কালার ইনসাইড

মুক্তিযুদ্ধের সিনেমাতেই যত কৃপণতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/12/2018


Thumbnail

বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে এখনও ইউরোপ আমেরিকায় সাড়া জাগানো সব চলচ্চিত্র তৈরি হয়। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে হাতে গোনা কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। সেসব সিনেমা দেখলেই বোঝা যায় কত স্বল্প বাজেটে নির্মিত হয়েছে! সোহেল রানা, রাইসুল ইসলাম আসাদরা তো অকপটে বলেই দেন, এখন পর্যন্ত কোন মুক্তিযুদ্ধের যথার্থ সিনেমা হয়নি। সেই কাঠের বানানো বন্দুক আর টুকটাক যুদ্ধের দৃশ্যই মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। এর মধ্যে আবার দেখানো হয় প্রেমের রসায়ন। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চিত্র এখন পর্যন্ত কোন ছবিতে ফুটে উঠেনি বলেই ভাবেন অনেকে।

গত ৪৭ বছরে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৫০ এর কিছু বেশি। ১৯৭১ এ স্বাধীনতার পর বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি তৈরি হয়- যা বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল। কিন্তু সেই ধারা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। আস্তে আস্তে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা হয়ে যাচ্ছে অলাভজনক শুধুমাত্র পুরষ্কিত সিনেমা। যার ফলে অনেক নির্মাতাই এ সিনেমা বানাতে আগ্রহী হন না।

এখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র মানেই ধরা হয় যে এগুলো বাণিজ্যিক ধারার বাইরে একরকম বিকল্প ধারার সিনেমা। কিন্তু বাণিজ্যিক নির্মাতারা এখন মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে খুব কমই চলচ্চিত্র তৈরি করেন। এর কারণ কী?

এর কয়েকটি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে দলীয় মতভেদ। নির্মাতারা একরকম পিঠ বাঁচিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেন। কোন সরকারের মতানৈক্য যেন না হয়, সচরাচর সেই বিষয়টিই প্রথমে নজড়ে রাখেন। নানা ইস্যুতে মত-বিভেদ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র তৈরির একটি বাধা বলে মনে করছেন এর সাথে সংশ্লিষ্টরা। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা বানাতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়ার একটি আশংকায় থাকেন নির্মাতারা।

বাংলাদেশের রাজনীতির কারণে অনেকটা সময় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণকে ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা করা হয়েছে। ৪৭ বছরে মুক্তিযুদ্ধকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিকে আমরা ক্ষমতায় থাকতে দেখেছি। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল সেসময় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণকে অবহেলা করা হয়েছে। সেন্সর বোর্ড ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করেছে।"

অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ভেতর এমন ছবি তৈরির মেধা ও যোগ্যতা নেই। তাইতো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি ছবি একই রকম হয়। নানান ভাবে গল্প বলার জন্য যে মেধা দরকার, গবেষণা দরকার, ফুটেজ ব্যবহারের দক্ষতা- আমাদের মেইনস্ট্রিম নির্মাতাদের তা নাই বললেই চলে।

১৯৭২ সালে তৈরি বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি ওরা এগারোজন। তার একটি দৃশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আসল একটি ফুটেজ। কিন্তু সেই ফুটেজটিই ঘুরে ফিরে এখনো ব্যবহার করা হয়।

বাণিজ্যিক নির্মাতারা কেন এমন ছবিতে অর্থ খরচ করেন না এমন প্রশ্ন খোঁজা হয়েছিল খ্যাতিমান কয়েকজন পরিচালকের কাছে, তাদের এককথা,‘বিনিয়োগ ফেরত না আসার শঙ্কায় বাণিজ্যিক নির্মাতারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেন না। অল্প বাজেটে করলেও সেই টাকা উঠে আসে না। বাণিজ্যিক সিনেমার নির্মাতারা তাইতো ঝুঁকি নিতে চায় না। বাংলাদেশে যে পরিমাণ সরকারী অনুদান দেয়া হয়। সেটাও যথেষ্ঠ নয় একটি যুদ্ধের সিনেমার জন্য।’  

সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গুরুত্বপূর্ণ কোনো গেরিলা অভিযান, সে সময়কার নানা রাজনৈতিক ঘটনা, এর আগে ও পরের রাজনীতির পটভূমি তার কোনটাই মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কোন চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেনি। সেভাবে দেখা যায়না যেমনটা দেখা যায় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে তৈরি পশ্চিমা অনেক ছবিতে।

বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’র প্রযোজক সোহেল রানা। তিনি অবশ্য দাবি করেন ‘ওরা ১১ জন’ সিনেমা নয় ডকুমেন্টরি। তিনি বলেন,‘মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবিতে দরকারি সেই সময় ব্যবহৃত অনেক সামগ্রী এখন আর নেই। ম্যাক্সিমাম মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে তখনকার আর্মিদের যে পোশাক ব্যবহার করা হয়েছে তা ভুল। সেই পোশাকতো এখন আর নেই। যে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করেছিলো সেগুলোও আর পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের ব্যবহৃত গাড়িও নেই। সেসময় ব্যবহৃত এরকম আরো কিছুর অভাবে কোন ছবিই যথার্থতা পায়নি। আর সবাইকে বুঝতে হবে দেশ ৭১ এ স্বাধীন হলেও ৭৫ এর পর একটা লম্বা সময় আমাদের হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। তারপর তো ইতিহাস বিকৃতি শুরু। এসব নানা কারণে আসলে প্রপার সিনেমা নির্মাণ হয়নি। আর আমাদের দেশে তো স্পিলবার্গও নেই, কিংবা কোন পরিচালক সেই সময় ও মেধা নিয়ে সিনেমাও নির্মাণ করতে পারবেন না। পরিচালককে সেই বাজেট তো দেওয়া সম্ভব নয়।’


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭