ইনসাইড আর্টিকেল

যুদ্ধাপরাধী প্রশ্নে সাংবাদিকদের কেন খামোশ করবেন কামাল হোসেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/12/2018


Thumbnail

রেগে গিয়ে সাংবাদিকদের ‘খামোশ’ বলে ধমক দিয়েছেন শ্রদ্ধেয় ড. কামাল হোসেন। যাকে আমরা সংবিধান প্রণেতাদের প্রধান হিসেবে শ্রদ্ধা করি, যাকে আমরা একজন আর্ন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনবিদ হিসেবে সম্মান করি। তিনি কেন ক্ষুদ্ধ হলেন? কেন এমন অভিযোগ আনলেন যে একজন সাংবাদিক `টাকা খেয়ে` প্রশ্ন করেছে? শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে কি জামায়াত ইসলামি সম্পর্কে তার অবস্থান জানতে চাওয়া কোনো অপরাধ? দীর্ঘদিন জাতীয় রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই নিষ্ক্রীয়, নির্বাচনের দেড়মাস আগে জোট করে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের সুযোগ করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাদের সফল সংলাপের কৃত্বিত্ব নিলেন ,আর সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনেই ক্ষেপে গেলেন!

আচ্ছা সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনে তার জবাব দেয়া না দেয়া রাজনীতিকের সিদ্ধান্তের বিষয়। সাংবদিকের সকল প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি বাধ্য নন, কিন্তু তাই বলে কারো টাকা খেয়ে প্রশ্ন করছে একজন রিপোর্টার ,সেটা কিভাবে মাথায় এলো একজন প্রবীন আইনজীবীর,যিনি শুধু দেশে নয়,আর্ন্তজাতিক সুখ্যাতি পেয়েছেন নিজেন দক্ষতার কারনেই। নাকি বিষয়টা এমন যে, মনে মনে তিনি নিজেই বিব্রত আছেন যে , যে দলের সাথে ঐক্য করলেন সেই দল স্বাধীনতাবিরোধী দলের নেতাদের নিজের দলের নেতা হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে বসলো, আর অসহায় কামাল হোসেনকে তা হজম করতে হলো। এমনকি নিজের দল গরফোরামের প্রতিক ‘উদীয়মান সূর্য’ নিয়েও কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হবার সুযোগ পেলো না।

শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে, বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধে ,ভোটের ১৫ দিন আগে ,জামায়াত নেতাদের মনোনয়ন দেয়া ফ্রন্টের অভিভাবকের কাছে এর চেয়ে আর ভালো যৌক্তিক প্রশ্ন আর কি হতে পারে ? আগে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধিত দল ছিল, এবারের ভোটের আগে তাদের সেই নিবন্ধন আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ চারজনের ফাঁসি হয়েছে যুদ্ধাপরাধে দোষী স্যাবস্ত হওয়ায়। একজন আজীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়ে কারাগারে। সেই দলের নেতাদের ধানের শীষে মনোনয়ন কামাল হোসেন মেনে নিয়েছেন। ধানের শীষ এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ,যে ফ্রন্টের প্রচারনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতির পিতার সহকর্মী কামাল হোসেন। যিনি এখনো বিশ্বাস করেন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্দু শেখ মুজিব,নাকি ঐক্যফ্রন্ট করার পর সেই অবস্থানও বদলেছেন তিনি। এই প্রশ্ন করলে কি কামাল হোসেন , আমাকেও প্রশ্ন করবেন যে ‘কার কাছে টাকা খেয়ে এমন প্রশ্ন তুলছি ?’

কিন্তু ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে সাংবাদিকদের তোলা প্রশ্নের জবাবতো দিতে হবে কামাল হোসেনকে । আপনি বাহুত্তরের সংবিধান প্রণয়ন করেছেন , সেখানে তো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। তাহলে জামায়াতের নেতাদের রাজনীতি করার অধিকার আর তাদের প্রার্থী করছে যে জোট ,সেই জোটের নেতা হিসেবে আপনাকে তো এমর প্রশ্নের জবাব দিতেই হবে। রিপোর্টারের নাম পত্রিকা বা টেলিভিশনের নাম জেনে তাকে চিনে রাখতে চান কেন ,কেন ভবিষ্যতে দেখে নেবার জন্য " খামোশ " হুমকি কেন দিবেন একজন প্রবীণ রাজনীতিক । আর বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধের চেয়ে আর কোন যথার্থ জায়গা আছে যে সেখানে জামায়াতে ইসলামী নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না ? যে স্মৃতিসৌধে দাড়িয়ে শহীদদের সন্তানরা দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের ভোট না দেবার জন্য।স্বাধীনতাবিরোধীদের তারা দেখতে চান না কোনো রাজনৈতিক দলে।  সেখানেইতো সাংবাদিক জানতে চাইবে কামাল হোসেনের কাছে যে, জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে ।

জামায়াতে ইসলামীর যেসব নেতারা ধানের শীষের প্রতিক নিয়ে লড়ছেন তাদের জন্য কি ভোট চাইতে যাবেন কামাল হোসেন? জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণার একটি মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে। আমরা কি দেখবো যে সেই মামলায় তিনি আইনী লড়াইয়ে নামবেন জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে? প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন নাও দিতে পারেন কিন্তু সাংবাদিকদের খামোশ বলতে পারেন না। কামাল হোসেন মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানে ছিলেন। আর দেশের রনাঙ্গনে অনেক মুক্তিযোদ্ধা রাইফেল হাতে লড়েছেন আর সাংবাদিকতায় কলম চালিয়েছেন । সেই সাংবাদিকদের উত্তরসূরীদের থামিয়ে দিতে পারবেন না কেউই।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭