ইনসাইড আর্টিকেল

‘তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/12/2018


Thumbnail

গীতবিতানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গেছেন এমনটাই যে ‘তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি’। পতাকা আমাদের জাতীয়তা আর স্বকীয়তাকে বহন করে। তাঁর কথার অর্থ হলো, পতাকা থাকলেই হলো না, তাকে সম্মান আর বহনের সামর্থ্য থাকতে হয় আমাদের। পতাকা মানে একটি দেশের পরিচয়। পুরো বিশ্বের কাছে নিজের দেশের আলাদা একটা পরিচয়। একটি স্বাধীন আর সার্বভৌম দেশে পতাকাই তার পরিচিতির মৌলিক স্তম্ভ। কিন্তু এই স্বাধীনতা আর পতাকাকে অর্জন করা তো খুব সহজ কাজ নয়। যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি, বহু ত্যাগ আর সময়ক্ষেপণ করে একটি দেশ বিশ্ব মানচিত্রে নিজেদের আলাদা আয়তন পায়। সেই স্বাধীন আয়তনের মধ্যে স্বাধীন পতাকা ওড়ে।

অন্য দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশ আর আমাদের পতাকা যেন আমাদের কাছে অনেক বেশি প্রিয়। কারণটা আমাদের সবারই জানা। বিশাল এক কালো থাবা আর নয়টা মাসের সংগ্রামী যুদ্ধের মধ্যে থেকে ছোট্ট একটা ভূখণ্ডকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। এজন্য রক্তের বন্যা বইয়ে জীবন দিতে হয়েছে, হারাতে হয়েছে অসংখ্য সাধারণ মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা আর দেশসেরা বুদ্ধিজীবীদের। আর পুরো দেশে যে তাণ্ডব, ধ্বংসযজ্ঞ চলেছিল, তা নিয়ে বলে শেষ করা সম্ভব নয়। এতোকিছুর বিনিময়ে যে দেশ আর পতাকা ছিনিয়ে আনতে হয়, তার প্রকৃত সম্মান আর ভালোবাসা আমরা দিতে জানি। কবিগুরুর কথার রেশ ধরেই বলতে হয়, পতাকা বহিবার শক্তি আমাদের মনেপ্রাণে আছে।

আমরা বিভিন্ন দেশের দিকে তাকালে দেখবো তাদের পতাকার বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো। তাদের ফ্যাশন আর নকশার অন্যতম আইকন হলো তাদের পতাকা। এই যেমন মাথার টুপি, হাতের ব্রেসলেট থেকে শুরু করে টি-শার্ট, প্যান্টে থাকে পতাকার নকশা। এমনকি অন্তর্বাসের নকশাতেও পতাকার ব্যবহার বাদ যায় না। কখনো জুতো-মোজাতেও পতাকা দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। এই পণ্যগুলো কালেভদ্রে কখনো এই দেশেও চোখে পড়েছে আমাদের।

কিন্তু যে পতাকা দেশের পরিচয় বহন করে, সেই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটিকে ফ্যাশনের এতো সহজ আইকন বানিয়ে ফেললে কীভাবে চলে? এটা কি খুব সহজ চর্চিত বিষয় তাহলে? আমাদের তা জানা নেই।

এবার আসি আমাদের দেশের প্রসঙ্গে। আগেই বলেছি আমরা দেশকে আর পতাকাকে সম্মান রেখে চলি। পতাকা টানানো আর ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়মও আমরা মেনে চলি। তবে আধুনিক সমাজে আমাদের লালসবুজ পতাকাও ফ্যাশনের বিষয় হয়ে উঠছে। বিশেষত বিশেষ দিবস যেমন স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, শোক দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবস আর বিজয় দিবসে আমাদের পোশাকে পতাকার নকশা আর রং খুব চোখে পড়ে এখন। তবে সেই ব্যবহারের লাগাম আমাদের মধ্যে রয়েছে।

আমাদের দেশে দিবসগুলোতে লালসবুজ পোশাক এখন প্রায় বাধ্যতামূলক। সেই সঙ্গে ফ্যাশনের অন্যতম একটি অনুসঙ্গ। এই দিবসগুলোতে বেরোলে দেখা যায় কোনো এক যুবকের বুকের মাঝে টি-শার্ট বা পাঞ্জাবিতে পতাকার মতোই লাল টুকটুকে সূর্য উঠে রয়েছে। বা কোনো নারীর শাড়ির আঁচলে বা ফতুয়াতেও একটি ছোট্ট পতাকা রয়েছে। ছোট শিশুরাও তাদের পোশাকে এখন পতাকাকে স্থান দিচ্ছে।

এ তো গেল শুধু পোশাকের বিষয়। কানের দুল, চুড়ি, ব্রেসলেট সবকিছুতেই পতাকার নকশা চলে এখন। এমনও হয়, পুরো পতাকাকে আমরা হাতে বা মাথায় পেঁচিয়ে বেঁধে রাখি। পতাকাকে শ্রদ্ধাভরেই ফ্যাশনের কাজে লাগাই আমরা। ফ্যাশনের নামে কোনো অপমান বা ঔদ্ধত্য আমরা দেখাই না সাধারণত।

জুতা-মোজায় পতাকার নকশা রাখা মানে পায়ের নিচে পতাকা রাখা। আমরা এই স্পর্ধা দেখাতে পারি না কারণ আমাদের দেশের মূল্য আমরা জানি। পতাকা থাকবে শ্রদ্ধা আর ফ্যাশনে, ফ্যাশনের নামে সবখানে এর ব্যবহার করা মানে একে একেবারে সাধারণের কাতারে নামিয়ে আনা।

বাংলাইনসাইডার/এসএইচ/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭