ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

দেশে দেশে কীভাবে নির্ধারিত হয় জাতীয় সঙ্গীত?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/12/2018


Thumbnail

পৃথিবীর সব স্বাধীন দেশেরই রয়েছে নিজ নিজ জাতীয় সঙ্গীত। কোনো দেশের জাতীয় সঙ্গীতে সে দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির কথা বলা হয়। কোনো জাতীয় সঙ্গীতে আবার দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়। এমন কিছু জাতীয় সঙ্গীতও আছে, যেখানে দেশের শাসকদের গুণগান ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। কিন্তু দেশভেদে কীভাবে নির্ধারিত হয় জাতীয় সঙ্গীত?

কিছু দেশ প্রচলিত কোনো দেশাত্ববোধক গান বা কবিতাকে নিজেদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বেছে নেয়। অনেক দেশে আবার পৃথকভাবে জাতীয় সঙ্গীত রচনা করা হয়। স্পেনে জাতীয় সঙ্গীত বেছে নেওয়ার জন্য গণভোটেরও আয়োজন করা হয়েছিল। এখানে পৃথিবীর কয়েকটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারনের পেছনের ইতিহাস তুলে ধরা হলোঃ

আফগান জাতীয় সঙ্গীত মিললি সুরোদ

মিললি সুরোদকে আফগানিস্তান তাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা করেছিল ২০০৬ সালে। এর আগে সেখানে অন্য একটি গান জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পেত। দেশটির সংবিধানের অনুসারে জাতীয় সঙ্গীতের ভাষা হতে হবে পশতু। সেখানে অবশ্যই `আল্লাহ্‌ মহান’ এই কথা থাকতে হবে। একইসঙ্গে আফগানিস্তানের সমস্ত উপজাতিদের উল্লেখ থাকতে হবে জাতীয় সঙ্গীতে। এই গানের কথা লিখেছেন আব্দুল বারী জাহানী এবং সুর দিয়েছেন বাবরাক ওয়াসসা।

আফগানিস্তান বেশ কয়েকবার তাদের জাতীয় সঙ্গীত বদল করেছে। গত শতাব্দীর শুরুর দিকে আফগানিস্তানে প্রথম জাতীয় সঙ্গীত ব্যবহার শুরু হয়। ওই সঙ্গীতের কোন শব্দ ছিল বলে জানা যায়নি। ১৯৩০ সালের দিকে সেখানে দ্বিতীয় জাতীয় সঙ্গীত গৃহীত হয়। ১৯৩০ সালে রচিত এই গানের কথা লেখেন মহম্মদ মুখতার। ১৯৭৩ সালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর প্রজাতন্ত্রী আফগানিস্তান তৃতীয় জাতীয় সঙ্গীত গ্রহণ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশটিতে আক্রমণ করার পর পরে ১৯৭৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সঙ্গীত গ্রহণ করে দেশটি। ওই গানের কথা লেখেন আফগানিস্তানের বামপন্থী কবি সুলেমান লায়েক । কমিউনিস্ট সরকার পরাজিত হলে ১৯৯২ সালে আবারো পরিবর্তন হয় আফগান জাতীয় সঙ্গীত। সেসময় ১৯১৯ সালে রচিত মুজাহেদীন যুদ্ধের একটি গানকে বেছে নিয়েছিল তারা। কিন্তু ১৯৯৯ তালিবান শাসকরা দেশটিতে জাতীয় সঙ্গীত নিষিদ্ধ করে। ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানই ছিল বিশ্বের একমাত্র দেশ যার কোন জাতীয় সঙ্গীত ছিল না। সরকার পরিবর্তনের পর ২০০৬ সালে মিললি সুরোদকে নতুন জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেওয়া হয়। এখনো সেটিই প্রচলিত আছে।

ভূটানের জাতীয় সঙ্গীত ড্রুকৎসেন্ধেন

ড্রুকৎসেন্ধেন অর্থ বজ্র ড্রাগনের রাজ্য। এই গানটির সুর করেছিলেন আকু তোংমি। তিনি ভারতে শিক্ষালাভ করেন। জানা যায়, জওহরলাল নেহ্‌রু ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভূটান পরিদর্শনে যান। নেহ্‌রুর আগমন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভূটানের একটি নিজস্ব গানের দরকার হয়েছিল। সেসময় ভুটানের রাজার অনুরোধে গানটি সুর করেন তোংমি। প্রকৃত গানটি ১২ লাইনের ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু রাজার একজন সেক্রেটারি ১৯৬৪ সালে একে সংক্ষিপ্ত করে ছয় লাইনের করেন।

ব্রাজিলীয় জাতীয় সঙ্গীত হিনো নাচিওনাল ব্রাসিলেইরো

ব্রাজিলীয় জাতীয় সঙ্গীতটি একটি প্রচলিত সুর থেকে এসেছে। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সিসকো মানুয়েল দা সিলভার ওই সুরটি সৃষ্টি করেন। ১৯০৯ সালে বেশকিছু পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে মূল সঙ্গীতটি লেখা হয়। ১৯২২ সালে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি এপিতাসিউ পেসোয়া একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে একে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাজিলের জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি দেন।

আর্জেন্টিনার জাতীয় সঙ্গীত হিমনো নাশিওনাল আরজেন্টিনো

আর্জেন্টিনার জাতীয় সঙ্গীতটির আসল নাম ছিল মারচা পাত্রিওতিকা। ধীরে ধীরে তা পরিবর্তন হয়ে ১৮৪৭ সালে হিমনো নাশিওনাল আরজেন্টিনো রূপ পায়। গানটি লিখেছেন রাজনীতিবিদ ভিসেন্তে লোপেজ ইয়্য প্লানেস। এর সুর করেছেন একজন স্পেনীয় সুরকার।

সৌদি আরবের জাতীয় সঙ্গীত আশ আল মালেক

আস-সালাম আল মালাকি বাংলা করলে দাঁড়ায় দীর্ঘজীবী হোক বাদশাহ। এই গানে স্রষ্টার প্রশংসা করা হয়েছে এবং প্রার্থনা করা হয়েছে যেন বাদশাহকে দীর্ঘ জীবন দেওয়া হয়। ১৯৫০ সালে এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করেন দেশটির তৎকালীন বাদশাহ।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭