ইনসাইড থট

কৌশলী যুদ্ধে সব কিছুই কথার কথা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 06/12/2018


Thumbnail

লেখালেখির, বলাবলির, দেখাদেখির হাজার বিবৃতি সামনে আসলেও গুণগত পরিবর্তন কি কোথাও দৃশ্যমান?  মনে হয় না। বুদ্ধিজীবী টকশো করছে, কলামিস্ট কলাম লিখছে, সাহিত্যিক সাহিত্য নিয়ে দিনপার করছে, রাজনীতিবিদ মঞ্চে ভাষণ দিয়েই চলেছে। কিন্তু পরিবর্তন কোথায়? সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন ঘিরে এই সময় অবধি চলেছে কৌশলী যুদ্ধ। অর্থাৎ কে কতটা কৌশলগতভাবে এগিয়ে সেই যুদ্ধে এখনও আবর্তিত। হয়তো কয়েকদিনের মধ্যেই কৌশলী যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। শুরু হবে দ্বিতীয় রাউন্ড। সেই রাউন্ডকে কি বলে আখ্যা দেওয়া যাবে, সেটা এই মুহুর্তে বলা মুশকিল। কারণ কৌশলী যুদ্ধে জয় পরাজয় এখনও নির্ধারণ হয়নি। 

এতকিছুর মাঝখানে বাংলাদেশ ভাবনা অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভাবনা সবকিছুই থেকে যায় পর্দার আড়ালে। অথচ কৌশলী যুদ্ধের প্রথম এবং প্রধান হাতিয়ার সেই সাধারণ মানুষ। 

বলতে কেউ কম বলে না, দেখতেও কেউ কম দেখে না, শুনতেও কেউ কম শোনেনা।  সবকিছুই হয় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। যার কারণে যে যা বলছে সেটা যেমন বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব নয়, যে যা দেখছে সেটাও ঠিক নয়, যে যা শুনছে সে সব সত্য নয়। 

বিজ্ঞানের থিওরিতে, ট্রান্সফরমারের কয়েলের যে প্যাচ সংখ্যা, যে পরিমাপ সেটা থেকে কম হলে যেমন সঠিক পাওয়ার স্থান্তর হয় না, আবার বেশি হলেও হয়না। একটি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল হিসাব সঠিক পাওয়ার দিয়ে থাকে। 

নির্বাচনে কৌশলগত যুদ্ধে, কোন কিছুরই কমতি থাকে না।  তাই এই সময়ে জনগণকে দেওয়া ওয়াদা কোনোটাই সঠিক নয়, কোনটাই শেষ অবধি স্থায়িত্ব পায়না। কারণ কৌশলগত যুদ্ধের জয় পরাজয়ের পরেই ২য় রাউন্ড কি হবে সেটাই নির্ধারণ করে দেবে আসলেই জনগণ কি পাবে। 

আর তাই যে যাই বলুক, যে যাই দেখুক, যে যাই শুনুক মূলত নির্বাচনে জয়ের পাল্লা অন্তত এবার ভারি হবে অতীতকে বিশ্লেষণ করে।  অতীত মানুষকে কি দিয়েছে, কার দেওয়ার এবিলিটি আছে, কার সেই বিশ্বাসযোগ্যতা আছে সেটার হিসাবেই নির্বাচনের জয়ের পাল্লা ভারি হবে বলেই মনে হয়। 

একটু যদি মিলিয়ে নেন তাহলে ভালো হয়, কৌশলী যুদ্ধে কে কতটা এগিয়ে।

১০ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ রয়েছে একটি স্থিতিশীল অবস্থানে। অন্যদিকে ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি নির্বাচনী লড়াইয়ে ফিরতে প্রথমে জাতীয় ঐক্যজোট, পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, এরপরে ঐক্যফ্রন্ট, এরপরে আবার বিএনপিতে ফিরে এসেছে। 

মাঝখান থেকে ঐক্যফ্রন্ট বলতে মূলত যারা ছিলো, সকলেই হলো ভাঙাকুলা। ছাই ফেলা হয়ে গেলেই ঝরে যাবে অকালে। 

সকলেই এলো মনোনয়ন দাখিলে। বিএনপি আসন প্রতি গণহারে নমিনেশন দিয়ে বুঝিয়ে দিলো, তাদের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে গলদ। একজন বাদ গেলেও যেন আসনে প্রার্থী কেউ না কেউ থাকে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে অধিক সংখ্যায় ব্যক্তিদের নমিনেশন দিয়ে প্রাথমিক বিরোধ জটিলতা থেকে বেঁচে থাকার একটি অভিপ্রায়, একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি অভিপ্রায়। যেহেতু তারা জানতেন যে, বিএনপির দুই নেতা নির্বাচন করতে পারবেন না, আইনের হাতে বন্দি সেহেতু তাদের সকল বলাবলি, শোনাশুনি, দেখাদেখি উক্ত ২ জনকেই মুক্ত করার জন্য। যেখানে দেশ বা জনগণ মুখ্য নয়। শেষ অবধি যদি তারা বুঝতে পারে, কোনোমতেই নির্বাচনে জয় পাওয়া সম্ভব নয়, তাহলে শেষ অপশন নির্বাচন বানচাল করা এবং একটি অস্থির সময়, অস্থির পরিবেশ তৈরি করা। সেই বানচালে কোন পথ দিয়ে করবে সেটা বোঝা যাবে ২য় রাউন্ডে। 

অপরদিকে আওয়ামী লীগের মহাজোট যার যার প্রতিকে আলাদা ভাবে প্রার্থী দিয়েছে প্রায় সব আসনেই। যার ফলে বিএনপি যদি নির্বাচন বানচালের পথে এগিয়েও যায়,  নির্বাচনে যদি অংশ নাও নেয় তবুও ৩০০ আসনের প্রায় সব আসনেই লড়াইয়ে থাকবে ৩/৪ জন করে ভিন্ন ভিন্ন দলের প্রার্থি। 

যেহেতু উন্নত দেশ সমুহে ৫০ শতাংশ ভোট কাস্ট হলে নির্বাচনকে শুদ্ধ বলে মনে করা হয়, সেহেতু বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ ভোট কাস্ট হলেই নির্বাচন শুদ্ধ বলেই বিবেচিত হবে। 

তাই বলা যায় কৌশলী যুদ্ধে আওয়ামীলীগ এগিয়ে রয়েছে অনেকটাই। এই এগিয়ে থাকা বিএনপিকে ২য় রাউন্ডে কোন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। 

বাকি রইল দেশের জনগণ। তারা যদি বুঝে থাকে ১ম রাউন্ডের সব বলা, সব শোনা, সব দেখা হলো চাপাবাজি।  তাহলে তারা অতিতকে বর্তমানে এনেই রায় প্রদান করবে বলেই আমার ধারণা। কার আমলে কি পেয়েছে, কতটা পেয়েছে, সেটাই হবে তাদের বিবেচ্য বিষয়।

লেখক: কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, দুর্জয় বাংলা সাহিত্য ও সামাজিক ফাউন্ডেশন



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭