ইনসাইড আর্টিকেল

৪৮ এ বাংলাদেশ: সম্ভাবনা এবং ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/12/2018


Thumbnail

বাংলাদেশ ৪৭ পেরিয়ে ৪৮ বছরে পা দিলো আজ। নিঃসন্দেহে এটা অনেকটা সময়। আজ আমাদের বিজয় দিবস। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরেই প্রথমবারের মতো স্বাধীন দেশের মর্যাদা পাওয়া আর বিশ্ব মানচিত্রে ছোট্ট একটা স্থান করে নেওয়ার পথটা ছিল অনেক কঠিন। সেই অর্জনকে আমরা শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করি। শুভ জন্মদিন, বাংলাদেশ।

একটা মানুষ জন্ম থেকে গুটি গুটি পায়ে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বড় হতে থাকে, সেই মানুষটির বয়সও একসময় ৪৮ বছরে এসে ঠেকে। এই বয়সটি তার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই বয়সটি মানেই বার্ধক্যের দিকে এগোতে থাকা। এই বয়সটাতেই মানুষের জীবনে বিভিন্ন ঝুঁকি আসে। এই বয়সটাতে কখনো বিভ্রান্তি আসে, কখনো হতাশা আসে। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় ভুগতে হয়, আশপাশ থেকে বিভিন্ন চাপের মুখেও পড়তে হয়। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যা তো জেঁকে বসেই। তাই এই বয়সটা জরুরি, সঙ্গে অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। মোটামুটি ভঙ্গুর একটা সময় যেন।

এই ৪৮ বছরে অনেক দেশও বড় রকমের বিপর্যয় হতে পারে কিন্তু। এই রাষ্ট্রটা গঠিত হয়েছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। সেই স্বাধীনতার পর আজ নানা টানাপড়েন, প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে দেশটি এগিয়েছে। এই এতগুলো বছরে আমাদের যা কিছু অর্জন, গৌরব আর অহংকার- তা কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী নয়। তা যেকোনো সময়েই ভেঙে পড়তে পারে। আমরা অনেক স্বপ্ন পূরণ করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি, অর্থনৈতিক শক্তি পেয়েছি। বিশ্ব এজন্য বাংলাদেশের প্রশংসাও করছে। কিন্তু যা কিছু অর্জিত হয়েছে, সেগুলো ধরে রাখাই বাংলাদেশের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল এবং এখনো আছে।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তোলা। এখানে সব ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে- এটাই ছিল মূলচিন্তা। আমরা তেমন একটা জায়গা ইতিমধ্যে অর্জন করতে পেরেছি। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে গড়ে উঠেছে। ধর্মসহিষ্ণুতার দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।

আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশটিকে স্বাধীন করতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য গর্বের। মানবতাবিরোধী বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে এবং অনেক চিহ্নিত রাজাকারদের চূড়ান্ত সাজাও দেশের মাটিতে হয়েছে। কিন্তু এখনো তো সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। ক্ষোভের বিষয় হলো, সেই যুদ্ধাপরীধের বিষমাখা নিঃশ্বাস আর অভিশপ্ত পায়ের ধুলো এখনো আমাদের দেশের বাতাসে বয়ে বেড়াচ্ছে। তারা যেন এখনো ছোবল মারার অপেক্ষায় বসে আছে। এমনকি আসন্ন নির্বাচনেও অনেক যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের সন্তান বা নিকটজনেরাও সরাসরি অংশগ্রহণ করছে। আমাদের যে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, যুদ্ধাপরাধীমুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ- আমাদের সাধারণ নাগরিকদের ভুলেই দেশের এই চরম শত্রু যুদ্ধাপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আমাদের ভুল হচ্ছে একটাই- দেশের মাটিতে তাদের অবাধ আনাগোনাকে প্রশ্রয় দেওয়া। এর মাধ্যমেই দেশের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যেতেই পারে।

বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় একটি মাইলফলক স্থাপিত রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই অর্জনেও যদি সঠিক নেতৃত্ব না থাকে তাহলে সেই অর্জন ধূলিস্যাৎ হয়ে যেতে সময় লাগবে না।

এখানে উল্লেখ্য, আমরা ৭১ এ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হই। সেই পাকিস্তানকে এখন বিশ্বের একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা যায়। বাংলাদেশ এখন সব ধরনের সূচকে বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে রয়েছে। তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া সহজ কথা নয়। কিন্তু আমাদের এই উন্নয়নও যে একেবারে পাকাপোক্ত, সেটা আমরা এখনো বলতে পারিনা। যদি আমরা ভুল নেতৃত্ব দেই, ভুল অর্থনৈতিক পথে চলি তাহলে বলা যায় না, আমরা এই পাকিস্তানের পর্যায়ে চলে যেতেও পারি। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক রাষ্ট্র আছে যাদের অর্জনের তালিকা ভারি থাকলেও ছোট ছোট ভুলের কারণে এক লহমায় তাদের সেই উন্নত অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে, ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় নাম চলে গেছে। এরকম উদাহরণ অনেক আছে।

তাই আমাদের অর্থনৈতিক অর্জনকে ধরে রাখতে প্রয়োজন দক্ষ নেতৃত্ব। আমরা যে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তুলেছি, সেখানে কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তির থাবা আমরা মেনে নেবো কেন? এখনো অনেক সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। আমরা যদিও সেগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনার কাতারে ফেলি। কিন্তু যেকোনো সময়ে সাম্প্রদায়িক কোনো শক্তি আমাদের জাতিসত্ত্বার উপর আঘাত হানবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এরা আমাদের মৌলিক চিন্তাচেতনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। মনে রাখতে হবে যে এই শক্তিগুলো এখনো এইদেশে সক্রিয়। তাই আজ এই বিজয়ের ৪৮ বছরে আমাদের আরও সতর্কতা প্রয়োজন। মাথায় রাখতে হবে, যেকোনো অর্জনই অনেক কঠিন। সেই অর্জনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আরও বেশি কঠিন। আমরা যদি আমাদের মৌলিক বিষয়গুলোতে আপোষহীন থাকি, অর্জনগুলোকে নিয়ে দৃঢ়চিত্ত থাকি, অর্জনগুলো এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে দেশ ৪৮ বছরের হোক বা তার বেশি হোক, ভঙ্গুর অন্তত হবে না। আমাদের মনে গেঁথে নিতে হবে ‘দেশটা আমাদের সবার’। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে। সবাই একরকম হবে না অবশ্যই। কিন্তু দেশ, মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার ব্যাপারে সবার কোনো ভিন্ন মত গ্রহণযোগ্য নয়।

আজকের বিজয় দিবসে আমাদের এটাই স্বপ্ন যে, কোন কূটচাল, ষড়যন্ত্র, বিভেদবিভক্তির কাছে স্বাধীনতাকে বিসর্জন দেওয়া যাবেনা। অনেক চেষ্টার পরে বাংলাদেশ আজ একটা অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নের সুফল আমরা মাত্রই পেতে শুরু করেছি। এখানে এসে দেশটা অশুভভাবে ভেঙে পড়বে, সেই ঝুঁকি আমাদের কাম্য নয়। আমাদের প্রয়োজন ঐক্যের, একসঙ্গে কাজ করা।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭