ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনের শঙ্কা বাড়ছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/11/2018


Thumbnail

নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে ততই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। আজ সারাদিনই বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচন বর্জন নিয়ে গুঞ্জন শোনা গেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। এতে দেশজুড়ে একটি আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছিল, তৈরি হয়েছিল উৎসব মুখর পরিবেশের। কিন্তু ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই নতুন করে আবার শঙ্কা, অনিশ্চয়তার পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ও তার নেতৃত্বাধীন দুটি জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট নির্বাচনের ক্ষেত্রে বারবার নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা বলছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘যেহেতু জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে তাই বিএনপি পালানোর পথ খুঁজছে। তারা যে কোনো অজুহাতে নির্বাচন বয়কট করবে, নির্বাচন বানচাল করবে এমন সুযোগ খুঁজছে। কিন্তু এ দেশের জনগণ তা হতে দেবে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আবার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ‘আমরা একটি প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। কিন্তু ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ এমনভাবে চেষ্টা করছে যেন আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই।’

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলটির মধ্যে নির্বাচন বর্জনের চিন্তা ক্রমশই বাসা বাধছে। এরই মধ্যে আজ মঙ্গলবার আবার দুর্নীতির মামলায় বিএনপির পাঁচ শীর্ষ নেতাকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে বিএনপিতে নির্বাচন বর্জনের স্রোত আরও প্রবল হল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সম্ভাবনার পেছনে নির্বাচনের পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয়ের চেয়েও মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে কারণগুলো তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো, শরিকদের সঙ্গে আসন বন্টন ও ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা। বিএনপি দেখতে, যত সহজে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে তত সহজে সমঝোতা হচ্ছে না। প্রত্যেক শরিকের চাহিদা বিএনপি মেটাতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির অনেক ভালো মনোনয়ন প্রত্যাশীর বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেটি বিএনপিকে নির্বাচন বর্জনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

দ্বিতীয়ত, বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা এবার নির্বাচন করতে পারছেন না। এ পর্যন্ত বিএনপি মনোনয়ন প্রাপ্তদের যে তালিকা দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো আসনে এমনকি তিন বা চারজন প্রার্থীও দেওয়া হয়েছে। কারণ মামলার কারণে, দণ্ড পাওয়ার কারণে বা পলাতক থাকার কারণে বিএনপির অনেক মনোনয়ন প্রাপ্ত ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবেন না। এই বিষয়টিও বিএনপিকে নির্বাচন বর্জনের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে জানা গেছে।

তৃতীয়ত, বিএনপি যাঁদেরকে পোলিং এজেন্ট করবে বা বিএনপির পক্ষে যাঁরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে এমন নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা মামলা থাকায় তাঁরা এলাকায় থাকতে পারছেন না। এই নেতাদের অনেকেই পলাতক অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। স্থানীয় এই নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে তা চটজলদি করে প্রত্যাহার করার এবং তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কোনো আশু সম্ভাবনা নেই। তাই বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরাই এখন উল্টো সুরে কথা বলছেন এবং নির্বাচনে না যাওয়াটা ভালো বলে মোট দিয়েছেন।

তবে বিএনপি নির্বাচন বর্জনের চিন্তাভাবনার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে,  বিএনপি আশা করেছিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির পক্ষে জোয়ার উঠবে। কিন্তু বাস্তবে সে রকম কোনো জোয়ার তৈরি হয়নি। বরং সংস্কারপন্থী ও ত্যাগীদের বিরোধ এবং জোটের সঙ্গে শরিকদের বিরোধ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে দলের মধ্যেই নানারকম মত-পথের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপি মনে করছে, এবার নির্বাচনে গিয়ে হারার চেয়ে বরং নির্বাচন বর্জন করে একটি আন্দোলনের চেষ্টা করাই বেশি সম্মানজনক হবে।

সব মিলিয়ে নির্বাচনের যে সুবাতাস বিএনপির শিবিরে বইতে শুরু করেছিল তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে কতক্ষণ থাকবে বা আদৌ থাকবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয় বলে মনে করছে দেশের রাজনৈতিক মহল।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭