ইনসাইড থট

অত্যুৎসাহীরা কারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/12/2018


Thumbnail

দেশ এখন ডিজিটাল। ডিজিটাল বাংলাদেশের তথ্যের অবাধ প্রবাহ। তথ্যের অবাধ প্রবাহের যেমন সুবিধা আছে, অসুবিধাও আছে কিছু। অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগে কিছু অপপ্রচারেরও সুযোগ থাকে। তবে এজন্য আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। পাশপাশি প্রচলিত আইন তো আছেই। কিন্তু সরকারের মধ্যে কিছু ব্যক্তি আছে যাঁরা প্রচলিত পথে না গিয়ে হুটহাট করে এমন কিছু কাজ করে বসেন যা সরকারের বিরুদ্ধে যায়। এরকমই কিছু মানুষের সিদ্ধান্ত ছিল গতকাল সোমবার হুট করে ৫৮ টি অনলাইন পোর্টাল বন্ধের নির্দেশনা।

সরকার একবার ফেসবুক বন্ধ করে রেখেছিল, যা তরুণ সমাজের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। এরপর আবার ভাইবার বন্ধের প্রতিক্রিয়াও ছিল একই রকম। আর এমন দুটি সিদ্ধান্তের জন্য তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হলিমকে বদলিও হতে হয়েছে। আবার সম্প্রতি বিএনপির মনোনয়ন সাক্ষাৎকারে দণ্ডিত ও লন্ডনে পলাতক দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া স্কাইপেতে হাজির হন। পরদিনই স্কাইপে বন্ধ দেখা গেল। ক্ষতির মুখে পড়ল অনলাইনে কাজ করেন এমন তরুণরা। কিন্তু তারেক জিয়া ঠিকই ভিন্ন গেটওয়ে ব্যবহার করে হাজির হলেন ঠিকই। প্রমাণ হলো, ডিজিটাল বাংলাদেশে কোনোকিছু বন্ধ করে রাখা যায় না। এরপরও গতকাল সোমবার ৫৮টি নিউজ পোর্টাল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলো কেন?

গতকাল সোমবার সকাল বেলায়ই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত খবর আসে ৫৮ টি নিউজ পোর্টাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। প্রিয় ডটকম, ঢাকা টাইমস, পরিবর্তনসহ ৫৮ পোর্টাল বন্ধের নির্দেশে অনলাইনে ব্যাপকভাবে প্রচারণা পায়। অবশ্য নিউজ পোর্টালগুলো শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। কারণ বিকেলে আরেক নির্দেশনা বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বিটিআরসি।

আমরা মনে করি, যেকোনো গণমাধ্যম কোনো অন্যায় বা ভুল করে থাকলে এজন্য তাকে কারণ দর্শাতে হবে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি বলতে হবে। অভিযুক্ত গণমাধ্যম যদি কোনো সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারে, কেবল তাহলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু হুট করে কোনো কারণ না জানিয়ে কোনো সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কেউ কোনো অন্যায় করলে এর প্রতিকার নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দিতে হবে।

সোমবার ৫৮ অনলাইন বন্ধের নির্দেশে কোথাও বলা হয়নি কী কারণে বন্ধ হবে। এমন নির্দেশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ কাউকে কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অভিযোগ এনেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আর গতকালের এমন প্রশ্নবিদ্ধ নির্দেশের কারণে সরকারের সমালোচনার সুযোগ পেল সরকার বিরোধীরা। 

সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ল, সরকারের কারণেই আজ ইন্টারনেট ব্যবহারের বিপ্লব হয়েছে বাংলাদেশে। অথচ, এই সব অর্জনকেই ম্লান করে দিল গতকালের বিটিআরসির নির্দেশ। বিরোধীরা জনগণের মধ্যে এমন ধারণা প্রচারের সুযোগ পেল সরকার মত প্রকাশের বিরুদ্ধে। তাই অত্যুৎসাহী নির্দেশদাতারাই সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। অত্যুৎসাহী নির্দেশদাতাদেরই নজরদারিতে আনা জরুরি হয়ে গেছে।

গণমাধ্যম যাই হোক না কেন, মূল ধারার হোক বা অনলাইন, স্বতঃ:স্ফূর্ততার নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি, যদি কোনো ভুল কোনো সংবাদ পরিবেশন করে, অসুস্থ প্রচার বা কুৎসা রটনা করে তাদের মানুষ বেশিদিন গ্রহণ করে না। ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর দিয়ে বেশিদিন পাঠক ধরে রাখা যায় না। একটা সময় মানুষ ঠিকই বুঝতে পারে। এরপর আর তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।

গতকালের ৫৮ অনলাইন পোর্টাল বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই আবার তা আবার তুলে নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে নির্দেশদাতার অজ্ঞতা এবং অস্থিরতারই প্রকাশ ঘটেছে।

তাই আমরা আশা করবো, এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলো যেন হুটহাট করে না নেওয়া হয়। নির্দেশনা গুলো যেন বিবেচনাপ্রসূত হয়, প্রজ্ঞার সঙ্গে নেওয়া হয় এবং যুক্তির নিরিখে করা হয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, যেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, যিনি আক্রান্ত তিনি যেন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান। কোনো ঢালাও অভিযোগ ও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া, কোনো গণতান্ত্রিক রীতি নীতি নয়ই, সভ্য সমাজের সংস্কৃতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। 

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭