ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা বধ মিশনে কারা ওরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/12/2018


Thumbnail

বাংলাদেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখেও রাজনৈতিক দল গঠনে হিড়িক পড়ে; ভোটের আশায় জোট করে, যদি এমপি হওয়া যায়, ইত্যাদি প্রত্যাশায়। কিন্তু এবছর নির্বাচনের আগে অন্যরকম একটা মেরুকরণ বিপ্লব হয়েছে বলা যায়। সবাই সুবধাবাদিদের প্লাটফর্ম মানে বিএনপি’র সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছে। এই মেরুকরণ বিপ্লব পরেই বসন্তের পাতা ঝরার মত করে আস্তে আস্তে বিভিন্ন দলের নেতাদের নেকাব খুলে পড়তে শুরু হয়েছে। স্পষ্ট হচ্ছে তাঁদের আসল চেহারা আর নৈতিক, রাজনৈতিক অবস্থান। তাই মনে হতে পারে যে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে! কারণ এখন রাজনৈতিক দল স্পষ্টত দুইটা হয়ে গেছে। একটা দল হচ্ছে কিছু মিত্রসহ আওয়ামী লীগ আরেকটা হচ্ছে দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিরোধী, শেখ হাসিনা বিরোধী।    

সুবিধাবাদীরা বা আওয়ামীলীগ বিরোধীরা আওয়ামীলীগের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা নষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে একাট্টা হয়ে শেখ হাসিনা বধ মিশনে নেমেছে। এরা একা না, তাঁদের সাথে আছে তাঁদের পছন্দের মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য অডিও, ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে তা প্রচার করা, বিদেশে বসে অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে মিথ্যাচার, লবিস্ট নিয়োগ করে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে হিরো বানানোর মিশন নিয়ে নেমেছে। এর পিছনে আছে পাকিস্তান আর ১৯৭১ সালে পাকিদের পক্ষে থাকা দুই একটা দেশ, যারা দিচ্ছেন কাড়ি কাড়ি অর্থের যোগান।      

তাই সুবধাবাদীদের প্লাটফর্মে যোগদান করা রাজনীতিকরা উল্টা সুরে গান গাচ্ছেন, সব লজ্জা-শরম ভুলে। মুখে মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু বলে ফেনা তুললেও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আর বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ খুনিদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশ বিদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছে। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে রাজনৈতিক দল করেছেন যাদের দলের গঠনতন্ত্রে লেখা উদ্দেশ্য আর লক্ষ্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ। কিন্তু তাঁরা নির্বাচনী জোট করেন জামায়াতের সাথে, সেই দল যার নেতারা ১৯৭১ সালে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে সাজা পেয়েছে, তাদের দলও নিষিদ্ধ হয়েছে। সেই জামায়াতের সাথে যেয়ে ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, রেজা কিবরিয়ারা মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন! ‘পাগল বিজ্ঞানীর ছেলে পাগল আইটি এক্সপার্ট’ সিজিব ওয়াজেদ জয়ের কল্যাণে তথ্য আর চাঁপা থাকে না, সবার কাছে পৌঁছে যায় ভালো মন্দ সব খবরই। সবাই জেনে গেছেন যে হয় পাক প্রীতি বা আর্থিক দুর্নীতির সুবিধা নিতেই জোটের বাহানায় এই নতুন মেরুকরণ। এখন অনেকেই জানেন যে, ড. কামালের শিকড় পাকিস্তানে। রেজা কিবরিয়ার মামা যাদু মিয়া কুখ্যাত রাজাকার (হয়তো মায়ের রক্তের প্রভাব), কাদের সিদ্দিকী দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত একটা মানুষ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ কামিনী না কাঞ্চনের লোভে গেছেন তা জানা যাবে শিগগিরই। গোলাম মাওলা রনিরা আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে বসে থাকা পাকি ছিল তা এখন সবার কাছে সুস্পষ্ট, এমন আরও আছে, পড়ে নেকাব খুলবে তারা।        

মিডিয়ায় আবার এদের অনেককেই প্রমোট করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত পরিচালিত প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এদের দিয়ে টক শো করায়। কি অবাক! যে দেশে বাদর নাচ দেখতে এক বা দুই শ লোক জড়ো হয় সেই দেশে যে সব নেতারা তাঁদের সমাবেশে ১০০ লোকের জমায়েত করতে পারেন না, আবার রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে মিছিল করে নগরীতে যানজট তৈরি করেন। তাঁদের সরিয়ে দিলে বলে সমাবেশের মত সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। কিন্তু ২১শে আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশ গ্রেনেড হামলা করে যখন প্রায় সিকি শত লোকের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়, তখন আর তাঁরা সমাবেশের সাংবিধানিক অধিকারে কথা মুখে আনেন না। এত কিছুর পরেও তাঁদের নিয়ে মিডিয়ায় বড় বড় নিউজ হয়। কি কারণে জানা যায় না। কিছু বাম, কিছু ধর্মাশ্রয়ী গোষ্ঠী আর কিছু মিডিয়া কোন এক অদৃশ্য বাঁধনে লেপাটা লেপ্টি করে আছে। একটা নমুনা দিই-       

৩০শে নভেম্বর ২০১৮ তারিখে প্রথম আলো ভুয়া ছবিসহ ‘হাউস অব কমন্সের প্রতিবেদন: দাবি পূরণ ছাড়া বিএনপির ভোটে আসা ছিল অপ্রত্যাশিত’ শিরোনামে একটা মিথ্যা খবর প্রকাশ করে। খবরে যুক্তরাজ্যের ‘হাউস অব কমন্স’এর বরাতে যা বলা হয়ে তা পুরোপুরি মিথ্যা। কথাগুলো বলেছেন জন লান, যিনি ‘হাউস অব কমন্স লাইব্রেরি’র একজন সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট। প্রথম আলোকে ব্যবহার করে তার একদার ‘একতা’ সম্পাদকের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই খবর প্রকাশ করেছে যা চরম অসৎ সাংবাদিকতা। যতদিন যাচ্ছে উন্মোচিত হচ্ছে তথাকথিত প্রগতিশীলতার মুখোশে প্রতিক্রিয়াশীলতার মুখোশ খুলে যাচ্ছে। এই সম্পাদক নিজের কর্মীকে বিপদে ফেলে নিজে মাফ চেয়েছিল বায়তুল মোকাররমে গিয়ে, যার সম্পাদক ইচ্ছাকৃত ভাবে ছবি বিকৃত করার নির্দেশ দিয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিলো গত নির্বাচনের আগে ২০০৭ সালে এক এগারোর সময়। সে সময় এই সম্পাদকের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। তিনি এবারেও নতুন খেলায় মেতেছেন। কয়েকদিন আগেও এই পত্রিকা জাপান টোব্যাকোর বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে মিথ্যাচার করেছে, যাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ ভয় পেয়ে বাংলাদেশে না আসেন। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে জাগরণ মঞ্চের আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন এই পত্রিকা মঞ্চের অন্যতম নেতা লাকীকে ‘বেশ্যা’ বানানোর চেষ্টায় তাদের পত্রিকায় নিবন্ধ ছাপেন। সাম্প্রতিক কালে সিনহা মিশনেও এই পত্রিকার সম্পৃক্ততার গুরুতর অভিযোগ আছে।এমন অনেক ভুয়া আর টুইটিং খবরের জন্মদাতা এই পত্রিকা আর তাদের সহযোগী কিছু মিডিয়া।        

এসব দেখে ১৯৭৩ সালের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে। ঘটনাটি আমি জেনেছি বঙ্গবন্ধুর এক ঘনিষ্ঠজনের কাছে। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে১৯৭৩ সালে খাদ্যের দাবিতে ঢাকায় ১৫-২২ মে অনশন ধর্মঘট হয়। বঙ্গবন্ধু নিজে এসে মাওলানা ভাসানীর অনশন ভাঙ্গাতে চাইলে মাওলানা ভাসানী সাথীদের অপেক্ষায় রেখে নিজেই নিজেই চলে যান বঙ্গবন্ধুর কাছে। পেপের জুস খাইয়ে বঙ্গবন্ধু নিজে মাওলানা ভাসানীর অনশন ভাঙ্গান। এর পর বঙ্গবন্ধুকে মাওলানা ভাসানী একান্তে বলেন যে, বঙ্গবন্ধু যেন নিজে যান বা ক্যামেরাম্যান পাঠিয়ে অনশনকারীদের ছবি তুলে নিয়ে রেখে দেন, যাতে কারা কারা তাঁর বিরোধী তাঁদের সবাইকে পরে ঠিকমত চিনে নিতে পারেন। বঙ্গবন্ধু বিরোধীদের প্রায় সবাইকে একটা প্লাটফর্মে আনার জন্য মাওলানা ভাসানী এই অনশনের আয়োজন করেছিলেন বলে দাবী করেন।   

মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বর্তমান রাজনৈতিক জোটের কে কে শেখ হাসিনা বধের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন, তাঁদের চিনে রাখার এটাই উপযুক্ত সময়। সমস্যা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে নিয়ে, এরা এসে কান্নাকাটি করলেই উনি ভুলে যান সব, ক্ষমা করে দেন, মনে কিছুই রাখেন না; কিন্তু ইতিহাস বলছে ক্ষমা করলেও কিছু কিছু কথা মনে রাখতেই হবে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে, নিজের জন্য না হলেও তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম, আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য।

লেখক: উন্নয়নকর্মী

          

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭