কালার ইনসাইড

খান আতাউর রহমানঃ শিল্পমনা এক ভবঘুরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/12/2018


Thumbnail

অনেকের মতো খান আতাউর রহমানের কৈশোর কেটেছে দুরন্তপনায়। শিল্প-সংস্কৃতির টানে কৈশোরে দু’বার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। শিল্পের প্রায় সব শাখায় বিচরণ করেছেন। সফলও হয়েছেন। জীবদ্দশায় নির্মাতা ও সংগীতজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও- বাচিক শিল্প, অভিনয়, আলোকচিত্র, চিত্রকলা, লেখালেখি, শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পীর আজ (১১ ডিসেম্বর) ৯০ তম জন্মদিন।

খান আতাউর রহমানের জন্ম ১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জে। মা তাঁকে আদর করে ‘তারা’ বলে ডাকতেন। তাঁর মামা ছিলেন আধ্যাতিক ধাঁচের গায়ক। বিভিন্ন ধর্মীয় আসরে গান করতেন। যার ফলে শিশু বয়সেই খান আতার মাথায় সংগীতের বীজ বপিত হয়। মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি সংগীত প্রতিযোগিতায় ঢাকা জেলায় প্রথম স্থান লাভ করেন।

ঢাকা কলেজিয়েট ও ঢাকা কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ১৯৪৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন খান আতা। ওই সময় তিনি অভিনয় করবেন বলে বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিচিত একজনের চোখে পড়ে গেলে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মেডিকেল কলেজ ছেড়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভবঘুরে স্বভাবের কারণে সেখানেও থাকলেন না। সে সময় তিনি লন্ডনে আলোকচিত্র বিষয়ক একটি বৃত্তি লাভ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি সেখানে যাননি। ১৯৪৯ সালে তিনি আবারো বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে মুম্বাইয়ে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন, চলচ্চিত্র জগতের আনাচে কানাচে গিয়েছেন। এরপর জাল ইরানি নামক এক চিত্রগ্রাহকের সহকারী হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেন।

মুম্বাই থেকে ১৯৫০ সালে খান আতা করাচিতে ফিরে যান। সেখানে রেডিও পাকিস্তানে একজন সংবাদ পাঠক হিসেবে যোগ দেন। কাজের সূত্রে তাঁর পরিচয় হয় চলচ্চিত্রকার কামাল লোহানির সঙ্গে। রেডিওতে কাজ করার পাশাপাশি তিনি খ্যাতনামা উচ্চাঙ্গসঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ জহুরী খানের কাছে সঙ্গীতে তালিম নেন। ১৯৫২ সালে তিনি লন্ডনের সিটি লিটারারি ইনস্টিটিউটের নাট্যকলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে তিনি কিছুদিন চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সান্নিধ্য লাভ করেন। এরপর ইউনেস্কোর বৃত্তি নিয়ে ১৯৫৪ সালে শিক্ষা সফরে হল্যান্ড যান। লন্ডনে ফিরে একটি কলেজে অঙ্ক ও ইংরেজির শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন থিয়েটার কোম্পানিতে প্রায় দুই বছর কাজ করেন।

খান আতা ১৯৫৬ সালে ঢাকায় ফিরে ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ ছবির সাথে যুক্ত হয়ে ভারতের বিখ্যাত অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্রের বিপরীতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। অভিনয়ের পাশপাশি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনাও করতে শুরু করেন। তার রচিত ও সুরারোপিত পাঁচ শতাধিক আধুনিক, দেশাত্মবোধক, শিশুতোষ ও বিষয়ভিত্তিক গান আজো জনপ্রিয়। বিশেষত দেশাত্মবোধক সঙ্গীতে তার সুর সৃষ্টির ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। খান আতাউর রহমান একটি বিশেষ গায়কী ঢং প্রবর্তন করেন।

১৯৬৩ সালে চলচ্চিত্র পরিচালনায় নামেন খান আতা। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘অনেক দিনের চেনা’। এরপর তিনি ‘রাজা সন্ন্যাসী’, ‘সিরাজউদ্দৌলা’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘সুজন সখী’, ‘আরশী নগর’, ‘এখনো অনেক রাত’- এর মতো কালজয়ী চলচ্চিত্র তৈরি করেন। এছাড়া ‘ডানপিটে ছেলে’, ‘দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি’, ‘গঙ্গা আমার গঙ্গা’, ‘বাংলার কবি জসীম উদ্দীন’, ‘চা বাগানের রোজনামচা’ ও ‘গানের পাখি আব্বাসউদ্দীন’ নামে বেশকিছু তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন।

শিল্প-সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন তিনি। ১৯৯৭ সালের ১ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই কিনবদন্তি।

বাংলা ইনসাইডার/এইচপি/জেডএ   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭