নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 14/12/2018
জাতীয় পতাকা যেকোনো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এটা যেকোনো জাতির পরিচয় বহন করে। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে নকশা করা হয় বিভিন্ন দেশের জাতীয় পতাকা? বেশ কিছু দেশের পতাকা কেনই বা একই ধরনের হয়ে থাকে? আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে জাপানের পতাকার রয়েছে অদ্ভুত মিল। ঠিক সেরকম ইউরোপ কিংবা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশের পতাকাও একই ধরনের মনে হয়। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের পতাকার নকশা একই রকম হওয়ায় দেশ দুটি রীতিমতো বাকযুদ্ধেই জড়িয়ে পড়েছিল। অন্যদিকে নেপালের পতাকা্র আকৃতি আবার সবার থেকে আলাদা। দেশে দেশে পতাকায় কেন এতো সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য? এখানে কয়েকটি দেশের পতাকার রহস্যই তুলে ধরা হলোঃ
নেপাল
নেপালের জাতীয় পতাকাটি একটু অদ্ভুতই বলা চলে। এটি পৃথিবীতে বর্তমানে টিকে থাকা একমাত্র জাতীয় পতাকা, যেটি চারকোনা আকৃতির নয়। দুটি ত্রিভুজকে পরপর সাজিয়ে এই পতাকার নকশা করা হয়েছে। দুটি ত্রিভুজ সেখানকার রাজবংশের দুই অংশের প্রতীক। আর রক্তিম বর্ণ নেপালের জাতীয় ফুল রডোডেনড্রন ফুলের প্রতিনিধিত্ব করে। নীল প্রান্ত শান্তির প্রতীক। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই পতাকার অর্ধ চন্দ্র ও সূর্য়্যে মানুষের মুখ অংকিত থাকত। পরবর্তিতে তা বাদ দেয়া হয়।
জাপান
জাপানের পতাকায় আমরা সাদা পটভূমির মাঝে লাল চাকতি দেখতে পাই। লাল চাকতিটি উদীয়মান সূর্যের প্রতীক। কথিত আছে, বেশ কয়েক শতক আগে জাপানিজরা তাদের সম্রাটকে সূর্য দেবী আমাতেরাসুর বংশধর বলে মনে করতেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মঙ্গোলরা জাপান আক্রমণ করে। সেসময় বৌদ্ধ ভিক্ষু নিচিরেন নিজেদের প্রতীক হিসেবে সূর্য খচিত পতাকা প্রস্তাব করেন। এরপর ধীরে ধীরে এই লাল সূর্যই জাপানের প্রতীক হয়ে ওঠে।
মোজাম্বিক
আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের পতাকা একমাত্র জাতীয় পতাকা যেখানে আধুনিক মরণাস্ত্রের নকশা রয়েছে। পতাকাটিতে একে ৪৭ বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছে। এটা তাদের প্রতিরক্ষার প্রতীক।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাষ্ট্র
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাষ্ট্র অর্থাৎ ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ডের পতাকাগুলোর নকশা প্রায় একই ধরনের। এই দেশগুলোর পতাকায় একটি ক্রস চিহ্ণ আছে। আয়তাকার ক্ষেত্রের উপর এক রং বা দুই রং বিশিষ্ট এই ক্রসকে বলা হয় স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ক্রস বা নর্ডিক ক্রস। ক্রসটি একপাশে এমনভাবে চাপানো থাকে, যেন ঐ পাশের চৌকোনা ক্ষেত্র দুটি বর্গাকার হয়। ১০৯৫ থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত খ্রিস্টানদের বেশকিছু যুদ্ধে ক্রস বিশিষ্ট পতাকার ব্যবহার হয়েছিল। পরবর্তীতে ডেনমার্কের রাজারা তাদের যুদ্ধের পতাকায় এই ক্রসের ব্যবহার শুরু করেন। আধুনিককালে নর্ডিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নরওয়ে প্রথম এই নকশাটি গ্রহণ করে ১৮২১ সালে। এরপর ১৯০৬ সালে সুইডেন এই ক্রস অনুযায়ী নিজেদের পতাকার নকশা করে। পরবর্তীতে গ্রীনল্যান্ড বাদে অন্যান্য প্রতিবেশী নর্ডিক রাষ্ট্রগুলোও তাদের ধর্ম, ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে একই ধরনের পতাকার নকশা গ্রহণ করে।
মধ্য আমেরিকান রাষ্ট্র
মধ্য আমেরিকার হণ্ডুরাস, নিকারাগুয়ে, এল সালভাদর এবং গুয়াতেমালার পতাকার মধ্যে রয়েছে দারুন সাদৃশ্য। চারটি দেশের পতাকাই আসমানী-সাদা-আসমানী সমান্তরাল তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর কারণ হলো, এই চারটি দেশই ফেডেরাল রিপাবলিক অব সেন্ট্রাল আমেরিকা নামের একক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে স্বাধীনতা অর্জনের পর প্রত্যেকেই মূল রাষ্ট্রের পতাকার সাথে মিল রেখে নিজেদের পতাকার নকশা তৈরি করে। পতাকাগুলোর দুই পাশের নীল বা আসমানী রংয়ের মাঝে সাদা রং দিয়ে সাধারণত দুই মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত ভূমিকে নির্দেশ করা হয়।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭