ইনসাইড আর্টিকেল

সারাবছর শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় থাকুক বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/12/2018


Thumbnail

রাত পোহালেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। তাই আমার আজকের গন্তব্য মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। সকাল ১১ টায় রিকসা করে পৌছে গেলাম স্মৃতিসৌধ এলাকায়। চারিদিকে তাকিয়ে নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। একি আমি কি আসলেই রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ দেখছি?

স্মৃতিসৌধ এলাকা এবং সামনের রাস্তা ঝকঝকে পরিষ্কার পরিছন্ন। স্মৃতিসৌধের সামনে নেই কোন অস্থায়ী দোকানপাট। সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি দিয়ে পানি ছিটানো হচ্ছে যেন ধুলাবালি না ওড়ে। সেই সাথে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত লোকজনেরও তৎপরতা দেখতে পেলাম। স্মৃতিসৌধের মূল গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর বাধার মুখে পড়লাম। নিজের নাম পরিচয় দিয়ে অবশেষে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পেলাম। ভিতরে ঢুকে আজ যেন নতুন এক স্মৃতিসৌধের দেখা পেলাম। যার সঙ্গে আগে দেখা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের কোনো মিল নাই। চারিদিকে ধোয়ামোছার শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। কোথাও নেই কোন ময়লা-আবর্জনা, নেই কোন ছিন্নমূল মানুষের ভিড়, নেই কোন বখাটে ও নেশাখোরদের আনাগোনা। চারিদিকে টানানো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ফেস্টুন এবং ব্যানার। চারিদিকে সবাই ব্যস্তভাবে যার যার কাজ করে চলেছে। সেই সাথে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ কর্মীদের দেখলাম ভিডিও চিত্র ধারণ করছে। পরিষ্কার পরিছন্ন আজকের স্মৃতিসৌধ দেখে আমার নিজের মনেও পবিত্রতার একটা ভাব লক্ষ্য করলাম। সেই সাথে নিজের মনে আরও একটি প্রশ্নের দেখা দিল, কেন শুধু বুদ্ধিজীবী দিবস আসলেই আমাদের গর্বের এই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ পরিপাটি রুপ পাবে, সারা বছর কেন এমন পরিস্কার-পরিছন্ন-পরিপাটি থাকবে না?

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে নির্মাণ করেন রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে এবং শেষ হয় ১৯৯৯ সালে। 

এবারে স্মৃতিসৌধের উল্টো পাশের রাস্তায় চা পান করতে করতে সারাবছর স্মৃতিসৌধের পরিবেশ কেমন থাকে জানতে চাইলে এখানকার একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সবসময় এই জায়গাটা একটু নোংরা থাকে। অনেকে নেশা খায়। ১৪ ডিসেম্বরের আগে যেমন ধোয়া মোছা করা হয়, সারা বছর এমন করলে অনেক ভাল হত। দেখতেও ভালো লাগতো। সারাবছর অনেক দেশ-বিদেশের মানুষ এখানে আসেন স্মৃতিসৌধ দেখতে। বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে। তাঁরা যখন এখানে নোংরা অবস্থা দেখে তা তো আমাদের দেশেরই দুর্নাম।’

চা পান শেষে ভালো করে আরেকবার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধটি দেখার জন্য তাকাতেই মনে হল পরিচিত কাউকে দেখতে পেলাম। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম আরে ইনিতো নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গেরিলা ছবির পরিচালক, তার থেকেও বড় পরিচয় তিনি একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। কাছে গিয়ে নাম পরিচয় বলে তার কাছ থেকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সারা বছরের এমন পরিস্থিতি থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবারে আমি আগের থেকে অনেকটা ভালো পরিবেশ দেখছি। সরকারকে শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বুদ্ধিজীবীদের এই স্থাপনা প্রতিটির জন্য আলাদা নিয়ম কানুন করতে হবে। সেই নিয়ম কানুনগুলো রক্ষা করার জন্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক এবং যথাযথ বরাদ্ধ থাকতে হবে। এখানে যদি পুলিশ বাহিনী বা বিজিবি’কে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে এটার রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিষ্কার পরিছন্নতা রক্ষা হবে। পাশাপাশি এখানে প্রতিদিন যখন পতাকা উত্তোলন করা এবং নামানো হয়, সেই সময় যদি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় অথবা যদি কোন একটি বিউগলের সুরে যদি পতাকা উত্তোলন করা হয়, তাহলে এখানে যারা আসে তাঁরা তখন এই স্মৃতিসৌধের পবিত্রতা সম্পর্কে অনুভব করতে হবে। এখানে যারা আসেন তাঁরা এই স্থাপনার পবিত্রতা তেমনভাবে অনুভব করতে পারছেন না।’ 

রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পাশাপাশি আমাদের গর্বের শহীদ মিনার এবং সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত সকল স্থাপনা শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ দিনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিবেদনের জন্য নয় বরং সারা বছর সকল বাঙালির অতল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় থাকুক এমন প্রত্যাশাই সকলের।

বাংলা ইনসাইডার/আরকে/এমআর

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭