিনহার উপর করা অবিচারের বা খারাপ ব্যবহারের বিচার করার।  তিনি একসময় আওয়ামী লীগার ছিলেন। এই ড. কামাল যখন বলেন প্রধানমন্ত্রীর আসনে তাঁর বিপরীতে কোন প্রার্থী দেওয়া উচিৎ নয়, তখন ভয় লাগে, নতুন ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়। কারণ ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে এত অপমানিত হবার পরেও তিনি তারেক জিয়াকে ছাড়তে পারেন না কোন এক অদৃশ্য ‘ফেভিকল’ মার্কা আঠার টানে, তখন সন্দেহ ঘনীভূত হয় আরও বেশী।          

অনেকেই জানেন যা, মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিনকে বাঘ দিয়ে খাওয়ানো হয়েছিলো ১৯৭১ সালে  ঠাকুরগাঁ এ।  মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিনকে যে রাজাকার ধরিয়ে দিয়েছিল তার নাম হলো মওলানা তমিজ উদ্দিন, যে ১৯৭১ সালে ঠাকুরগাঁ মহকুমা সদরের পিস কমিটির সেক্রেটারি ছিল। মওলানা তমিজ উদ্দিন বিএনপি বর্তমান মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের খুব পছন্দের লোক ছিল। মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও কবি বিলু কবিরের লেখা বই ‘প্রামাণ্য সালাউদ্দিন’ থেকে জানা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের ঐ সময় এক ঈদের নামাজের ইমামতিতে মওলানা তমিজ উদ্দিনের নাম উঠলে সংখ্যাগরিষ্ঠ নামাজী তার বিরোধিতা করলেও স্বাধীনতাবিরোধী চখা মিয়ার ছেলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমর্থনে মওলানা তমিজ উদ্দিন ঈদের নামাজ পড়ায়। এই মির্জা ফখরুল গায়ের রাজাকারী গন্ধ মুছতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন করেছে। সেই মির্জা ফখরুল যখন বলে প্রধানমন্ত্রীর আসনে তাঁর বিপরীতে কোন প্রার্থী দেওয়া উচিৎ হবে না। তখন আমরা কেউ কেউ চমকে উঠি ভয়ে। 

মাহমুদুর রহমান মান্না ইসলামী ছাত্রসংঘ (বর্তমানে শিবির), ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ, জাসদে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরেই, ‘জাসদ সমাজতান্ত্রিক শ্রেণি চরিত্র হারিয়েছে’ বলে বাসদে যান। প্রাক্তন বাসদের অনেক নেতাই মনে করেন, জাসদ থেকে বাসদের জন্ম ছিল আদর্শিক। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব প্রশ্নে তাঁদের মতপার্থক্য হয়েছিল। কিন্তু মার্কসবাদী সংগঠন হিসেবে আবির্ভাবের কিছুদিনের মধ্যে ভাঙন ধরে নবগঠিত বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)এ। তাঁর শক্ত গাঁটছড়া যেমন ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তাঁর চেয়ে বেশি দুর্নীতির বরপুত্র তারেক জিয়ার সঙ্গে। তারেক জিয়ার কথা দিয়ে কথা না রাখায় চ্যাম্পিয়ন, তাই ভারত, আমেরিকা কেউ তাকে বিশ্বাস করে না। তারেক জিয়ার সাথে মাখামাখি ও উল্লাস আমাদের শঙ্কিত করে বৈকি!  

কেন জানি মনের ভিতর শঙ্কা জাগে। কারণ তারেক, ড. কামালরা কী আদতেই রক্তে মাংসে পুরোপুরি বাঙালি, অনেকেরই সন্দেহ আছে তাদের নিয়ে।  কারণ- 

‘বাঙালি কি বাঙালি হয় শাড়ি, ধুতি, লুঙ্গি ছাড়া?

থাকে না তার বর্গ কিছুই না থাকলে টুঙ্গিপাড়া।

সুর অসুরে হয় ইতিহাস, নেই কিছু এ দু’জীব ছাড়া

বাংলাদেশের ইতিহাসে দেবতা নেই মুজিব ছাড়া।’

লেখক: উন্নয়নকর্মী

তথ্যঋণঃ শেখ শাফিনুল হক, অনলাইন পোর্টাল, ইত্যাদি।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭