ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রক্তের দামে কেনা যে দেশগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/12/2018


Thumbnail

পৃথিবীতে বর্তমানে দুইশ’র কাছাকাছি স্বাধীন দেশ রয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে খুব কম জাতিই আছে যারা নিজেদের বুকের রক্তের বিনিময়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। খুব কম দেশই রয়েছে যেখানে প্রতি ইঞ্চি মাটিতে মিশে আছে কোনো না কোনো শহীদের রক্ত, কোনো না কোনো নির্যাতিতের চোখের জল। বাঙালি নিঃসন্দেহে সেই গর্বিত জাতিদের একটি যারা কারো দয়া-দাক্ষিণ্যে স্বাধীনতা পায়নি, বরং সংগ্রাম করে শত্রুমুক্ত করেছে দেশকে। পৃথিবীতে এমন আরো কয়েকটি দেশ রয়েছে যারা রক্তের দামে স্বাধীনতা কিনেছে। এখানে সেরকম কয়েকটি দেশের কথাই তুলে ধরবো আজ আমাদের বিজয়ের দিনে:

ভিয়েতনাম

ভিয়েতনামের যুদ্ধের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। ১৯ শতকের শেষ দিকে ফ্রান্স ভিয়েতনাম আক্রমণ করে। ফরাসিরা দেশটিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে দেয় এবং অঞ্চলগুলিকে কম্বোডিয়া ও লাওসের সঙ্গে যুক্ত করে ফরাসি ইন্দোচীন গঠন করে। ফরাসিরা ভিয়েতনামের সম্পদ ব্যবহার করে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভিয়েতনামে উপনিবেশ বিরোধীরা সাম্যবাদী দলের নেতৃত্বে ফরাসিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ১৯৫৪ সালে দিয়েন বিয়েন ফু-তে ভিয়েতনামী সেনারা ফরাসিদের যুদ্ধে পরাজিত করে। এরপর ভিয়েতনামকে সাময়িকভাবে উত্তর ও দক্ষিণ দুইটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। উত্তর ভিয়েতনামে একটি সাম্যবাদী সরকার এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাম্যবাদ বিরোধীরা শাসন করা শুরু করে। পরবর্তী ২০ বছর ধরে উত্তর ভিয়েতনামের নেতৃত্বে ভিয়েতনাম একত্রীকরণের একটি আন্দোলন শুরু হয় এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা সরিয়ে নেয় এবং দুই বছর পরে দক্ষিণ ভিয়েতনাম সাম্যবাদীদের করায়ত্ত করে। ১৯৭৬ সালে দুই ভিয়েতনামকে একত্রিত করে একটি সাম্যবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। টানা ২১ বছর ধরে চলা যুদ্ধে পুরো দেশটাই ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। আর প্রাণ দিয়েছিল ২০ লাখেরও বেশি মানুষ।

আলজেরিয়া

১৯৬২ সালের জুলাই মাসে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আলজেরিয়া। ১৯৫৪ থেকে শুরু হয়ে টানা আট বছর স্থায়ী হয়েছিল ঐ যুদ্ধ। আলজেরিয়ার মুক্তিযুদ্ধ ছিল কোন ইউরোপীয় শক্তি ও তার উপনিবেশের মধ্যে সংঘটিত সবচেয়ে দীর্ঘতম গেরিলা যুদ্ধ। ফ্রোঁ দ্য লিবেরাসিওঁ নাসিওনাল বা আলজেরীয় জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট এই গেরিলা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়। যুদ্ধকালীন সময়ে ৯০ লাখ আলজেরীয় অধিবাসীর ৫ লাখ নিহত হয়।

তুরস্ক

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর তুরস্কের বিখ্যাত অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। খণ্ডবিখণ্ড হয়ে পড়ে তুরস্ক। খণ্ডিত তুরস্কের মূল ভূখণ্ডেই পরে গড়ে ওঠে আধুনিক তুরস্ক। মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের পর আধুনিক তুরস্কের আত্ম প্রকাশ ঘটে। ১৯২৩ সালে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক তুরস্ককে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। তুর্কিদের স্বাধীনতা যুদ্ধে গ্রীস ও ফ্রান্সসহ কয়েকটি পক্ষ জড়িত ছিল। ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ পর্যন্ত স্থায়ী এই যুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার তুর্কি নিহত হন। এছাড়া যুদ্ধের কারণে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন রোগে ভুগে মারা যায় আরও ২২ হাজার মানুষ। 

আয়ারল্যান্ড

আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯১৯ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১৯২১ সালের জুলাই পর্যন্ত চলেছিল। এটি ছিল মূলত আয়ারল্যান্ডে শাসনাধীন ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি (আইআরএ) পরিচালিত গেরিলা যুদ্ধ। দুই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে প্রায় দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধ আধুনিক পৃথিবীর প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ। ১৭৭৫ থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত চলেছিল আমেরিকানদের এই স্বাধীনতা সংগ্রাম। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে নিহত হন ২৫ হাজার মার্কিনি। এরমধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন ৮ হাজার।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭