নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 03/12/2018
আশির দশকে ঢাকায় ভাইরাল হলো ক্যাসিও ঘড়ি। একশ টাকায় ঘড়ি। তরুণ থেকে বৃদ্ধের হাতে হাতে ঘড়ি। এরশাদ সরকার তখন ক্ষমতায়। অর্থমন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানাল, প্রচুর ঘড়ি চোরাচালান হয়ে আসছে। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বিমানবন্দরে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। পরে, অর্থমন্ত্রণালয় নিজস্ব টিম বসাল এয়ারপোর্টে। দেখল এক তরুণ পুরো এয়ারপোর্ট ম্যানেজ করে ক্যাসিও ঘড়ি বাংলাদেশে ঢোকাচ্ছে। এয়ারপোর্টে তার নাম ‘ক্যাসিও বাবর’। চোরাচালান চক্রের নেতা তিনি। থানা পুলিশ সবই তাঁর পকেটে। অর্থমন্ত্রণালয় তাঁকে গ্রেপ্তার করালো, কিন্তু ঘণ্টা দুইয়েক পরই তিনি থানা থেকে বেরিয়ে যান। বহাল তবিয়তে চোরাচালান করে বনে যান কোটিপতি।
৯১ এ বিএনপি ক্ষমতায় এলে মামুনের মাধ্যমে পরিচয় হয় তারেক জিয়ার সঙ্গে। ব্যস, এয়ারপোর্টের অঘোষিত মালিক বনে যান তিনি। তারেকের সব কাজের ম্যানেজার তিনি। ফাইফরমাস থেকে শুরু করে একান্ত গোপনীয় কাজ সামলে নেন। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় এলে, বাবরকে করা হয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। খোদ বিএনপিই এতে হতবাক হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেনকে সরিয়ে তাঁকেই দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব দায়িত্ব। প্রতিমন্ত্রী হলে কী হবে, বাবর ছিলেন তারেক জিয়ার ম্যানেজার। এমন কোনো কর্ম নেই যা তারেক তাঁকে দিয়ে করায় নি।
লুৎফুজ্জামান বাবর এখন জেলে। আগের সেই চুলে জেল নেই, প্রতিদিন নতুন শার্ট নেই। বরং আলখেল্লায় ঢাকা, লম্বা দাড়ি, হাতে তসবিহ। বাবর এখন অন্য মানুষ। জেলে সারাক্ষণ জিগির করেন আর তারেক জিয়াকে গালাগালি করেন। এখন বিএনপিতেও নেই। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, কিবরিয়া হত্যা মামলা সহ ১৯টি মামলায় আসামি বাবর। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে, সব হত্যা, অপহরণ সামলানোর দায়িত্ব ছিল বাবরের। অনেক সময়ই এরকম ঘটনাও ঘটেছে, একটা ঘটনা ঘটার পর ‘ভাইয়া’ তাঁকে ফোন করে, ‘ম্যানেজ’ করতে বলেছেন।
তবে, এগুলো বাবরের আসল কাজ ছিল না। জেলে তাঁর সঙ্গে যারা ছিলেন, তাঁদের বাবর বলেছেন অন্য কথা। বাবরের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁর আসল কাজ ছিল তারেক মামুনের চোরাচালান ব্যবসা দেখা। চোরাচালানে বাবরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তারেক মামুন চোরাচালানের নতুন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। আর এই নেটওয়ার্ক যেন ঝামেলা মুক্ত থাকে এটা দেখাই ছিল বাবরের প্রধান কাজ। বাবর মূলত: চোরাচালান করতো ঘড়ি, সোনা, বিদেশি সিগারেট, বিদেশি মদ। তাঁর রুট গুলো ছিল নখদর্পণে। চোরাচালান করে বিপুল সম্পদ বানায় বাবর। ২০০১ সালে দ্রুত টাকা বানাতে এই ব্যবসায় গুরুত্ব দেয় গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। আর ব্যবসা গুছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় বাবরকে। বিনিময়ে বাবর পান মনোনয়ন। অক্টোবর নির্বাচনের পর তারেক জিয়া যখন বাবরকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করার প্রস্তাব দেন, তখন বেগম জিয়াও চমকে গিয়েছিলেন। পরে তারেকের ইচ্ছার জয় হয়।
তারেক মামুন অবশ্য নিরীহ পণ্যের চোরাচালানে উৎসাহী কম ছিলেন। অস্ত্র এবং মাদক চোরাচালানেই তাঁদের আগ্রহ ছিল বেশি। বাংলাদেশে ইয়াবা প্রথম এনেছিল এরাই। এদের হাত ধরেই বাংলাদেশ ফেনসিডিলে সয়লাব করে দেওয়া হয়। আর ১০ ট্রাক অস্ত্র ছিল মাত্র একটি ঘটনা। এরকম অনেক অস্ত্র বাংলাদেশে ঢুকেছে। এজন্যই বাবরের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছিলেন তারেক।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭