ইনসাইড থট

শ্রদ্ধার নামে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ড. কামালদের প্রহসন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/12/2018


Thumbnail

১৯৭১ সাল। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের বছর। সারাদেশের চলছে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ। মুক্তিকামী বাঙালি গেরিলাদের একের পর এক আক্রমণে পর্যবসিত পাক হানাদার বাহিনী। যশোর, পাবনা, লক্ষীপুর, জামাল্পুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা গ্রাম, উপজেলা, জেলা মুক্ত করে ঢাকায় ঢুকে পড়েছে।  মুক্তিকামী বাঙালি তখন বিজয়ের আনন্দে বিভোর।

দিশেহারা হানাদার বাহিনীর চোখেমুখে তখন অন্ধকার। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এত এত আত্মসমর্পণের পর তারা বুঝে উঠেছিল পরাজয় ছাড়া তাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। চূড়ান্ত পরাজয় তাদের কাছে সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর সে মুহূর্তেই তারা তাদের পাকিস্তানি দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে চূড়ান্ত পরাজয়ের ঠিক দুইদিন আগে। চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক, চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পী কেউই বাদ যায়নি তাদের নির্মমতার হাত থেকে। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি হায়েনার দল। লাশগুলোকে করা হয়েছিল ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত।  জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল ঢাকার বিভিন্ন ডোবা ও জলাশয়ে। সেইসব জলাশয়কে ঘিরেই গড়ে উঠেছে বধ্যভূমি।

আজ ১৪’ই ডিসেম্বর জাতি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, প্রতিথযশা ব্যক্তিত্ব, সাধারণ জনগণ শ্রদ্ধা জানিয়েছে স্মৃতিস্তভে। সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামাতের সঙ্গে জোট গড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও।

এদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে লাভবান রাজনৈতিক দলটির নাম জামাত। স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী কোন দল স্বাধীনতা লাভের পরও সেইদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছে তাঁর দৃষ্টান্ত বিরল। কিন্তু সব অসম্ভবের দেশ এই বঙ্গদেশে এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে তারা। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা কালো চশমার মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধী জামাতের গোলাম আজমকে পাকিস্তান থেকে নিয়ে এসে এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিলেন। মতিউর রহমান নিজামী, সাঈদী, কাদের মোল্লারা এদেশের রাজনীতিতে শক্ত আসন গড়েছিলেন, হয়েছিলেন মন্ত্রী, তাদের গাড়িতে উঠেছিল জাতীয় পতাকা। জামাতের সঙ্গে বিএনপির গড়ে উঠেছিল দহরম-মহরম সম্পর্ক। গোল্ডফিশ বাঙালিকে ভুলতে বাধ্য করা হয়েছিল তাদের ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধের কথা, যুদ্ধের বিরোধিতার কথা, পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিলে এদেশের মানুষের ওপর বর্বরতার কথা।

শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। আদালত যাবজ্জীবনের রায় পরিবর্তন করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এরপর একে একে জামাতের বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধী নেতা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়। সাঈদীর মত কুখ্যাত রাজাকার যাবজ্জীবন দণ্ডে জেলে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ফলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে জামাত। ২০১৩ সালেই নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। কিছুদিন পূর্বে সেই নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। ফলে জামাত নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারায়।

কিন্তু জামাতের দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি তাদের ভুলে যায়নি। প্রথমে জামাতের সঙ্গ ত্যাগের কথা বললেও ঠিকই আসন ভাগাভাগিতে জামাতকে ২২টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। যে দলটির হাত এদেশের অসংখ্য শহীদের রক্তে রঞ্জিত তাদেরই  সঙ্গে হাত মিলিয়েছে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে যাওয়া সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের মত মানুষেরা। ঐক্যের নামে যেন তারা জামাতকে বাচানোর যুদ্ধে নেমেছেন। সেটাই যদি না হবে তাহলে কেন তারা বিএনপি জামাতের সঙ্গ ত্যাগ না করায় বিএনপিকেও ত্যাগ করলেন না? কেনই বা ঐক্যফ্রন্ট নামক এক ভণ্ড রাজনৈতিক মতাদর্শের আড়ালে, গণতন্ত্র বাচানোর কথা বলে জামাতকে বাচানোর ঠিকা দায়িত্ব নিলেন?

আজ যখন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলেন, ‘জামাতের সঙ্গে কিসের জোট? জামাতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তারা কীভাবে নির্বাচনে আপনাদের সঙ্গে?’ তখন কামাল হুংকার দিয়ে উঠলেন। বললেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না, প্রশ্নই ওঠে না। বেহুদা কথা। কত পয়সা পেয়েছো এই প্রশ্নগুলো করতে? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছো? নাম কি? চিনে রাখবো তোমাকে। পয়সা পেয়ে শহীদ মিনারকে অশ্রদ্ধা করো তোমরা। আশ্চর্য! শহীদদের কথা চিন্তা করো… শহীদদের কথা চিন্তা করো।‘

আরেকজন সাংবাদিক পাশ থেকে ‘শহীদদের সন্তানরা জামাতের সঙ্গে… ‘ বলতে বলতেই আরও ক্ষিপ্ত হয়ে কামাল বলেন, ‘চুপ করো, খামোশ। আশ্চর্য! তোমার নাম কি? কোন টিভি?‘

ড. কামাল যখন ওই টিভি সাংবাদিককে ধমকাচ্ছিলেন, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা করা শিখাচ্ছিলেন তখন কি উনার একবারও মনে হয়নি উনি ঐক্যফ্রন্ট গড়ে জামাতকে ২২টি আসনে নির্বাচনের সুযোগ দিয়ে শহীদদের অশ্রদ্ধা করছেন? মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মানিত করছেন? জামাতের সঙ্গ নিয়ে দেশের স্বাধীনতাকে অপমানিত করছেন? মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে যারা দেশ বাচাও আন্দোলনের নামে জামাতের মতো জঙ্গি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের রক্ষার আন্দোলন কি প্রহসন নয়?

বাংলা ইনসাইডার/এমআর 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭